ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

ঐতিহ্যের আলিঙ্গনে বর্ণিল শিল্প বাজারের সমাপ্তি

সংস্কৃতি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০০:০৯, ৪ মার্চ ২০২৪

ঐতিহ্যের আলিঙ্গনে বর্ণিল শিল্প বাজারের সমাপ্তি

শল্পকলার উন্মুক্ত আঙিনায় শিল্প বাজারের স্টল থেকে পছন্দের পণ্য সংগ্রহ করছেন দর্শনার্থীরা

ভাবনাটি অভিনব। হাট-বাজারের নানা পণ্যের পরিবর্তে পুরো মাঠজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে শিল্পাশ্রিত পণ্যসম্ভার। বৈচিত্র্যের অনুসন্ধানী সেসব শিল্পপণ্য ঠাঁই পেয়েছে ছোট-বড় নানা স্টলে। সেই সুবাদে বিপণি বিতানগুলোয় দেখা মিলেছে ইউনেস্কো কর্তৃক অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের  স্বীকৃতিপ্রাপ্ত রিক্সাচিত্র। এক সময়ের বাংলার অহংকার ঐতিহ্যবাহী মসলিন কাপড়ও দেখার সুযোগ করে দিয়েছে এই শিল্প বাজার।

রাজা-বাদশাদের ব্যবহৃত সূক্ষাতিসূক্ষ্ম বুননে গড়া আভিজাত্যের প্রতীকী সে পোশাকের দুর্লভ কাপড়টি অনেকেই দেখেছেন আগ্রহভরে। প্রদর্শিত হয়েছে সূক্ষ্ম কারুকাজের ৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে মসলিন কাপড়টি। শুধু কি তাই! নানা মাধ্যমের মাধ্যমের এমন বিলুপ্ত পণ্যের সঙ্গে শিল্পরসিকদের নজর কেড়েছে বাহারি অবয়ব ও গড়নের মৃৎশিল্প।

রকমারি জামদানি শাড়ির দোকানগুলো ঘিরে ছিল বাঙালিয়ানা সাজে আকৃষ্ট নারীকুলের কৌতূহল। সে কৌতূহল থেকে অনেকেই সংগ্রহ করেছেন পছন্দের শাড়িটি। কেউ বা গৃহসজ্জার জন্য খরিদ করেছেন শতরঞ্জি। শিল্পের এই বাজারে ঘুরতে ঘুরতে শৈশবের স্মৃতি ফিরে পেতে কেউ বা চোখ রেখেছেন বায়োস্কোপে। সমতলের মানুষদের অনেকেই খরিদ করেছেন ভিন্নধর্মী নকশার পাহাড়ি পোশাক থেকে গয়না। সেগুন বাগিচার শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত আঙিনায় বসেছিল এই আর্ট মার্কেট।

অন্যদিকে একাডেমির চিত্রশালা প্লাজায় প্রদর্শিত হয়েছে দেশের খ্যাতিমান থেকে নবীন-প্রবীণ শিল্পী চিত্রকর্ম থেকে ভাস্কর্য। সেখানেও দেখার পাশাপাশি শিল্পকর্ম সংগ্রহ করেছেন শিল্পানুরাগীরা। এভাবেই শিল্পের বর্ণিলতায় সেজেছিল আর্ট মার্কেট হিসেবে অভিহিত চারুশিল্পী ও উদ্যোক্তাদের সম্মিলিত বাজারটি।  শিল্পপণ্য  প্রদর্শন ও কেনা-বেচার সমান্তরালে পেশাভিত্তিক শিল্পচর্চায় উদ্ধুদ্ধ করতে এবং নতুন প্রজন্মের কাছে  দেশের  লোকসাংস্কৃতির ঐতিহ্য মেলে ধরতে এ আয়োজন করে  বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। 
১৯ ফেব্রুয়ারি সূচনা হওয়া ঐতিহ্যের আলিঙ্গনে বর্ণিল এ আর্ট মার্কেটের শেষ দিন ছিল রবিবার। নিত্যদিনের মতো এদিনও শিল্প বাজারটি ঘিরে ছিল ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের সমাগম। সমাপনী দিনের সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় শ্রোতার হৃদয় রাঙিয়েছে জনপ্রিয় ব্যান্ডদল ফিডব্যাক। 
দেশের নানা প্রান্তের শিল্পীরা সমবেত হয়েছিলেন এই শিল্প বাজারে। সেই ¯্রােতধারায়  টেপা পুতুল ও টেরাকোটা শিল্পী সুবোধ কুমার পাল এসেছিলেন রাজশাহীর উলাপুর থেকে। বংশ পরম্পরায় তারা মৃৎশিল্প নিয়ে কাজ করেন। এটি শুধু পেশা নয়, তাদের পারিবারিক ঐতিহ্যও। এই  আর্ট মার্কেটে ছিল বিলুপ্তপ্রায় শিল্প মাধ্যম বায়োস্কোপ।

