ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

টিআইবির জাতীয় সম্মেলনে দুদক চেয়ারম্যান

খালেদার সাজা প্রমাণ করে দুর্নীতিবাজ কেউ ধরাছোঁয়ার বাইরে নয়

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

খালেদার সাজা প্রমাণ করে দুর্নীতিবাজ কেউ ধরাছোঁয়ার বাইরে নয়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দুর্নীতির মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সাজার মধ্যে দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে যে দুর্নীতিবাজ কেউ ধরাছোঁয়ার বাইরে নয়। দুর্নীতিবাজ যতই ক্ষমতাবান হোক, তার বিচার একদিন হবেই। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনগণের কাছে অন্তত সেই বার্তা দিতে পেরেছেন বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। সোমবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘সনাক-স্বজন, ইয়েস ইয়েস ফ্রেন্ডস, ওয়াইপ্যাক জাতীয় সম্মেলন-২০১৮’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। সারাদেশে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত সচেতন নাগরিক কমিটির সদস্য, স্বজন, ইয়েস, ইয়েস ফ্রেন্ডস, ঢাকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইয়েস এবং ওয়াইপ্যাক সদস্যদের নিয়ে এ জাতীয় সম্মেলনের আয়োজন করে টিআইবি। দিনব্যাপী আয়োজিত এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এম হাফিজউদ্দিন খান। শপথ বাক্য পাঠ করান সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। অনুষ্ঠানে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, সম্ভবত আমরা একটা বার্তা দিতে পেরেছি সমাজে, এটা তো আপনাদের স্বীকার করতে হবে, নোবডি ইজ আনটাচেবল। একই সঙ্গে আমরা দেখিয়ে দিয়েছি, যারা ক্ষমতাবান, যারা ক্ষমতার শীর্ষে আছেন, তাদেরকেও আমরা আদালতে নিতে পেরেছি। এবং আপনারা জানেন, আমি বলতে চাই না আমরা ক্ষমতাবানদেরকে আদালতে নিয়েছি। জাতীয় সম্মেলনের একটি প্যানেল আলোচনার পর এক প্রশ্নে ‘বড় দুর্নীতিবাজদেরও’ বিচারের আওতায় আনার অঙ্গীকার করেন তিনি। প্যানেল আলোচনায় বক্তব্যের পর টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান তার কাছে জানতে চান, বড় বড় দুর্নীতিবাজ ও ক্ষমতাবানদের বিষয়ে দুদক সক্রিয় নয় বলে জনমনে ধারণা রয়েছে। এক্ষেত্রে দুদকের অবস্থান কী ? উত্তরে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, কৌশলী পদক্ষেপে অগ্রসর হওয়ায় বড় দুর্নীতিবাজদের ধরতে সময় নিচ্ছেন তারা। তবে কেউ ছাড় পাবে না। ছোট গাছ উপড়ানো যেমন সহজ, বড় গাছ উপড়ানো তেমন কঠিন কাজ। আমাদেরকে কৌশলী হতে হয়। এটা একটা যুদ্ধ। এই যুদ্ধে আপনি সব সময় এগিয়ে যাবেন- সেটা না। আপনাকে এগিয়ে যেতে হবে, আবার পিছিয়েও আসতে হতে পারে। আপনারা আমার সঙ্গে একমত হবেন, এটা এত সহজ ব্যাপার না। ইকবাল মাহমুদ বলেন, উই আর স্মল, দে আর বিগ। তবে এটা ঠিক, আমরা বড়দেরকে বিচারের আওতায় আনি নাই- এমন কথা সম্পূর্ণ সত্য না। আপনারা দেখেছেন, দৃশ্যমান কিছু আমরা করেছি। টু ক্রিয়েট সাম এক্সামপল দ্যাট হ্যাজ ডান। কথা ঠিক, আমরা বেশি মাত্রায় করতে পারতেছি না, প্রত্যাশার সঙ্গে এ্যাচিভমেন্ট- সেটার অনেক ফারাক। সেটা আমরা বুঝতে পারি। তবে সেটা স্ট্র্যাটেজিক। বড় দুর্নীতিবাজদের বিচারের আওতায় আনা ‘সময়ের ব্যাপার’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, সময় গুরুত্বপূর্ণ। আমরা এমন কোন কাজ করতে চাই না যে আপনি একটা কাজে হাত দিয়েছেন, হাতটা তুলে নিলেন, তাতে স্ট্র্যাটেজিক্যালি সমস্যা হয়। আমরা যদি হাত দিই, তবে হাত দেবই। হাত আমরা তুলে নেব না। দুর্নীতি দমনে দুদকের কৌশলের কথা জানিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, একটি কৌশলে দুর্নীতি একেবারে কমে যাবে- তা মনে করার কোন কারণ নেই। আমরা হয়ত কিছু এগিয়ে নিয়ে যাব, পরের কমিশন আরও কিছু এগিয়ে নিয়ে যাবে। সময় প্রয়োজন সেজন্য। আপনারা হতাশ হবেন না। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতির ধারণা সূচকে বাংলাদেশের দুই ধাপ অগ্রগতি প্রসঙ্গে ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরার পদক্ষেপ নিচ্ছি আমরা। কিছু সফল হয়েছি। দুই ধাপ এগিয়ে যাওয়াটা একেবারে অসফল- তা না। কাক্সিক্ষত মাত্রায় যেতে পারি নাই, সেটা আমাদের স্বীকার করতে হবে। কাক্সিক্ষত মাত্রায় যাওয়ার জন্য সময় দিতে হবে। তিনি বলেন, আপনারা দেখবেন, কত লোক জালে আটকা পড়ে গেছে। আমরা মাঠ প্রস্তুত করছি। এর আগে প্যানেল আলোচনায় টিআইবিসহ দুর্নীতিবিরোধী সব প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সমালোচনাকে ‘স্বাগত’ জানান ইকবাল মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘আপনারা যদি সমালোচনা না করেন, আমরা নিজেদের ভুল বুঝব কিভাবে? আমরা সেটা ধরে এগিয়ে যেতে চাই। গত দুই বছরের দায়িত্বকালে আমি টিআইবির সমালোচনায় বিব্রত হই না। কারণ আমি চাই আপনারা সমালোচনা করুন। দুর্নীতি দমন কমিশন সরকারী কোন প্রতিষ্ঠান নয়, সরকারের লেজুড়বৃত্তি করার জন্য দুদক গঠিত হয়নি। এ প্রতিষ্ঠান জনগণের প্রতিষ্ঠান। প্যানেল আলোচনায় টেন মিনিট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা আয়মান সাদিক এবং চামড়াজাত পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ‘কারিগর’-এর উদ্যোক্তা তানিয়া ওয়াহাব বক্তব্য দেন।
×