স্টাফ রিপোর্টার ॥ এ বছর ৭১৩ পুলিশ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুলিশ পদক পাচ্ছেন। এর মধ্যে সেবা, সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য পুরস্কারস্বরূপ চার ক্যাটাগরিতে কনস্টেবল থেকে অতিরিক্ত আইজিপি পদমর্যাদার ১১৮ সদস্য বিপিএম (পুলিশ পদক) প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদকের (পিপিএম) পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন। এছাড়া আইজিপি ব্যাজ পাচ্ছেন পুলিশের ৫৯৫ কর্মকর্তা ও সদস্য।
নতুন বছরের শুরুতেই আগামীকাল ৫ জানুয়ারি থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত রাজারবাগ পুলিশ লাইনে পুলিশ সপ্তাহ-২০ হবে। অনুষ্ঠেয় পুলিশ সপ্তাহের অনুষ্ঠানে কনস্টেবল থেকে অতিরিক্ত আইজিপি পদমর্যাদার ১১৮ সদস্য বিপিএম ও পিপিএম পদক নেবেন। ছয়টি বিশেষ ক্যাটাগরিতে পুলিশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আইজিপি ব্যাজ পাচ্ছেন পুলিশের ৫৯৫ কর্মকর্তা ও সদস্য। প্রশংসনীয় ও ভাল কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পুলিশ সদস্যদের এই ব্যাজ দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে তাদের হাতে পদক তুলে দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, অতিরিক্ত আইজিপি পদমর্যাদার একমাত্র কর্মকর্তা র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ডিজি বেনজীর আহমেদ পুলিশের সর্বোচ্চ পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন। এছাড়া উর্ধতন কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার, খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি খ. মহিদ উদ্দিন, র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা। বছরজুড়ে ভাল কাজ, গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামূলক আচরণ ও সাহসকিতাপূর্ণ কাজের জন্য চার ক্যাটাগরিতে পদক দেয়া হয়। পদকের জন্য মনোনীত তালিকা অনুযায়ী ১১৮ জনের মধ্যে ১৪ জন বিপিএম-সাহসিকতা, ২৮ জন বিপিএম-সেবা, ২০ জন পিপিএম-সাহসিকতা ও ৫৬ জন পিপিএম-সেবা পদক পাচ্ছেন।
’১৯ সালে ৩৪৯ পুলিশকে বিপিএম-পিপিএম পদক দেয়া হয়েছিল। রেকর্ডসংখ্যক এ পদক দেয়ার ক্ষেত্রে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে পুলিশ কর্মকর্তাদের ভূমিকার বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হয়েছিল। এ কারণেই একযোগে দেশের ৬৪ জেলার এসপি ও রেঞ্জ ডিআইজি ও মেট্রোপলিটন এলাকার কমিশনাররা সবাই পদক পেয়েছিলেন। ’১৯ সালে এত বিপুলসংখ্যক বিপিএম-পিপিএম পদক ঘিরে খোদ পুলিশের মধ্যেই ব্যাপক সমালোচনা হয়। তবে এবার স্বাভাবিক বিবেচনাই পদকপ্রাপ্তদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। যার ফলে এক বছরের ব্যবধানে পদকপ্রাপ্ত সদস্যের সংখ্যা কমে প্রায় এক তৃতীয়াংশে দাঁড়িয়েছে। দু-একটি বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া গত বছর যারা পদক পেয়েছেন এবার তাদের তালিকার বাইরে রাখা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, এবার পদক প্রাপ্তদের সংখ্যা একশ’র মধ্যে সীমিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তবে সদর দফতরের অনুরোধে এ সংখ্যা কিছু বাড়িয়ে ১১৮ জন চূড়ান্ত করা হয়েছে।
পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, এসপি পদমর্যাদা থেকে শুরু করে কনস্টেবল পর্যায়ে মোট ৫৯৫ কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্য আইজিপি ব্যাজ পাচ্ছেন। গতবারের চেয়ে ৯৪ জন বেশি পুলিশকে এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। গত পুলিশ সপ্তাহে আইজিপি ব্যাজ পেয়েছিলেন ৫০১ জন। মনোনীত ৫৯৫ জনের মধ্যে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে ২০৬, ‘বি’ ক্যাটাগরিতে ১৩৭, ‘সি’ ক্যাটাগরিতে ১০৫, ‘ডি’ ক্যাটাগরিতে ৫২, ‘ই’ ক্যাটাগরিতে ৫১ ও ‘এফ’ ক্যাটাগরিতে রয়েছে ৪৪। কর্মক্ষেত্রে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন, বাহিনীর মর্যাদা বেড়েছে এমন কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি বিভিন্ন ভাল কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রতি বছর পুলিশ সপ্তাহে আইজিপি ব্যাজে মনোনীত পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদের এ পদক দেয়া হয়। প্রতি বছরের মতো এবারও মাঠপর্যায়ে যাচাই-বাছাই করে কর্মক্ষেত্রে দক্ষতা, সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনসহ বিভিন্ন ভাল কাজে অংশ নেয়া পুলিশ কর্মকর্তাদের তালিকা তৈরি করা হয়। সেই তালিকা অনুযায়ী ৫৯৫ জনকে পুলিশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আইজিপি ব্যাজ মনোনীত করা হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, জননিরাপত্তা বিধান, জনসেবামূলক কর্মকাণ্ড, মামলার রহস্য উদঘাটন, ভাল পুলিশিং, সরকারী ও ব্যক্তিগত কাজের মাধ্যমে পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি বাড়ানোসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে অবদানের ভিত্তিতে পদকের জন্য যোগ্য কর্মকর্তা ও সদস্যদের নির্বাচিত করা হয়েছে। এই পুরস্কার তাদের জনসেবার কাজে আরও উৎসাহিত করবে। এজন্য পুলিশ হেডকোয়ার্টারের অতিরিক্ত আইজিপি মঈনুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিটি তালিকা চূড়ান্ত করার কাজটি করেছেন। এ ব্যাপারে পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) সোহেল রানা বলেন, পদকের জন্য মনোনীতদের সঠিক সংখ্যা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে শীঘ্রই গেজেট আকারে বিপিএম-পিপিএম-আইপি ব্যাজ এ মনোনীতদের তালিকা প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন আরেক পুলিশ এক কর্মকর্তা।
২০১৯ সালে সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের জন্য ৩৪৯ জনকে বিপিএম- পিপিএম পদক দেয়া হয়েছিল। এর আগে যথাক্রমে ২০১৮ সালে ১৮২ জন, ২০১৭ সালে ১৩২, ২০১৬ সালে ১২২, ২০১৫ সালে ৮৬ জন কর্মকর্তা বিপিএম- পিপিএম পদক পেয়েছেন। এছাড়া ২০১৯ সালে আইজিপি ব্যাজ পেয়েছিলেন ৫০১ জন, ২০১৮ সালে ৩২৯ জন ও ২০১৭ সালে ২৮৮ জন পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য ‘আইজিপি’স এক্সেমপ্ল্যারি গুড সার্ভিস ব্যাজ (আইজিপি ব্যাজ) পান। গতবছর ‘আইজিপি ব্যাজ’ পদকের পাশাপাশি প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা আর্থিক মূল্যমানের পুরস্কারও দেয়া হয়েছে।
ঢাকা, বাংলাদেশ শনিবার ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১