কথার জাল বুনে সুরে সুরে এই লোকজ  মাধ্যমের সঙ্গে নতুন প্রজন্মের পরিচয় ঘটিয়েছেন বায়োস্কোপ শিল্পী জলিল ম-ল। একইভাবে ইউনেস্কো স্বীকৃত রিক্সাচিত্র থেকে শুরু করে দারুশিল্প, জামদানি, পাহাড়ি বুনন, গহনা, ভাস্কর্য তৈরির হাতে খড়িসহ নানা শিল্পপণ্যের পসরা নিয়ে বসেছিলেন শিল্পীরা। 
মূলত সমকালীন শিল্পচর্চার প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নান্দনিক জীবনের জন্য শিল্পের প্রসার, শিল্পকর্ম বা শিল্পপণ্য তৈরিতে শিল্পীকে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করতে এই  শিল্প বাজারের আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া শিল্পী ও শিল্পমাধ্যমের সঙ্গে সম্পৃক্তদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জীবিকা নির্বাহের  পরিধি বিস্তৃত করাও ছিল আয়োজনটির অন্যতম লক্ষ্য।

এতে  দেশের অন্যতম শিল্প ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ, শিল্পী ও উদ্যোক্তাদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় প্রায় ১০০টি শিল্প পণ্যের স্টল ছিল। এর মধ্যে চারুশিল্পী ও উদ্যোক্তাদের জন্য ঐতিহ্যবাহী ধারার ২০টি স্টল  বরাদ্দ  দেওয়া হয়। সমকালীন ধারায় একক ও দলগতভাবে ৩০টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া  হয়।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে অংশ নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের  আটটি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগ,  জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা বিভাগ, শান্তা-মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগ, ইউডা চারুকলা বিভাগ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগ এবং রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগ।
মাগুরায় দুই দিনব্যাপী কবিতা আবৃত্তি উৎসব অনুষ্ঠিত ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, মাগুরার ১ম আবৃত্তি সংগঠন কণ্ঠবীথির ২৬ বছর পূর্তি উপলক্ষে  দুই দিনব্যাপী কবিতা আবৃত্তি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভাষা সৈনিক খান জিয়াউল হক স্বর্ণপদক আবৃত্তি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। স্বর্ণপদক আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় সারাদেশের ১০০ জন আবৃত্তিশিল্পী থেকে বাছাইকৃত ৬ জন চূড়ান্ত পর্বে প্রতিযোগিতা করে।

স্বর্ণপদক প্রাপ্ত হন সাতক্ষীরার আনিকা উলফাত, ২য় হন ময়মন সিংহের প্রত্যাশা। আজ শনিবার রাতে ১০টার দিকে উৎসব শেষ হয়। বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। 
জানা গেছে, এ উপলক্ষে শহরে র‌্যালি বের করা হয়। নোমানী ময়দান থেকে র‌্যালি বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। শোভাযাত্রাটি মাগুরা শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে স্থানীয় আছাদুজ্জামান মিলনায়তনে এসে শেষ হয়। শুক্রবার রাতে এই উৎসব শুরু হয়েছে  শনিবার রাতে শেষ হয়। শুক্রবার রাতে স্থানীয় আছাদুজ্জামান  মিলনায়তনে  মাগুরার  ১ম আবৃত্তি সংগঠন কণ্ঠবীথি এই আবৃত্তি উৎসবের আয়োজন করেন।

শুক্রবার রাতে মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে অনুষ্ঠানের  উদ্বোধন করেন পৌর মেয়র খুরশিদ হায়দার টুটুল। খান জিয়াউল হকের জীবনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে আলোচনা করেন তার ছাত্র বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপির উপ-মহাপরিচালক ড. সাইফুর রহমান। ভাষাসৈনিক খান জিয়াউল হক স্বর্ণ আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় শতাধিক আবৃত্তি শিল্পী অংশ নেন। এর মধ্য থেকে নির্বাচিত ৬ জনকে বাছাই করা হয় চূড়ান্ প্রতিযোগিতার জন্য। এ ছাড়া আবৃত্তি পরিবেশন করেন মাগুরার আবৃত্তি সংগঠন কণ্ঠবিথির সদস্যরা।

বিপুলসংখ্যক দর্শক অনুষ্ঠাটি উপভোগ করেন। শনিবার রাতে শেষ হয় দুই দিনের আবৃত্তি উৎসব। মাগুরার আবৃত্তি সংগঠন কণ্ঠবীথির আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো দুই দিনব্যাপী ২৬ বছর পূর্তি উৎসব ও ভাষা সৈনিক খান জিয়াউল হক স্বর্ণপদক আবৃত্তি প্রতিযোগিতা। আবৃত্তি উৎসবে বিচারক হিবাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক রাশেদ হাসান ও মাহতাব সুমন।

স্বর্ণপদক আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় সারাদেশের ১০০ জন আবৃত্তিশিল্পী থেকে বাছাইকৃত ৬ জন চূড়ান্ত পর্বে প্রতিযোগিতা করে। স্বর্ণপদক প্রাপ্ত হন সাতক্ষীরার আনিকা উলফাত, ২য় হন ময়মন সিংহের প্রত্যাশা। পুরস্কার বিতরণ করেন জেলা পরিষদ চেযারম্যান পংকজ কুমার কুণ্ডু ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস। দুই দিন ধরে আবৃত্তি উপভোগ করেন জেলাবাসী।

×