ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীর আশাবাদ

এ মাসের শেষের দিকেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে

প্রকাশিত: ২২:৪৮, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২

এ মাসের শেষের দিকেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলমান মহামারীতে শিক্ষার্থীরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মন্তব্য করে ফেব্রুয়ারির শেষদিকেই আবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার আশা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, এখন যেহেতু একটু খারাপ সময় যাচ্ছে, আমরা আশা করি, এই মাসের শেষের দিকে হয়ত অবস্থার পরিবর্তন হবে এবং সেই সময় আমরা স্কুল-কলেজসহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আবার খুলে দিতে পারব। রবিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর সেগুনবাগিচার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সংযুক্ত হয়ে ২০২১ সালের উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এর আগে পরীক্ষার ফলের পরিসংখ্যান ও প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির কাছে সংশ্লিষ্ট ১১টি বোর্ডের চেয়ারম্যানগণ হস্তান্তর করেন। মহামারীর কারণে দেড় বছর স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হওয়ার কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেন, যখনই আমরা করোনাকে একটু নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছি তখনই আবার আমরা স্কুলগুলো চালু করেছিলাম। আমরা ২০২১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সরাসরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু করি। কিন্তু ২০২২ সালে এসে আবার যে ওমিক্রন নামের নতুন এক সংক্রমণ, সেটায় আবার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, আবার মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে। সেজন্য আবার আমাদের এটা বন্ধ করে দিতে হলো। কিন্তু আমি আশা করি যে, আমরা খুব দ্রুত সমাধান করতে পারব। প্রধানমন্ত্রী আবারও সকলকে টিকা গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, তাঁর সরকার সর্বস্তরের মানুষকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য টিকা দেয়ার যে ব্যবস্থা নিয়েছে তার আওতায় এসে সকলকে টিকা গ্রহণ করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে আমরা খুলতে পারি সেজন্য টিকাদান কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। কাজেই যারা এ পর্যন্ত টিকা নেননি তাদের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে, আপনারা টিকাটা নিয়ে নেবেন। এই ভ্যাকসিনটা নিলে পড়ে করোনা ধরলেও সেটা ও’রকম খারাপ পর্যায়ে যাবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছিল বলেই করোনাকালেও অনলাইনে এবং টেলিভিশনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পাঠদান অব্যাহত রাখতে সমর্থ হয়েছে। তথাপি এই করোনাকালে সব থেকে ক্ষতিগ্রস্Í হয়েছে আমাদের শিক্ষার্থীরা। বর্তমানে পরিবারগুলো ছোট হয়ে আসার পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে না পাড়ায় অনেকক্ষেত্রেই শিক্ষার্থীকে একাকীত্বে ভুগতে হয়েছে। সরকারপ্রধান বলেন, অনলাইন বা টেলিভিশনে তাঁর সরকার শিক্ষার ব্যবস্থা করেছে সেটা ঠিক কিন্তু স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষার যে নির্মল আনন্দ প্রাপ্তি তা থেকে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত ছিল। যা হোক যখনই আমরা করোনাকে একটু নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছি তখনই স্কুলগুলো চালু করেছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছে, আবার নতুন সংক্রমণ দেখা দিল। আমি আশা করি, আমরা খুব দ্রুত সমাধান করতে পারব। ইতোমধ্যে আমরা টিকাও দিচ্ছি। যে সমস্ত ছেলেমেয়ের বয়স ১২ বছরের ওপরে তাদেরকেও টিকা দেয়া হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন। শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী স্বাগত বক্তব্য রাখেন। মাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব আবু বকর সিদ্দিক অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। এছাড়া বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সচিব মোঃ আমিনুল ইসলাম খান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৯৬ সালে প্রথমবার সরকার গঠনের পর দেশে বিজ্ঞান শিক্ষার প্রতি অনীহা