ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

রূপ হারিয়েছে পদ্মা, বড়াল এখন ফসলের মাঠ

প্রকাশিত: ০৪:১২, ১৫ জানুয়ারি ২০১৯

রূপ হারিয়েছে পদ্মা, বড়াল এখন ফসলের মাঠ

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ শুষ্ক মৌসুম আসার আগেই এবারও মড়া খালে পরিণত হয়েছে রাজশাহীর পদ্মা। আর পদ্মার শাখা নদী এককালের প্রমত্তা বড়াল এখন নদীর চিহ্ন হারিয়ে পরিণত হয়েছে ফসলের ক্ষেতে। খরস্রোতা নদীর নাম ছিল বড়াল। তবে নাব্য হারিয়েছে অনেক আগেই। এখন বড়ালের বুকে হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ফসল। শুধু বড়াল নয়, রাজশাহীর পদ্মার বুক চিরে এখন খ- খ- ডোবায় পরিণত হয়েছে। পদ্মা তার কিছুটা স্মৃতিচিহ্ন ধরে রাখলেও শুকিয়ে কাঠ এখন বড়াল। অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ এবং যাতায়াতের জন্য নদীর বুকে একাধিক ব্রিজ নির্মাণ করে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বড়ালের। বড়াল নদীর বুক পলি জমে উঁচু হয়েছে। দু’পার চেপে গেছে। ফলে এক সময়ের খর¯্রােত বড়াল নদী আজ শুধুই স্মৃতি। স্থানীয়রা জানান, প্রমত্তা পদ্মা নদীর শাখা নদী হিসেবে বড়াল নদীর উৎপত্তি হয়ে রাজশাহীর বাঘা, চারঘাট; নাটোরের বাগাতিপাড়া, বড়াইগ্রাম; পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে বাঘাবাড়ি হয়ে হুড়া সাগরের বুকে মিশে নাকালিয়ায় যমুনায় পড়েছে। এক সময় যোগাযোগের সুবিধার কারণে বড়াল নদীর দু’পারে চারঘাট বাজার, চারঘাট উপজেলা পরিষদ, চারঘাট মডেল থানা, চারঘাট পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, চারঘাট এমএ হাদী কলেজ, বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি, আড়ানী বাজার, রুস্তমপুর পশুহাট, পাকা বাজার, জামনগর বাজার, বাঁশবাড়িয়া বাজার, তমালতলা বাজার, বাগাতিপাড়া থানা, দয়ারামপুর সেনানিবাসসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দা মোজাম্মেল হক জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড ১৯৮১-৮২ অর্থবছরে নদীর তীরবর্তী উপজেলাগুলো বন্যামুক্ত করার জন্য উৎসমুখ চারঘাটে বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে পানির স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ বন্ধ করে দেয়। এছাড়া বিভিন্নস্থানে স্লুইসগেট ও বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে পানির স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। বিভিন্নস্থানে স্লুইসগেট ও বাঁধ নির্মাণের ফলে ক্রমান্বয়ে বড়াল নদী শুকিয়ে মড়া খালে পরিণত হয়েছে। বর্ষায় নদীতে কিছু পানি জমলেও শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই শুকিয়ে মড়া নদীতে পরিণত হয়। এবারও তাই হয়েছে। এলাকার কৃষকরা নদীর বুকজুড়ে আবাদ করেন। শুষ্ক মৌসুমে পরিণত হয় গবাদিপশুর চারণক্ষেত্র। এক সময় যে বড়ালের পানিতে নদীতীরবর্তী মানুষ তাদের জমিতে ফসল ফলাত, এখন সে নদীর বুকে অগভীর নলকূপ বসিয়ে হয় ধান চাষ। নদী আছে, নৌকা আছে, নেই শুধু পানি। স্থানীয় স্কুল শিক্ষক জাকারিয়া হোসেন জানান, নদীতে পানি না থাকায় এ নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ব্যবসাবাণিজ্যের কেন্দ্রগুলো তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। সেচসহ প্রতিদিনের প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করায় পানির স্তর নেমে যাচ্ছে। এখনই সরকারী উদ্যোগ গ্রহণ করে নদীটি পুনঃখনন করা না হলে বড়াল নদীই একদিন হারিয়ে যাবে মানচিত্র থেকে। স্থানীয় জেলেরা জানান, এক সময় এই বড়াল নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করা হলেও এখন আর নদীতে মাছ শিকার করা হয় না। পানি না থাকায় জেলেরা আজ অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। পদ্মার মুখে পলিমাটি জমে পানির প্রবেশদ্বার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বড়াল আজ নিজের অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে। বড়াল পুনঃখনন করে অবাধ পানি প্রবাহের ব্যবস্থার দাবি জানান স্থানীয় জেলেরা। এদিকে রাজশাহীতে পদ্মা নদীও এখন শুকিয়ে কাঠ। শুকনো পদ্মার বিস্তীর্ণ এলাকা এখন ফসলের মাঠ। দেখে উপায় নেই, এটি পদ্মা নদী। তারপরও শুকনো পদ্মায় ছুটে আসেন বিনোদনপ্রেমীরা। শুকনো নদীও যেন কাছে টানে রাজশাহীর বিনোদনপ্রেমীদের। সোমবার সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পদ্মা নদীর রাজশাহী অংশে এখন বিস্তীর্ণ বালুরাশি। শুষ্ক মৌসুম শুরুর অনেক আগেই পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। বলতে গেলে রাজশাহীর ওপর দিয়ে প্রবাহিত পদ্মা নদী এখন পুরোটাই পানিশূন্য। বালুর স্তরে স্তরে আটকে আছে মাঝিদের নৌকা। শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে চারদিক। তবু শুকনো পদ্মার রূপ দেখতে দর্শনার্থীর যেন কমতি নেই। সকাল গড়িয়ে বিকেল অবধি বালুময় পদ্মার টানেও মানুষ আসছেন সময় কাটাতে। সারাক্ষণ মানুষের বিচরণ, আনাগোনা লেগেই রয়েছে পদ্মার বিস্তীর্ণ বালুরাশির মধ্যে। জৌলুশ হারিয়ে ক্রমেই অচেনা রূপ ধারণ করলেও পদ্মার বুকে মানুষের বিচরণের কমতি নেই। যেন শুকনো পদ্মাও সমানে টানছে দর্শনার্থী। আর বালুরাশির মধ্যেই খুঁজে পাচ্ছে বিনোদনের সুখ।
×