ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

সিলভিয়া প্লাথের কবিতা ‘বাবা’

অনুবাদ ও ভূমিকা : তূয়া নূর

প্রকাশিত: ০১:০০, ৫ এপ্রিল ২০২৪

সিলভিয়া প্লাথের কবিতা ‘বাবা’

সিলভিয়া প্লাথে

বাবা সিলভিয়া প্লাথের অন্যতম পাঠকপ্রিয় কবিতা। বাবা কবিতাটা তিনি লিখেন ১৯৬২ সালের বারোই অক্টোবর, তার মৃত্যুর চার মাস আগে আর স্বামী কবি টেড হিউজের সঙ্গে বিচ্ছেদের দুই মাস পর। এই সময়ে মার্কিন কবিরা গভীরভাবে ব্যক্তিগত বা মানসিক সমস্যাগুলো তাদের লেখায় তুলে আনতে শুরু করেন। সমসাময়িক কবি অ্যান সেক্সটন তার মা মারা গেলে কবিতা লিখলেন ‘গু ভৎরবহফ, সু ভৎরবহফ’। এই কবিতা তাকে ‘বাবা’ কবিতা লেখার প্রেরণা দেয়। কবিতাটা থেকে তার জীবনটাকে আলাদা করা যায় না।

তার বাবা এসেছিলেন জার্মান থেকে। মায়ের জন্ম বোস্টনে। বাবা অটো প্লাথ মারা যান যখন সিলভিয়ার বয়স আট। বাবার কঠোরতা ও কর্তৃত্ববাদী এবং মৃত্যু কবিতার ভিত্তি। এক জায়গায় তিনি বাবার বর্ণনা দিয়েছেন নিখুঁতভাবে। যেমন ব্লাকবোর্ডের সামনে দাঁড়ানো অটো প্লাথের সাদাকালো ছবি আছে, তার থুতনিতে ভাঁজ আছে। মা অরেলিয়া প্লাথ ও স্বামী টেড এসেছেন রূপক হয়ে।

বাবার মডেল হয়ে এসেছে স্বামী হিটলারের (গবরহশধসঢ়ভ)  চেহারা নিয়ে। বাবার অকাল মৃত্যুর জন্য মাকে দায়ী করেছেন। মায়ের রূপক চিত্র হলো ভাম্পায়ার। সিলভিয়া নিজেকে অত্যাচারিত, নিগৃহীতদের একজন হয়ে উপস্থাপন করেছেন। তার প্রতিবাদ সময় ও কালভেদে সব অত্যাচারী ও স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে। নিজেকে গ্যাস চেম্বারে উৎসর্গ করে নাৎসি নির্যাতনের রূপক হয়ে সমাজটাকে শাসিয়ে গেছেন।

বাবা

আর করবে না, খবরদার আর এরকম করবে না তুমি
একবারো না, কালো জুতার ভেতরে
আমি পায়ের মতো বেঁচে আছি তিরিশটা বছর,
হতদরিদ্র এবং ফ্যাকাসে হয়ে
কোনভাবে সাহস করেছি নিশ্বাস নিতে কিংবা হাঁচি দিতে।

বাবা, তোমাকে খুন করতে চাই।
আমার সময় হবার আগেই মারা গেলে তুমি
মার্বেল পাথরের মতো ভারী, চামড়ার ব্যাগে ভরা শরীর,
ভূতুরে মূর্তির ধূসর পায়ের আঙুল
ফ্রিসকো সীলের মতো বড়

একটা মাথা অদ্ভুত আটলান্টিকে
যেখানে সে ঢেলে দেয় শিমসবুজ সৌন্দর্যময় নেসেট উপকূলের নীলে।
তোমার সুস্থতা প্রার্থনা করতাম।
আহা, তুমি।

জার্মান ভাষ্যমতে, পোলিশ শহরে
যুদ্ধের রোলার মেশিন দিয়ে কেঁচে সমতল করা হয়েছে

যুদ্ধ, শুধু যুদ্ধ।
তবে শহরের নামটা পরিচিত
আমার পোলিশ বন্ধু বলেছে এরকম নামে শহর আছে এক থেকে দুই ডজন।
সুতরাং আমি কখনই বলতে পারবো না 
কোথায় তুমি রেখেছিলে পা, কোথায় ছিলো তোমার শেকড়
তোমার সাথে আমার কখনো কথা বলা হয়ে উঠেনি।
জিভটা আমার চোয়ালের ভেতর আটকে যেতো।

