নিয়াজ আহমেদ লাবু ॥ আবারও খোদ রাজধানীতেই গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের এক কর্মকর্তা বিপুল পরিমাণ মাদকসহ ধরা পড়লেন। বর্তমানে তিন দিনের রিমান্ডে তাকে ডিবি অফিসে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। গুণধর এই পুলিশ কর্মকর্তার নাম কাজী বরকত উল্লাহ (৪০)। তিনি ডিবির কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের উপ-পরিদর্শক (এসআই)। গত ২ এপ্রিল রাতে লালবাগের নিজ বাসার সামনে মাদক কেনাবেচার সময় তাকে হাতেনাতে আটক করে ডিবি পশ্চিমের একটি টিম। এ সময় তার কাছ থেকে ১ হাজার ৬শ’ ইয়াবা ট্যাবলেট ও মাদক বিক্রির ১৬ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। একই সঙ্গে জড়িত এক নারীসহ দুই মাদক ব্যবসায়ীকেও গ্রেফতার করা হয়। এই মাদক ব্যবসায়ীর নাম সেতারা বেগম ও তার স্বামী আজিজুর রহমান।
ডিবি ডিসি (পশ্চিম) সাজ্জাদুর রহমান জনকণ্ঠকে জানান, গত শনিবার রাজধানীর লালবাগ রোডে লিটলবার্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের গেটের ভিতর থেকে এসআই বরকত উল্লাহ ও দুই মাদক ব্যবসায়ীকে ইয়াবা ট্যাবলেটসহ হাতেনাতে গ্রেফতার করে ডিবি পশ্চিমের এক চৌকস টিম। ঐ রাতেই লালবাগ থানায় মাদক আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় এসআই বরকত উল্লাহকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আজ বুধবার তাকে আদালতে পাঠিয়ে পুনরায় রিমান্ডের আবেদন করা হবে। ডিসি সাজ্জাদুর রহমান জানান, একজন পুলিশের জন্য পুরো পুলিশ বিভাগ দায় নিতে পারে না। অপরাধ করলে পুলিশও পার পায় না। গ্রেফতারের মাধ্যমে তার প্রমাণ মিলেছে। তিনি জানান, বরকত উল্লাহ পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের সদস্য। গ্রেফতারের পর তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, শনিবার রাতে লালবাগ থানাধীন ২৩৭ নম্বর লালবাগ রোডের (কাশ্মিরীটোলার) বাড়ির একটি ফ্ল্যাটে অভিযান চালায়। সেটি একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এসময় সেখান থেকে এসআই কাজী বরকত উল্লাহসহ ৩ জনকে আটক করা হয়। অপর দুইজন হলেন, আজিজুল ইসলাম ও তার স্ত্রী সেতারা বেগম ওরফে নুর বেগম। এদের বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার পতেঙ্গায়। এরপর ওই ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়ে ১৬ লাখ টাকা ও ১৬শ’ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত জসিম মিয়া নামে অপর এক মাদক ব্যবসায়ীকে গোয়েন্দা পুলিশ খুঁজছে। এ ব্যাপারে ঐ রাতেই গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল গফুর মিয়া বাদী হয়ে লালবাগ থানায় ০১/৫০ নম্বর মামলা দায়ের করেছেন। গ্রেফতারকৃত কাজী বরকত উল্লাহর বাবার নাম মৃত কাজী রেজাউল হক। খুলনা জেলার তেরখাদা উপজেলার নানিয়ারচরে তাদের বাড়ি। বরকতউল্লাহ রাজধানীর লালবাগ, কামরাঙ্গীরচর, নিউমার্কেট ও কলাবাগান থানায় সহকারী পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সম্প্রতি তাকে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমে বদলি করা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, রাজধানীর কেন্দ্রস্থল তিন থানার পুলিশ কর্মকর্তা পরিচয়ের সুবাদে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করতেন। বিশেষ করে লালবাগের শহীদনগর কমিশনার গলিতে প্রতিদিনই রাতে প্রকাশ্যে ইয়াবা নিয়ে পাইকারি দরে বিক্রি করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আর এই মাদক কেনাবেচার কারণে এসআই বরকত উল্লাহ নিজে ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক সেবনে আসক্ত হয়ে পড়েন। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিদিন তার মাদকের পেছনে প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হতো। তার বিরুদ্ধে নানা অপকর্মের অভিযোগের অন্ত ছিল না। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানান, এমনকি এসব থানার পুলিশ কর্মকর্তা হওয়ায় প্রায়ই রাতে অনেক নিরীহ মানুষের পকেটে ইয়াবা দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। অতিষ্ঠ হয়ে স্থানীয়রা তার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন। এতে এসআই বরকত উল্লাহকে থানায় ডেকে এনে কয়েক দফা এ ব্যাপারে সতর্ক করা হয়।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের মাদক সম্রাট আজিজুল ও তার স্ত্রী সেতারা দীর্ঘ দিন ধরে কক্সবাজার থেকে কোটি কোটি টাকার ইয়াবা রাজধানীতে এনে এসআই কাজী বরকত উল্লাহর মাধ্যমে রাজধানীতে বিক্রি করতেন। আর মাদক ব্যবসার টাকা দিয়ে তিনি একাধিক ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন। এ ব্যাপারে লালবাগ থানায় যোগাযোগ করা হলে থানার ওসি তদন্ত পরিতোষ চন্দ্র জনকণ্ঠকে জানান, মাদক সংক্রান্ত বিষয়ে ওই মামলায় তিনজনকে আসামি করা হয়েছে। মামলাটি ডিবি(পশ্চিম) তদন্ত করছে। আর কাজী বরকতের পরিচয় পুলিশ হিসেবে মামলায় উল্লেখ নেই। ওসি (তদন্ত) জানান, আসামিদের ধরেছে ডিবি পুলিশই। তবে মামলা হয়েছে আমার থানায়। আসামিদের ডিবি পুলিশের হেফাজতে নেয়া হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠিয়েছে ডিবি পুলিশই।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রায় ৯শ’ গ্রাম পরিমাণ সোনা ছিনতাইয়ের অভিযোগে বনানী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আশরাফুল ইসলাম এবং বিমানবাহিনীর চাকরিচ্যুত সদস্য (বর্তমানে পুলিশের সোর্স) আব্দুর রাজ্জাককে গ্রেফতার করেছে বংশাল থানা পুলিশ। ১১ মার্চ রাজধানীর খিলগাঁওয়ে কেবল কর্মচারী গুলির ঘটনায় অভিযুক্ত বংশাল থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) শামীম রেজাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকে রিমান্ডে নেয়া হয়। গত ৩ ফেব্রুয়ারি শাহ আলী থানার গুদারাঘাট এলাকায় পুলিশের হামলায় অগ্নিদগ্ধ হন চায়ের দোকানদার বাবুল মাতব্বর (৪৫)। পরের দিন দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে মারা যান তিনি। ওই ঘটনায় শাহ আলী থানার (ওসি) এ কে এম শাহীন ম-লসহ ৫ পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। নানা অপকর্মে জড়িয়ে রাজধানীর অনেক পুলিশ কর্মকর্তা বিভাগীয় মামলা খেয়েছে। অনেকে জেলও খেটেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: