মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর সাম্প্রতিক বর্বরতম নির্যাতন ও গণহত্যা নিয়ে চাঞ্চল্যকর ঘটনাবলীর কোন প্রমাণ সে দেশের সরকার গঠিত কমিশনের খুঁজে না পাওয়ার ঘটনা বিশ্বকে নতুন করে হতবাক দিয়েছে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা, বাংলাদেশ, বিবিসিসহ বিশ্ব গণমাধ্যমে প্রচারিত সে দেশের সেনাবাহিনী, পুলিশ, সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর যৌথ অভিযানের নামে রোমহর্ষক যেসব ঘটনা বিশ্ব প্রত্যক্ষ করেছে এর কোন কিছুরই সত্যতা পায়নি বলে দাবি করেছে সরকারী ওই তদন্ত কমিশন।
উল্লেখ্য, গত অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত রাখাইনে বর্বরতম নির্যাতনে শতাধিক রোহিঙ্গার প্রাণহানিসহ পাড়ার পর পাড়া জ্বালিয়ে দেয়া, অগণন রোহিঙ্গার দেশান্তরী হওয়া, অনাহারে অর্ধাহারে অমানবিক পরিবেশে বেঁচে থাকার দৃশ্য যখন বিশ্ব বিবেককে স্তম্ভিত করেছে তখন চাপের মুখে মিয়ানমার সরকার যে তদন্ত কমিশন করেছে তার প্রধান করা হয়েছে সে দেশের সেনাবাহিনীর সাবেক এক কর্মকর্তাকে, যাকে যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি কালো তালিকাভুক্ত করেছে। তার নেতৃত্বে গঠিত কমিশন প্রদত্ত রিপোর্টকে আন্তর্জাতিক হিউম্যান রাইট ওয়াচসহ (এইচআরডব্লিউ) দেশী-বিদেশী বিভিন্ন সংস্থা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সরকারী তল্পিবাহী ওই কমিশনের রিপোর্টকে প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, রোহিঙ্গাদের ওপর এমন নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে নিষ্ঠুর মিথ্যাচারের মাধ্যমে মানবতার প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করা হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে বিবিসি রাখাইনের ঘটনাবলী নিয়ে যে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করে চলেছে এবং এর পাশাপাশি বিশ্ব গণমাধ্যম অনুরূপ তথ্য প্রচার করে যাচ্ছে সবই যেন ভিত্তিহীন হয়ে গেল ওই কমিশনের দৃষ্টিতে। সঙ্গতকারণেই মগের মুল্লুকের দেশ নামে পরিচিত মিয়ানমারের ওপর বর্তমান বিশ্বের সভ্য সমাজের নতুন করে চিন্তা-ভাবনার জন্ম দিয়েছে। সংঘটিত ঘটনার জন্য যেমনি চমকে গিয়েছিল বিশ্ব, তেমনি কমিশনের মিথ্যাচারের রিপোর্টও নতুন করে আবার চমকে দিল।
সরকারী ওই কমিশনের রিপোর্টে মংডুতে রোহিঙ্গা নির্যাতন, গণহত্যা, জ্বালাও পোড়াও এবং ধর্ষণের কোন ঘটনা ঘটেনি বলে যতই বলা হোক না কেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকার মানুষ, স্বেচ্ছাসেবী রোহিঙ্গা ও মানবাধিকার সংগঠন এবং এনজিওসহ সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার পক্ষ থেকে এ ঘটনা নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের নিরপেক্ষ তদন্তের নতুন দাবি উঠেছে।
বাংলাদেশ ছাড়াও মিয়ানমারের পার্শ্ববর্তী দেশ বাংলাদেশ ছাড়াও মালয়েশিয়া, চীন ও থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমেও রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা নির্যাতনের সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ নিয়ে কোন মহলে কোন সন্দেহের অবকাশ না থাকলেও কমিশন সবই অস্বীকার করেছে। বর্বরতম নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে অগণন রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে দেশান্তরী হয়েছে। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। সীমান্তের ফাঁকফোকর দিয়ে যারা দেশের অভ্যন্তরে পৌঁছে গেছে মানবিক কারণে সরকার তাদের আশ্রয় দিয়েছে। এছাড়া সাগর ও নদীপথে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করে আরও শত শত রোহিঙ্গাকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এসব ঘটনা নিয়ে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিয়ানমার সরকার তদন্ত কমিশন করতে বাধ্য হয়। এনএলটি নেত্রী আউং সান সুচি অনেকটা চাপের মুখে পড়ে এ কমিশন গঠনের সবুজ সঙ্কেত দেন। কিন্তু ফল এলো উল্টো। সঙ্গতকারণে নির্যাতিত রোহিঙ্গারা যেমন হতভম্ভ তেমনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও বিস্মিত। জঘন্যতম গণহত্যা, বাড়িঘর জ্বালাও পোড়াও, গুম ও সংখ্যালঘুদের দেশান্তরী হওয়ার সুনির্দিষ্ট ঘটনা এড়িয়ে কমিশন বলেছে, তারা এর কোন প্রমাণ পায়নি। বিষয়টি বিস্ময়কর ঠেকেছে বিশ্বজুড়ে।
উল্লেখ্য, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডুর কাউয়ার বিলে তিনটি পুলিশ চৌকিতে গত ৯ অক্টোবর রাতে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় পুলিশের ৯ সদস্য প্রাণ হারায় এবং লুট হয় ৬৩ অস্ত্র ও বিপুল গোলাবারুদ। ওই ঘটনায় দায় স্বীকার করে একটি জঙ্গীগোষ্ঠী।
ঘটনার পর ১০ অক্টোবর থেকে অভিযানে নামে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি), সেনা ও সে দেশের পুলিশ বাহিনী। প্রথমে নামে পুলিশ ও বিজিপি। ১৭ অক্টোবর থেকে নামানো হয় সেনাবাহিনী। তারা নির্যাতন, গণগ্রেফতার, গুম, ধর্ষণ ও রোহিঙ্গাদের বাড়ি-ঘর জ্বালানো শুরু করে। নির্বিচার নির্যাতনে দুই শতাধিক নিরীহ রোহিঙ্গার প্রাণ হারানোর অভিযোগ উঠলেও মিয়ানমার সরকার কখনও তা স্বীকার করেনি, এখনও করছে না। শুধু তাই নয়, নিজেদের নিয়ন্ত্রিত তদন্ত কমিশন দিয়ে ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা চলছে। রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে ২২ গ্রামের সংখ্য বাড়িঘর। গুম ও নিখোঁজ হয়েছে পাঁচ শতাধিক রোহিঙ্গা। ধর্ষিত হয়েছে দুই শতাধিক নারী-কিশোরী। ভিটে-বাড়ি হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে এ পর্যন্ত পালিয়ে এসেছে প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গা। ১৯৯১ সালের শেষের দিকে দেশটির সরকারী বাহিনীর নির্যাতনের অভিযোগ তুলে এদেশে পালিয়ে এসে টেকনাফ ও উখিয়ার দুটি ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া ৩২ হাজার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের অপেক্ষায় আছে। ১৯৭৮ ও ১৯৯৪ সালেও একই অভিযোগে পালিয়ে আসা অন্তত ৫ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থেকে স্থায়ী বসতি গেড়েছে। অথচ মিয়ানমার সরকার মিথ্যাচার করেই চলছে। মিয়ানমার বলছে, মাত্র আড়াই হাজারের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে। তাদের রেকর্ডপত্রে এই সংখ্যাই রয়েছে।