এটা একটা কাঁটাতারের ফাঁদে আটকে গেছে।
আমি, আমি, আমি, আমি
আমি একদমই কথা বলতে পারতাম না।
মনে গেঁথে গিয়েছিলো প্রত্যেক জার্মানই তুমি।
আর ভাষা অশ্লীল

একটা যন্ত্র, একটা যন্ত্র
আমাকে ইহুদির মতো ছুঁড়ে ফেলছে
একজন ইহুদিকে ছুঁড়ে দেয় দেচাও, আউশভিৎস ও বেলচেনের নির্যাতনের ঘাঁটিতে।
আমি ইহুদির মত কথা বলতে শুরু করলাম।
ভাবলাম, আমি ভাল করতাম ইহুদি হয়ে।

টাইরলের তুষার, ভিয়েনার স্বচ্ছ বিয়ার
খুব খাঁটি বা সত্য নয়।
আমার যাযাবর পূর্বসূরি এবং আমার দুর্বিপাকের ভাগ্যের সাথে
আমার ভাগ্য গণনার তাসের প্যাকেট
এবং ভাগ্য গণনার তাসের প্যাকেট
আমি হয়তো একটু হলেও ইহুদি।

আমি সবসময় তোমাকে ভয় পাই,
তোমার সাথে বিমানবাহিনী, তোমার রাগের গড়গড় শব্দ,
আর তোমার ছেঁটে রাখা গোঁফ
আর তোমার আর্য চোখ, উজ্জ্বল নীল।
সাঁজোয়া যানের চালক, সাঁজোয়া যানের চালক, সেই তুমি

ভগবান নয়, সৌভাগ্যের চিহ্ন স্বস্তিকা
এতো কালো যে কোন আকাশ তা ভেদ করতে পারে না।
প্রত্যেক নারী ফ্যাসিস্টকে ভালোবাসে,
মুখে বুট-জুতার আঘাত, পাশবিক
পাশবিক হৃদয় তোমার মতো পাশবিক মানুষের।

তুমি ব্ল্যাকবোর্ডের সামনে দাঁড়ানো, বাবা,
এই ছবিতে আমি তোমাকে দেখছি,
তোমার তোমার পায়ের পরিবর্তে থুতনিতে চেরা দাগ
তবে তার জন্য কম শয়তানও নও, কোন ভাবে
কম নও কালো মানুষটার চেয়ে

যে কামড়ে আমার চমৎকার লাল হৃৎপি- দ্বিখ-িত করে দিয়েছো
তোমাকে কবর দিয়েছিলো তারা যখন আমার দশ বছর বয়স।
বিশ বছর বয়সে আমি মরার চেষ্টা করেছি
এবং বার বার ফিরে পেতে তোমার কাছে এসেছি।
আমি ভেবেছিলাম এমনকি হাড়-কঙ্কাল দিয়েও আমার কাজ সারবে।

তারা আমাকে বস্তা থেকে টেনে বের করে আনে
এক সাথে আটকে রাখে আঠা দিয়ে।
তারপর আমি জানলাম কি করতে হবে আমার।
একটা মূর্তি বানিয়েছি তোমার,
একজন মানুষ কালো অবগুণ্ঠনে হিটলারের মতো চেহারা।

এবং আলনা এবং স্ক্রুর মাঝে একটা প্রেম।
আমি বলেছিলাম আমি ভালবাসি, আমি ভালবাসি।
তাই বাবা, তোমার সাথে লেনদেন চূড়ান্ত ভাবে শেষ।
কালো টেলিফোনের গোড়ার তার খুলে রাখা,
কথাগুলো হামাগুড়ি দিয়েও আসতে পারবে না।

আমাকে যদি এক মানুষকে খুন করতে হয়?
আমি খুন করবো একজনের বদলে দু’জনকেÑ
ভ্যাম্পায়ার যে বলেছিল সেই হলে তুমি
পান করেছো আমার রক্ত বছর ধরে,
সাত বছর ধরে, যদি তুমি জানতে চাও।
বাবা, তুমি এখন শুয়ে পড়তে পারো।

তোমার স্থূল ও কালো হৃৎপি-ে খোঁটা পোঁতা
আর গায়ের মানুষেরা তোমাকে কখনোই পছন্দ করেনি।
তারা নাচছে তোমার ওপর আর পিষ্ট করছে পায়ে। 
সব সময় জানত তারা এই সেই তুমি।
বাবা, বাবা, তুমি বেজন্মা, 
তোমার সাথে আমার সব লেনদেন শেষ।

×