স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ পৌর নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরুর আগেই কাটাখালী পৌরসভায় মেয়র পদে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে নগর ও জেলা বিএনপি নেতারা। নগর বিএনপি নেতাদের বাণিজ্যমুখী আচরণে চরম ক্ষুব্ধ জেলা নেতাকর্মীরাও। জানা গেছে, কাটাখালি পৌর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মাসুদ রানাকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হলেও বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন পৌরসভা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম। যার পক্ষে অবস্থান নিয়ে নিজেদের প্রার্থী হিসেবে দাবি করেছেন পৌরসভা ও জেলা বিএনপির নেতারা। তারা বলছেন, জামায়াতের প্রার্থীর সঙ্গে আঁতাত করে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ও মহানগর সভাপতি মিজানুর রহমান মিনু, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন এবং চারঘাটের সভাপতি আবু সাঈদ চাঁদ তদবির করে দলে নিষ্ক্রিয় কর্মী মাসুদ রানাকে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু তাদের প্রার্থী পৌরসভা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম। যিনি গত নির্বাচনে মাত্র ৫২ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন।
এদিকে, দলের মনোনীত প্রার্থী মাসুদ রানাকে ভোটের প্রচার চালাতে কাপাশিয়া এলাকায় ঢুকতে দেয়নি স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আবু সাঈদ চাঁদ তাকে নিয়ে পৌরসভার কাপাশিয়া এলাকায় প্রচারে গিয়েছিলেন। স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা তাদের বাধা দিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দেয়।
অপরদিকে, দলীয় প্রার্থী মাসুদ রানার ধানের শীষের পক্ষে কাজ করতে মিজানুর রহমান মিনুর আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছেন কাটাখালি বিএনপির নেতৃবৃন্দ। বুধবার বিকেলে মিজানুর রহমান মিনু তার বাসভবনে কাটাখালি পৌরসভা বিএনপির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময়ের আয়োজন করে। তবে কাটাখালি পৌরসভা জেলা বিএনপির ইউনিট হলেও সে বৈঠকে জেলা বিএনপির কোন নেতাকে ডাকা হয়নি। ওই বৈঠকে কাটাখালি পৌরসভা বিএনপির সহ-সভাপতি নিজাম উদ্দিন মেম্বার, মোনতাজ আলী ও রাজশাহী বারের সহ-সভাপতি মাহাবুবুল ইসলামসহ অর্ধশত নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বসেই মিজানুর রহমান মিনু দলীয় প্রার্থী মাসুদ রানার পক্ষে কাজ করার আহ্বান জানায়। এ সময় মিনুর আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে মাসুদ রানাকে দলের জন্য কোন ধরনের ত্যাগ ও যোগ্যতার বিবেচনায় দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে মিজানুর রহমান মিনুর কাছে পাল্টা জানতে চায় নেতাকর্মীরা। প্রার্থী কে সেটি না দেখে ধানের শীষের পক্ষে থাকার জন্য আবারও আহ্বান জানান মিনু। দলের সিনিয়র নেতারা তা প্রত্যাখ্যান করলে শফিকুল হক মিলন বলেন, দলের প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করলে দল থেকে পদত্যাগ করতে হবে। এ সময় সেখানে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। মিলনের সঙ্গে কাটাখালি বিএনপির নেতাদের উচ্চ বাক্য বিনিময়ও হয়। এক পর্যায়ে বৈঠক বর্জন করে কাটাখালি বিএনপির নেতারা বের হয়ে যান।
কাটাখালি পৌরসভা বিএনপির সহ-সভাপতি মোনতাজ আলী সরদার বলেন, গত নির্বাচনে বিএনপির সমর্থিত প্রার্থী হয়ে পৌরসভা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম সামান্য ভোটে পরাজিত হয়। এবার দলীয় নির্বাচনে মনোনয়ন সে পাবে বলে আমরা জানি। কিন্তু গত নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে জামায়াত প্রার্থীর পোস্টার লাগিয়েছে এমন এক ছেলেকে এবার দলীয় মনোনয়ন দিয়ে আমাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য মিজানুর রহমান মিনুর প্রস্তাব দু’একজন ছাড়া সবাই প্রত্যাখ্যান করেছে। সবাই অধ্যাপক সিরাজুলের পক্ষে থাকবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। জেলা বিএনপির দফতর সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন বলেন, কাটাখালি পৌরসভা বিএনপির নেতৃবৃন্দকে নিয়ে মহানগর কমিটির মতবিনিময় বিধি সম্মত হয়নি। আর দলের যুগ্ম-মহাসচিব হিসেবে মিজানুর রহমান মিনু যদি সে বৈঠক ডেকে থাকেন তবে জেলা নেতৃবৃন্দকেও সেখানে ডাকা উচিত ছিল। কিন্তু সেখানে জেলার কাউকে ডাকা হয়নি বলেন তিনি। শীর্ষ নেতাদের মনোনয়ন বাণিজ্যের কারণে জেলার কোন পৌরসভায় বিদ্রোহ দমন হচ্ছে না দাবি করে এ নেতা বলেন, এখন প্রার্থী নিয়ে প্রচার শুরুর আগেই জেলা ও নগর বিএনপির মধ্যে চরম দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাব নির্বাচনে প্রার্থীদের জন্য নেতিবাচক।