রাখাইনে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ বাহিনীর নির্যাতনে বাংলাদেশ ছাড়াও মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, ভারত ও চীনে হাজার হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে বলে ইতোমধ্যেই বিশ্ব গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। এ অবস্থায় সে দেশের তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট শুধু রোহিঙ্গা সম্প্রদায় নয়, সর্বত্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে বাংলাদেশে মাত্র ২ হাজার ৪১৫ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে দাবি করে ওসব নাগরিককে ফেরত নেয়ার কথা জানিয়েছেন মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক কিয়াউ জায়া। গত পাঁচদিন আগে একটি বার্তা সংস্থাকে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই মহাপরিচালক জানান, তাদের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে মাত্র ২ হাজার ৪১৫ রোহিঙ্গা রয়েছে। তাদের ফিরিয়ে আনার একটি পরিকল্পনা মিয়ানমার সরকারের রয়েছে। বিভিন্ন সূত্রে বলা হচ্ছে, রাখাইন রাজ্যে (সাবেক আরাকান) যুগ যুগ ধরে বসবাসকারী সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের সেদেশ থেকে দেশান্তরী করতে অপকৌশল নিয়ে বার বার মিথ্যাচার করে চলছে মিয়ানমার। ইতোপূর্বে (২০০৫ সালে) যাচাই-বাছাই করে সাড়ে নয় হাজার শরণার্থীকে ফেরত নেয়ার যে পত্র প্রত্যাবাসন কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছিল- তা উড়িয়ে দিয়ে এখন মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়ে বলছে, মাত্র ২ হাজার ৪১৫ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আছে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করতে দেশটির সেনাবাহিনী কয়েক বছর ধরে নির্যাতন চালিয়ে থাকে। নির্যাতন সইতে না পেরে শত শত রোহিঙ্গা পরিবার অবৈধভাবে পালিয়ে এ দেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। ২ হাজার ৪১৫ রোহিঙ্গাকে ফেরত নেয়ার যৌথ স্বাক্ষরে চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল ২০১৪ সালে ঢাকায়। ওই বছরের ১ সেপ্টেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মোঃ শহিদুল হক ও মিয়ানমারের পক্ষে উপপররাষ্ট্র মন্ত্রী উ থান খিয়াউর নেতৃত্বে উভয় দেশের প্রতিনিধি দল দুই মাসের মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে ২ হাজার ৪১৫ শরণার্থী প্রত্যাবাসনের মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করার ঘোষণা দিয়েছিলেন ওই বৈঠকে দুই মাসের মধ্যে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা ছিল। কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয় এ বিষয়ে যাবতীয় তথ্যাদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই বৈঠকে উপস্থাপন করেছিল, যা পরবর্তীতে মিয়ানমার সরকারের কাছে পাঠানো হয়।
ইতোমধ্যে দুই বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু এসবের এখনও উত্তর আসেনি মিয়ানমার থেকে। ২ মাস সময়ের কথা দিয়ে ২ বছর পর্যন্ত কালক্ষেপণ করে চলেছে মিয়ানমার। কক্সবাজার অঞ্চলের জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, দুই হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে দুই বছর সময়ের প্রয়োজন হলে ৫ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে স্বদেশে ফেরত নিতে কত সময়ের প্রয়োজন হবে?
