স্টাফ রিপোর্টার ॥ ক্যান্সার প্রতিরোধে সম্মিলিতভাবে গণসচেতনতা জাগিয়ে তুলুন। নানা ধরনের ক্যান্সার নিয়ে শক্তিশালী গবেষণা কার্যক্রম চালাতে হবে। এমন আহ্বান জানানোর মধ্য দিয়ে রবিবার পালিত হলো বিশ্ব ক্যান্সার দিবস। ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ক্যান্সারকে সমাজদেহ থেকে সম্পূর্ণ নির্মূল করা সম্ভব নয়। কিন্তু রোগ প্রতিরোধ, সূচনায় রোগ নির্ণয় ও উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে ক্যান্সারের ক্রমবর্ধমান প্রকোপ বহুলাংশে কমানো সম্ভব। আমাদের অধিকাংশ মানুষের ক্যান্সারের প্রাথমিক প্রতিরোধ সম্পর্কে জ্ঞান ও সচেতনতা নেই। তাছাড়া সারাদেশে বিপুলসংখ্যক রোগীর সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে চিকিৎসা ব্যবস্থা খুবই অপ্রতুল। ক্যান্সার সম্বন্ধে সঠিক তথ্য পরিবেশনের মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করে তুলতে হবে। জনগণের মন থেকে ক্যান্সারভীতি দূর করতে হবে।
দিবসটি উপলক্ষে রবিবার বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠান নানা কর্মসূচী পালন করে। কর্মসূচীগুলোর মধ্যে ছিল র্যালি, লিফলেট বিতরণ, সেমিনার ইত্যাদি। রবিবার সকাল ন’টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়ের এ ব্লকের সামনে বটতলা থেকে বিশ^ ক্যান্সার দিবস উপলক্ষে অনকোলজি বিভাগের উদ্যোগে এক বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়। র্যালিটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন অংশ প্রদক্ষিণ করে ডি ব্লকে গিয়ে শেষ হয়। এর আগে দিবসটি উপলক্ষে বেলুন ও পায়রা উড়ানো হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ কামরুল হাসান খান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডাঃ মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ মোহাম্মদ আলী আসগর মোড়ল, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডাঃ এবিএম আব্দুল হান্নান, অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ সারওয়ার আলম, শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ চৌধুরী ইয়াকুব জামাল, পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ আব্দুল্লাহ আল হারুন, জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যান্সার স্ক্রীনিং ও প্রশিক্ষণের জন্য জাতীয় কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আশরাফুন্নেসা, অনকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ জিল্লুর রহমান ভূঁইয়া, হেমাটোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আব্দুল আজিজ, সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ মোঃ সালাহউদ্দীন শাহ প্রমুখ। এ সময় অধ্যাপক ডাঃ কামরুল হাসান খান বলেন, ক্যান্সারের প্রকোপ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে যা সত্যিই উদ্বেগজনক। ভেজাল খাবার, শস্য উৎপাদনে কীটনাশকের ব্যবহার, পরিবেশ দূষণ, ধূমপানসহ নানা কারণে মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। সকল ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধে জনসচেতনতা সৃষ্টির বিকল্প নেই। জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক মিডিয়া, অনলাইন সংবাদপত্রসহ গণমাধ্যমের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। যেকোনো ধরনের ক্যান্সার আগেভাগে চিহ্নিত হলে তা নিরাময়, নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ করা সম্ভব।
অন্য বক্তারা বলেন, সারাদেশে সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে বিপুলসংখ্যক রোগীর চিকিৎসা ব্যবস্থা খুবই অপ্রতুল। ব্যয়বহুল হওয়ায় চিকিৎসার অভাবে অনেক রোগী অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। শুধু তাই নয়, বাঁচানোর চেষ্টা করতে গিয়ে অনেক পরিবার আর্থিকভাবে নিঃস্ব হয়ে পড়ে। ক্যান্সার সম্বন্ধে সঠিক তথ্য পরিবেশনের মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করে তুলতে হবে। ব্যয়বহুল চিকিৎসার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তা কর্মচারীদের অসাধুতা সরকারী চিকিৎসাসেবায় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। দেশে সরকারী চিকিৎসাক্ষেত্রে অব্যবস্থাপনা এবং দারিদ্র্যের কারণে অনেক ক্যান্সার রোগী চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারে না। উন্নত বিশ্বে দুই-তৃতীয়াংশ শিশু ক্যান্সার রোগী ভাল হয়। কিন্তু চিকিৎসা খুব ব্যয়সাপেক্ষ। তাই আমাদের দেশে ক্যান্সার চিকিৎসায় সহজলভ্য করার জন্য যারা ওষুধ তৈরি করেন এবং এ সম্পর্কিত কাজের সঙ্গে জড়িত, তাদের প্রতি সরকারের নজর দিতে হবে।