ন্যুরেমবার্গে ইতিহাসের বৃহত্তম হত্যাকা-ের বিচারে জয়ী হয়েছিলেন যে প্রসিকিউটর তিনি একটি শান্তিময় বিশ্ব দেখার জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন আজও। নুরেমবার্গ প্রসিকিউটরদের মধ্যে বেঁচে আছেন একমাত্র তিনিই। ’৯৬ বছর বয়স্ক এই আইনজীবী বেন ফেরেঞ্জ তার প্রাচীন শুকনো গলাটা ভেজানোর জন্য মুখে কাশি উপশমের একটি লজেন্স পুরে দিয়ে বললেন, আমি জন্মেছি কার্পেসিয়ান পাহাড়ী এলাকায় ট্রান্সসিলভিয়ার এক ছোট্ট গ্রামে। অবসরকাল কাটানোর জন্য একটি মাঝারি ধরনের পরিমিত বাড়ির বৈঠকখানায় বসে অতীত দিনের স্মৃতিচারণ করছিলেন তিনি। তিনি বলেন, আমি যে ঘরে জন্মেছি তা ছিল ছোট্ট একটি কুঁড়েঘর। যেখানে অবিরাম জলের ব্যবস্থা ছিল না, ছিল না বিদ্যুত। তিনি পরিহাস করে বললেন, এমনকি একটি টেলিভিশনও ছিল না। তার স্মরণশক্তি দেখে বিস্ময় জাগে। অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় আগের বিভিন্ন ঘটনায় জড়িত অনেক নাম ও ঘটনার তারিখ জমা রয়েছে তার স্মৃতির ভা-ারে। তিনি দৈহিক গঠনে ক্ষুদ্র একজন মানুষ। মাত্র ৫ ফুটের বেশি দীর্ঘ হবেন না কিন্তু তিনি একজন বিশাল আইনজীবী। ন্যুরেমবার্গ বিচারের একমাত্র বেঁচে থাকা প্রসিকিউটর এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনে বিজয় মুকুটের অধিকারী। তিনি বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় মার্কিন হলোকাস্ট মেমোরিয়াল মিউজিয়ামের জন্য দান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বেশ কয়েক লাখ ডলার। লাখ লাখ মানুষ হত্যায় নেতৃত্ব দিয়েছেন যে নাৎসি কর্মকর্তারা, তাদের বিচারের জন্য যুদ্ধোত্তর নুরেমবার্গ ট্রায়ালের সহকর্মীদের দৃঢ়প্রত্যয়ী করে তুলেছিলেন বেন ফেরেঞ্জ। তারা বলেছেন, চমৎকার বেন, আপনি প্রধান প্রসিকিউটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করুন। এটা ছিল তার পরিচালনায় প্রথম বিচার অনুষ্ঠান। তিনি যথাযথভাবে একটি সাক্ষ্যই উপস্থাপন করেছিলেন, যেখানে প্রত্যায়নের উল্লেখ রয়েছে ইহুদি, জিপসি ও অন্য বেসামরিক লোকদের হত্যার ঘটনা। ফ্রেঞ্জ করতালির সঙ্গে বলেন, তারা অত্যন্ত নিশ্চিত ছিলেন যে, তারা জয়ী হতে যাচ্ছেন। বিচার দুই দিন পর বিরতি ঘোষণা করা হয়।
সকল আসামিই বিচারে দোষীসাব্যস্ত হয়েছেন। তিনি বলেন, তিনি কি নিরুৎসাহিত হয়েছিলেন। তিনিই তার জবাবে বলেন, আমি সে ধরনের লোকই নই। ফেরেঞ্জ নির্ভয়। যদিও পরে আমার মাথা কেমন যেন করছিল। জীবনে কখনও এমন মাথা ব্যথা হয়নি আমার। তা ছিল এক প্রচ- উত্তেজনা।
বিবাদী ও প্রসিকিউটরদের সংখ্যার তুলনায় আদালত কমিটি ছিল সীমিত পরিসরের। ফেরেঞ্জ বলেন, অপরাধ সঙ্ঘটনের জন্য দায়ী ছিলেন কয়েক শ’ লোক। কতজনকে বিচারের অধীন নিয়ে আসা হয়েছিল? প্রায়োগিক দিক থেকে কাউকেই নয়। বিশ্বযুদ্ধে যে হাজার হাজার লোক আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন তাদের ক্ষতিপূরণের জন্য এ বিচারের পর লড়াই করেছেন ফেরেঞ্জ এবং যুক্তি তুলে ধরেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গঠনের জন্য, যা বাস্তবে রূপ নিয়েছে হেগে ২০০২ সালে। ক্ষতির যারা শিকার হয়েছেন তাদের সহায়তার জন্যই তিনি হলোকাস্ট মিউজিয়ামের জন্য দান করবেন দশ লাখ ডলার এবং বছরান্তে তা ১ কোটি ডলার পর্যন্ত নবায়নযোগ্য।
কোথা থেকে তিনি এ অর্থ পাবেন? তার বেতন ও যুদ্ধাপরাধ বিচারের বাইরে বিভিন্ন মামলা থেকে অর্জিত সঞ্চয় থেকে তিনি এ অর্থের যোগান দেবেন।
নিউইয়র্কের বাসিন্দা ফেরেঞ্জ তার জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন এ শহরেই। তার আরও একটি বাড়ি রয়েছে নিউ রশেলেতে। এখানেই তিনি তার চার সন্তানকে বড় করেছেন। সন্তানদের অবসর দেয়ার জন্য তিনি বেঁচে আছেন বেশ দীর্ঘ সময়জুড়ে। তিনি শেষ গ্রীস্মের উত্তাপ ও আর্দ্রতা সহ্য করেও এখন বাস করছেন নিউ রশেলেতে। কারণ এখানে বাস করছেন তিনি তার ৭০ বছর বয়স্ক স্ত্রী গার্টুডের সঙ্গে। তার স্বাস্থ্য ভগ্ন। তার স্ত্রীর সমস্যা? তিনি বয়সের ভারে আক্রান্ত। - ইয়াহু নিউজ