এদিকে, বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যদি বাংলাদেশে মাত্র ২ হাজার ৪১৫ রোহিঙ্গা থেকে থাকে তা হলে ২০০৫ সালে মিয়ানমার সরকারর পক্ষে সাড়ে নয় হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নেয়ার জন্য কেন সম্মতি প্রদান করা হয়েছিল। রোহিঙ্গা শরণার্থীরা মিয়ানমারের নাগরিক কিনা যাচাইয়ের পর মিয়ানমার ওই সময় সাড়ে নয় হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে রাজি হয়। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ওইসময় দাবি তুলেছিল ১৯৮২ সালে প্রণয়ন করা নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী যাদের বাবা-মা দুইজনই মিয়ানমারের নাগরিক ছিলেনÑ তাদেরই শুধু ফিরিয়ে নেয়া হবে। শরণার্থীদের বাবা-মা দু’জনই দেশটির নাগরিক ছিল বলেই সাড়ে নয় হাজার রোহিঙ্গার ছাড়পত্র পাঠানো হয় মিয়ানমার থেকে। আর এখন মিথ্যাচার করে বলছে, শুধু আড়াই হাজারের মতো দেশটির নাগরিক বাংলাদেশে আশ্রিত আছে। অথচ দেশটির সেনাবাহিনীর অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতে।
কক্সবাজার অঞ্চলের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বিভিন্ন সূত্রে জানানো হয়, ১৯৯১ সালের ডিসেম্বর থেকে ১৯৯২ সালের মার্চ পর্যন্ত এদেশে পালিয়ে আসা ২ লাখ ৫০ হাজার ৮৭৭ রোহিঙ্গাকে (বেসরকারী হিসেবে এ সংখ্যা দ্বিগুণ) শরণার্থী হিসেবে তালিকাভুক্ত করে সরকার। কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন পাহাড়ে ১৯ শরণার্থী ক্যাম্প স্থাপন করে আশ্রয় দেয় ওইসব রোহিঙ্গাকে। পরবর্তীতে দুই দেশের সরকার কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে শরণার্থীদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু করে। তখন ভালই চলছিল প্রত্যাবাসন কার্যক্রম। তবে পরিতাপের বিষয়, ঢালাওভাবে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা স্বদেশে ফিরে যাচ্ছে দেখে একাধিক এনজিও, উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠী ও আরএসও জঙ্গীরা প্রত্যাবাসনের বিরুদ্ধে তৎপর হয়ে উঠে। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যু দ-ে দ-িত মীর কাশেম আলী, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের মন্ত্রী যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামীসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কতিপয় নেতার হাত ধরে প্রত্যাবাসন বন্ধ করতে উঠে পড়ে লাগে। হঠাৎ প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। তখন মিয়ানমার সরকারের দেয়া তাদের নাগরিক হিসেবে আরও সাড়ে ৯ হাজার রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসন হতে দেয়নি এনজিও, জঙ্গী ও মৌলবাদী গোষ্ঠী।
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রতিনিধি দল আসছে ॥ বাংলাদেশে বৈধ ও অবৈধভাবে অবস্থানরত মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের অবস্থা সরজমিনে প্রত্যক্ষ করতে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত অফিসের একটি প্রতিনিধি দল এ মাসেই ঢাকায় আসছে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ কেউ আসতে চাইলে স্বাগত জানানো হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেছেন, মিয়ানারের সশস্ত্র বাহিনী ও সে দেশের মৌলবাদী গোষ্ঠী ধর্মীয় কারণেই রোহিঙ্গাদের নিশ্চিহ্ন করতে চাইছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের এদেশে আশ্রয় দিয়েছে। এর আগে গেল মাসে ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুদি টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। তিনি রোহিঙ্গাদের মানবেতর জীবনযাপন দেখে বিস্মিত হন। তবে এ নিয়ে কোন মন্তব্য করে যাননি। রোহিঙ্গাদের এ মানবেতর অবস্থার বিষয়ে সরব আসিয়ানের আরেক সদস্য দেশ মালয়েশিয়া। রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়া বার বার সরব ভূমিকা পালন করে আসছে। এ বিষয়ে আলোচনার জন্য সে দেশে ওআইসির জরুরী বৈঠকও ডাকার আহ্বান জানিয়েছে। আগামী ১৯ জানুয়ারি এ বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এতে বাংলাদেশও অংশ নেয়ার কথা রয়েছে।
মিয়ানমারে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পালিয়ে আসা নতুন কোন ঘটনা নয়। এটি দীর্ঘদিনের একটি সমস্যা। বাংলাদেশ এ বিষয়ে সক্রিয় থাকলেও মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটতে পারে এমন কোন তৎপরতা চালায়নি। তবে আন্তর্জাতিক মহলকে এ বিষয়ে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। উল্লেখ্য, মিয়ানমার সরকার সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের সে দেশের নাগরিক হিসেবে এখনও স্বীকার করে না। ফলে তাদের সবদিক থেকে সুবিধা বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে।