নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ২৪ আগস্ট ॥ পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় চিকিৎসা সেবার নামে বেসরকারী সংস্থা ‘স্বনির্ভর বাংলাদেশ হেল্থ কেয়ার লিমিটেড’ হেল্থ কার্ড বিক্রির মাধ্যমে সহস্রাধিক সাধারণ মানুষের কাছ থেকে দেড় লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এছাড়া মাঠ পর্যায়ে কর্মী ও ফিল্ড সুপারভাইজার পদে অর্ধশতাধিক কর্মীর কাছ থেকে জামানতের নাম করে আরও দুই লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেয়। এ ঘটনায় সংস্থার কলাপাড়া শাখা ব্যবস্থাপক গীতা নন্দীকে (৪৮) পুলিশ গ্রেফতার করেছে। সংস্থার জেনারেল ম্যানেজার মজিবুর রহমান, চেয়ারম্যান জসিম ভুইয়া ও স্থানীয় দুই দালালসহ সাত জনের নাম উল্লেখ করে কলাপাড়া থানায় রবিবার রাতে একটি মামলা হয়েছে।
জানা গেছে, জ¦র-সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া, আমাশয়, ডায়াবেটিকস, উচ্চ রক্তচাপ, গ্যাস্ট্রিক আালসার ও জন্মনিয়ন্ত্রণÑ এ আটটি রোগের চিকিৎসা সেবা ও বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়ে হেল্থ কার্ড বিক্রি শুরু করে। এপ্রিল মাস থেকে সংস্থাটি কলাপাড়ায় কাজ শুরু করে। প্রত্যেকটি ইউনিয়নে অন্তত তিন হাজার হেল্থ কার্ড বিক্রির মিশন নিয়ে অর্ধশতাধিক মাঠকর্মীসহ সুপারভাইজার নিয়োগ দেয়। ইতোমধ্যে সংস্থাটি ১০৭৬টি হেল্থ কার্ড বিক্রি করে। প্রত্যেক ব্যক্তির কাছ থেকে কার্ড প্রতি হাতিয়ে নেয়া হয় ১৫০ টাকা। এছাড়া ফিল্ড সুপারভাইজার এবং মাঠকর্মী পদে নিয়োগকৃত ৫৬ নারী-পুরুষ প্রত্যেকের কাছ থেকে ৪৫০০ থেকে আরও বেশি অংকের টাকা ফেরতযোগ্য জামানত নেয়। নেয়া হয় বীমা বাবদ মোটা অংকের টাকা।
বাড়িতে বসে টানা দশ বছরের চিকিৎসা সেবা পাওয়ার লোভনীয় প্রস্তাবে সহজ-সরল মানুষ আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। কিন্তু কর্মীরা বেতন না পাওয়ায় কোন্দল শুরু হয় সংগঠনের শাখা ব্যবস্থাপকের সঙ্গে। এমনকি স্থানীয় শাখা ব্যবস্থাপক গীতা নন্দী মাঠকর্মীদের চাকরি সরকারের রাজস্ব খাতের আওতায় যাবে এমন প্রচার চালায় বলে মাঠকর্মী সনিয়া আক্তারের অভিযোগ। লোভনীয় এমন সব অফার দিয়ে কাজ শুরু করলেও তাদের শেষ রক্ষা হয়নি। একই অভিযোগ চম্পাপুর ইউনিয়ন মাঠকর্মী রাশেদুল ইসলাম ও টিয়াখালীর মোঃ মিলনের। বর্তমানে এসব মাঠকর্মী পড়েছেন চরম বিপাকে। কারণ মামলা ও গ্রেফতারের খবরে প্রতারিত মানুষ তাদের টাকা ফেরত চাচ্ছেন মাঠ কর্মীদের কাছে।
সংস্থাটির বিক্রি করা হেল্থ কার্ডে প্রধান কার্যালয়ের ঠিকানা লেখা রয়েছে, হাউস নম্বর-৫২৩, থার্ড ফ্লোর, রোড নম্বর-১০, বারিধারা, ডিওএইচএস, ক্যান্টনমেন্ট, ঢাকা। গভঃ রেজিঃ নং সি ১১৯৭৪৯/১৪। কলাপাড়ার লতাচাপলী ইউনিয়নের আলীপুর বন্দরে একটি ভাড়া বাড়িতে অফিস চালু করে। উপজেলা পর্যায়ে নাছনাপাড়ায় একটি অফিস নেয়া হয়। দুটি অফিসেই গীতা নন্দী বসতেন। গ্রেফতারকৃত গীতা নন্দীর বাড়ি নোয়াখালী জেলার রামগঞ্জ পৌরসভায়। তিনি দাবি করেন স্বাস্থ্য সেবার জন্য তারা ইতোমধ্যে স্যালাইনসহ কিছু ওষুধ বিতরণ করেছেন। কলাপাড়া থানার ওসি মোহাঃ আজিজুর রহমান জানান, প্রথমে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গীতা নন্দীকে থানায় ডেকে আনা হয়। তাদের কাজকর্ম সম্পর্কে সঠিকভাবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য তার প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের হাজির হওয়ার জন্য বলা হয়। কিন্তু কোন কিছুই করতে সক্ষম হননি গীতা নন্দী। পরবর্তীতে মাঠ কর্মীরা মামলা করলে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি আরও দাবি করেন হেল্থ কার্ড বিক্রির মাধ্যমে কলাপাড়া থেকে অন্তত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার মিশন শুরু করেছিল এ সংস্থাটি। তার দৃষ্টিতে এটি একটি হায় হায় কোম্পানি। কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা (ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তা ডাঃ লোকমান হাকিম জানান, স্বনির্ভর বাংলাদেশ হেল্থ কেয়ার লিমিটেড নামের কোন সংস্থা স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে কাজ করে এমন খবর তার জানা নেই।