ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

রুপালি শহরের সোনালি ইতিহাস 

জাহিদ নয়ন 

প্রকাশিত: ০১:০২, ৫ এপ্রিল ২০২৪

রুপালি শহরের সোনালি ইতিহাস 

চাঁদপুর ইতিহাস

নদী ও জলের শহরখ্যাত ইলিশের রাজধানী চাঁদপুর ইতিহাস ও ঐতিহ্য সমৃদ্ধ একটি জেলা। প্রাচীনকাল থেকে অদ্যাবধি ইতিহাসের নানা গৌরবময় অধ্যায়ের স্মারক বহন করে চলেছে নদীবিধৌত এই জনপদ। সঠিক গবেষণা কিংবা উদ্যোগের অভাবে কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে অনেক গৌরবময় অধ্যায়ের স্মৃতি ও ঘটনাবলির ইতিহাস। চাঁদপুরের আঞ্চলিক ইতিহাস, ঐতিহ্য ও বরেণ্য ব্যক্তিদের সঙ্গে জড়িত নানা ঘটনা নিয়ে মুহাম্মদ ফরিদ হাসান বেশ কয়েকবছর যাবৎ কাজ করেছেন।

ইতোমধ্যে চাঁদপুর বিষয়ক গবেষণায় তিনি বেশকিছু সমৃদ্ধ গ্রন্থ রচনা করেছেন। বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত কয়েকটি গ্রন্থের আলোকেই এ বছর প্রকাশিত হয়েছে মুহাম্মদ ফরিদ হাসানের ‘চাঁদপুর সমগ্র’। ৩১২ পৃষ্ঠার এই বইটি প্রকাশ করেছে চাঁদপুর পৌরসভা। মূল্য ৭৫০ টাকা।
বইটি মূলত বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত মুহাম্মদ ফরিদ হাসানের কয়েকটি ইতিহাসভিত্তিক গবেষণা গ্রন্থের সংশোধিত ও পরিমার্জিত সংকলন। এ সংকলনে রবীন্দ্রনাথ ও চাঁদপুরের মানুষেরা, মহাত্মা গান্ধী ও চাঁদপুর, কাজী নজরুল ইসলাম ও চাঁদপুর, চাঁদপুরে বরেণ্যদের আগমন ও শতবর্ষে চা শ্রমিক আন্দোলন গ্রন্থসমূহ এক মলাটে বন্দি হয়েছে।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চাঁদপুরে একবার এলেও তাঁর সঙ্গে চাঁদপুরের অনেক গুণী মানুষের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ও যোগাযোগ ছিল। বিশেষত, চাঁদপুরের কালীমোহন ঘোষ ছিলেন কবির ঘনিষ্ঠ সহকর্মী। এছাড়াও শান্তিদেব ঘোষ, সাগরময় ঘোষ, মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, চিত্রনিভা চৌধুরী প্রমুখ তাঁর সান্নিধ্য পেয়েছেন।
রবীন্দ্রনাথ ও চাঁদপুরের মানুষেরা অংশে এছাড়াও অনেক অজানা তথ্য আলোচিত হয়েছে। 
বৃটিশ ভারতের স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ের নানা রাজনৈতিক ঘটনা ও প্রেক্ষাপটে মহাত্মা গান্ধী ছুটে বেড়িয়েছেন ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে।
গান্ধী চাঁদপুরে প্রথম আসেন ১৯২১ সালে। এছাড়া ১৯২৫, ১৯৪৬-৪৭ সালেও তিনি চাঁদপুরে এসেছিলেন। এখানে অবস্থানকালে বিভিন্ন সময়ে অনেক সভায় যোগদান করেন এবং বক্তব্য প্রদান করেন। 
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম চাঁদপুরে এসেছিলেন একাধিকবার। ‘কাজী নজরুল ইসলাম’ ও চাঁদপুর নামক গ্রন্থে এ বিষয়ে অনেক চমকপ্রদ ও অজানা ঘটনার সন্ধান পাবেন পাঠক? 
‘গেটওয়ে অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়া’ নামে পরিচিত চাঁদপুর শহরে বিভিন্ন সময়ে অনেক বরেণ্য ব্যক্তিদের আগমন ঘটেছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মহাত্মা গান্ধী, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, কাজী নজরুল ইসলাম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনসহ আরো বেশকিছু গুণী মানুষের পদচারণ ঘটেছে এখানে। তাঁদের আগমন ও তদসংশ্লিষ্ট অজানা অনেক ঘটনার বিবরণ পাওয়া যায় ‘চাঁদপুরে বরেণ্যদের আগমন’ গ্রন্থে। 
‘চাঁদপুর সমগ্র’ গ্রন্থের সর্বশেষ অংশে এসেছে চা শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাস ও তার সঙ্গে জড়িত চাঁদপুর স্টেশনে ঘটে যাওয়া এক মর্মান্তিক ঘটনার বিবরণ। 
ইতিহাসভিত্তিক গ্রন্থ সম্পাদনা ও গবেষণার জন্য সঠিক তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যথেষ্ট শ্রমসাধ্য কাজ। এসব গ্রন্থ রচনার জন্য গবেষক মুহাম্মদ ফরিদ হাসান ঘুরে বেরিয়েছেন বাংলাদেশ ও ভারতের নানা জায়গায়। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইতিহাস সংশ্লিষ্ট অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের। এছাড়া লেখকের বেশকিছু গ্রন্থে ভূমিকা লিখেছেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, ড. রফিকুল ইসলাম, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, সন্জীদা খাতুন ও ডা. দীপু মনি। উল্লেখিত ব্যক্তিবর্গের সান্নিধ্য লেখকের অনুপ্রেরণা ও প্রাপ্তির খাতা আরো রাঙিয়ে তোলে নিঃসন্দেহে।
চাঁদপুরের ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে ইতোপূর্বে সামান্য কিছু বই রচিত হলেও তথ্য উপযোগিতায় সেগুলো ইতিহাসের পরিধির তুলনায় বেশ অপ্রতুল ছিল । সাম্প্রতিক মুহাম্মদ ফরিদ হাসানের গ্রন্থসমূহ চমকপ্রদ তথ্য ও অজানা ইতিহাসের নানা অধ্যায় নিয়ে পাঠকের সামনে ধরা দিয়েছে, যা সর্বমহলে বেশ আলোচিত ও প্রশংসিত হয়েছে। প্রকাশিত গবেষণা গ্রন্থসমূহ এক মলাটে আকর্ষণীয় ও সহজলভ্য করে তুলতেই মূলত চাঁদপুর সমগ্র বইটির জন্ম।

×