প্রত্যক্ষ করে তাঁর সরকার বিজ্ঞান শিক্ষায় গুরুত্ব দেয় এবং দেশে ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করে। পাশাপাশি ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর শিক্ষার বহুমুখীকরণের অংশ হিসেবে জেলায় জেলায় সরকারী ও বেসরকারী খাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। যারমধ্যে রয়েছে- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়, ফ্যাশন ডিজাইন বিশ্ববিদ্যালয়সহ টেক্সটাইল, আরবী, মেরিটাইম, এভিয়েশন এ্যান্ড এরোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভাগীয় পর্যায়ে একটি করে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় করে দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, আমাদের ছেলেমেয়েদের মেধা বিকাশের সুযোগ করে দেয়ার মাধ্যমে তাদের যুগোপযোগী শিক্ষা প্রদান এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করাই এর লক্ষ্য। প্রত্যেকটি উপজেলায় যেখানে কোন সরকারী স্কুল-কলেজ ছিল না, সেখানে একটি করে সরকারী স্কুল এবং কলেজ করে দিয়েছি। তিনি বলেন, সরকার ২০২২ সালে এই করোনা ভাইরাসের মধ্যেও ৪ কোটি ১৭ লাখ ২৬ হাজার ৮৫৬ শিক্ষার্থীর মাঝে ৩৪ কোটি ৭০ লাখ ২২ হাজার ১৩০ কপি বই বিনামূল্যে বিতরণ করেছে এবং নিয়মিত বৃত্তিসহ ৩ কোটি ৩৮ লাখ ৫৪ হাজার ৬১১ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি দেয়া হচ্ছে। প্রতিবন্ধীদের বৃত্তি এবং উপবৃত্তির আওতায় আনা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে এবং এটা প্রযুক্তির যুগ। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই সরকার কারিগরি শিক্ষাকে তাঁর সরকার সব থেকে গুরুত্ব দিচ্ছে। আমাদের ছেলেমেয়েরা মেধাবী। কাজেই আমরা যদি সেভাবে প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি করি তাহলে ৪র্থ শিল্প বিপ্লবে দেশে-বিদেশে যে কর্মসংসস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে তা আমাদের ছেলেমেয়েরা নিতে পারবে। সেজন্য সময় উপযোগী শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে, সেটাই আমদের লক্ষ্য। তবে, সেজন্য কেবল গতানুগতিক ডিগ্রী নিলেই হবে না। প্রধানমন্ত্রী এ সময় গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করেন, বিশেষ করে বিজ্ঞান ও চিকিৎসা শাস্ত্রে গবেষণার ওপর। তিনি বলেন, কৃষিতে খুবই আমরা সাফল্য অর্জন করেছি, কিন্তু বিজ্ঞান বা মেডিক্যাল সায়েন্সের ক্ষেত্রে গবেষণায় এখনও আমাদের আরো জোর দিতে হবে। কারণ মেডিক্যাল গবেষণাটা খুবই বেশি প্রয়োজন। ঘনবসতিপূর্ণ দেশ আমাদের। সেই দেশে মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা, তাদের শিক্ষা, তাদের সব রকম ব্যবস্থা করার জন্য এটা একান্তভাবে দরকার। ‘আমরা বিজয়ী জাতি এবং মুক্তিযুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছি,’ স্মরণ করিয়ে দিয়ে জাতির পিতার কন্যা বলেন, এই বিজয়ের ইতিহাস তাঁর সরকার আমাদের শিক্ষা কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত করেছে। কেননা আমরা যদি বিজয়ের ইতিহাস না জানি তাহলের আমাদের মাঝে আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদাবোধ জন্মাবে না। প্রধানমন্ত্রী যুব সমাজকে এ সময় শুধু চাকরিমুখী না হয়ে তাঁর সরকার প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে নিজেরা উদ্যোক্তা হবার মাধ্যমে অন্যের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে বলেও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, আমাদের প্রতিটি ছেলেমেয়ে বর্তমান যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে উপযুক্ত শিক্ষা গ্রহণ করে, উপযুক্ত নাগরিক হয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। শিক্ষা হবে দেশ গড়ার জন্য, দেশের মানুষের কল্যাণে, দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য। প্রধানমন্ত্রী করোনা মহামারীর মধ্যে পরীক্ষা আয়োজন এবং নির্ধারিত সময়ে ফল ঘোষণা করায় সংশ্লিষ্ট বোর্ড এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানান। তিনি কৃতকার্য শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি অকৃতকার্য শিক্ষার্থীরা আগামীতে আরো ভালভাবে লেখাপড়া করে কৃতকার্য হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। অভিভাবকদেরকেও এজন্য স্নেহ ও মমতা দিয়ে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানান এবং সকলকে মাস্ক ব্যবহার ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।
×