ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

শুরু হবে সশরীরে ক্লাস

২২ ফেব্রুয়ারি স্কুল কলেজ ভার্সিটি খুলছে

প্রকাশিত: ২৩:১৪, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২

২২ ফেব্রুয়ারি স্কুল কলেজ ভার্সিটি খুলছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে। এ জন্য শিক্ষার্থীদের মানতে হবে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি। যেসব শিক্ষার্থী করোনা টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন তারা সরাসরি শ্রেণী কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন। বাকিদের অনলাইন ও টিভিতে ক্লাস করতে হবে। করোনাসংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি কমিটির সঙ্গে আলোচনা করার পর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এমন কথা জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। এক মাস পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হচ্ছে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এ পর্যন্ত ১২ থেকে ১৭ বছর পর্যন্ত মাধ্যমিক পর্যায়ের এক কোটি ২৮ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে এক কোটি ২৬ লাখ ৫৭ হাজার শিক্ষার্থী প্রথম ডোজ টিকা পেয়েছে। দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছে ৩৪ লাখ ৫০ হাজার শিক্ষার্থী। আগামী ২১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রথম ডোজ পাওয়া শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় ডোজের আওতায় আনা হবে। কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাসে পাঠদান পরিচালনা করতে হবে। এ বিষয়ে কোন ধরনের ছাড় দেয়া হবে না। তিনি বলেন, যেহেতু করোনার কারণে গত এক মাস বন্ধ ছিল তাই যেখানে শেষ সেখান থেকে শুরু করা হবে। বর্তমানে আগের চেয়ে ক্লাসের সংখ্যা বাড়ানো হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে চলতি বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের সংক্ষিপ্ত সিলেবাস শেষ করা হবে। দীপু মনি বলেন, বর্তমানে ১২ বছরের নিচে শিক্ষার্থীদের করোনার টিকার আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। এ বিষয়ে ডব্লিউএইচও কাজ করছে। তারা অনুমোদন দিলে আমরাও এসব শিশুকে টিকার আওতায় আনার কার্যক্রম শুরু করব। দীপু মনি বলেন, ‘১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী মাধ্যমিক পর্যায়ের মোট শিক্ষার্থী প্রায় এক কোটি ২৮ লাখ। তাদের মধ্যে ২৬ লাখ ৫৭ হাজার শিক্ষার্থী প্রথম ডোজের টিকা পেয়েছে। দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছে ৩৪ লাখ ৫০ হাজার শিক্ষার্থী। আগামী ২১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রথম ডোজ পাওয়া শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় ডোজের আওতায় আনা হবে।’ তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে যেহেতু এক মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল, তাই যেখানে শেষ হয়েছিল, সেখান থেকে শুরু করা হবে। আগের চেয়ে ক্লাস সংখ্যা বাড়ানো হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে চলতি বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের সংক্ষিপ্ত সিলেবাস শেষ করা হবে।’ শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাসে পাঠদান পরিচালনা করতে হবে। এ বিষয়ে কোন ধরনের ছাড় দেয়া হবে না। বর্তমানে ১২ বছরের নিচে শিক্ষার্থীদের করোনার টিকার আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও কাজ করছে। তারা অনুমোদন দিলে, আমরাও শিশুদের টিকার আওতায় আনার কার্যক্রম শুরু করব।’ জুন-আগস্টের মধ্যে এসএসসি ও এইচএসসি ॥ চলতি বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার সম্ভাব্য সময়ের বিষয়ে ধারণা দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। মন্ত্রী বলেন, ‘জুন থেকে আগস্টের মধ্যে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নেয়ার চেষ্টা করব। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা হবে। কম বিষয়ে পরীক্ষা নেয়া হবে কিনা, পরীক্ষার কাছাকাছি গিয়ে বলতে পারব।’ সরকারের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী প্রতি বছর ১ ফেব্রুয়ারি এসএসসি এবং ১ এপ্রিল থেকে এইচএসসি পরীক্ষার সূচী নির্ধারণ করা হয়। করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে ২০২০ সাল থেকে নির্ধারিত সময়ে এ পরীক্ষাগুলো নেয়া যায়নি। করোনার কারণে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয় সরকার। টানা দেড় বছর বন্ধ রাখার পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে সব স্কুল-কলেজ খুলে দেয়া হয়। পরে ধাপে ধাপে খুলে যায় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও। করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের দাপটে গত ২১ জানুয়ারি ফের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়। আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা আছে। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ॥ সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা নিতে দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠক করা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। তিনি বলেন, যে সিলেবাসে ২০২১ সালের এইচএসসি-সমমান পরীক্ষা হয়েছে সে সিলেবাসে যেন সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হয় সেটি নিশ্চিত করতে এ বৈঠক করা হবে। তিনি বলেন, আমরা যে সিলেবাসে গত বছরের এইচএসসি পরীক্ষা নিয়েছি তার ওপর সকল সরকারী- বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়কে ভর্তি পরীক্ষা নিতে বলা হবে। আমরা আশা করি তারা আমাদের অনুরোধ মেনে নেবেন। পরবর্তী ক্লাসের জন্য যতটুকু প্রয়োজন তার ওপর সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করা হয়েছে। তাই এর ওপর ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করলে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে গুচ্ছভর্তি পরীক্ষা আয়োজনকারীদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। বুয়েটসহ আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। সবার সঙ্গে একত্রে আলোচনা করতে আগামী সপ্তাহের মধ্যে দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে বসে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যেন সমন্বয় করে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করে সে বিষয়েও পরামর্শ দেয়া হবে। প্রাক-প্রাথমিকে অপেক্ষা ॥ প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের শ্রেণীকক্ষে পাঠদানের বিষয়ে আরও অপেক্ষা করতে হবে বলে জানান দীপু মনি। তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের যেহেতু টিকা নেয়া হয়নি, আমাদের পরামর্শকরা যেটা বলেছেন যে, সংক্রমণ দ্রুত নামছে। এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে তারা আশা করছেন। তিনি বলেন, ‘২২ তারিখের পর থেকে ১০ দিন থেকে ২ সপ্তাহ পর আমরা আশা করছি প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদেরও আমরা শ্রেণীকক্ষে নিয়ে আসতে পারব। এখনও যে অবস্থা আছে, তাতে ২২ তারিখে প্রাথমিককে শ্রেণীকক্ষে নিয়ে আসছি না। আমরা সপ্তাহ দুয়েক সর্বোচ্চ দেখব।’ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোঃ জাকির হোসেন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব আবু বকর ছিদ্দিকী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ, কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব (চলতি দায়িত্ব) তারিকুল ইসলাম প্রমুখ। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গত ১৩ জানুয়ারি থেকে ১১ দফা বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। এরপর ২১ জানুয়ারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধসহ নতুন করে পাঁচ দফা নির্দেশনা দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। তাতে গত ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। পরে আরও দুই সপ্তাহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
×