ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

তারেকের বদনাম ঘুচাতেই জয় বিএনপির টার্গেট

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২ জুন ২০১৬

তারেকের বদনাম ঘুচাতেই জয় বিএনপির টার্গেট

শংকর কুমার দে ॥ প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও তাঁর তথ্য প্রযুক্তি-বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এখন রাজনীতির আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। জয়ের বিরুদ্ধে ইসরাইলের মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বৈঠক, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকে ৩০০ মিলিয়ন ডলার, জয় অপহরণ চেষ্টা বানোয়াট ইত্যাদি একের পর এক তোপ দাগাচ্ছে বিএনপি। প্রতিটি ঘটনার বিষয়ে প্রমাণ দেয়ার জন্য চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছেন জয়। চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়ার পরই বেলুনের মতো চুপসে যাচ্ছে বিএনপি। কিন্তু জয়কে রাজনীতির টার্গেট করা হচ্ছে কেন? এ নিয়ে রাজনীতিকদের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারা কে কি বলেছেন আলোচ্য ঘটনায় প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানান, ইহুদী রাষ্ট্র ইসরাইলের ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির সদস্য মেন্দি এন সাফাদি ও ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে বৈঠক করে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে বিএনপির যুগ্মমহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে। তাকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে বিএনপির ইহুদী রাষ্ট্র ইসরাইল কানেকশন ফাঁস হয়ে যাওয়ায় বেকায়দায় পড়ে দলটি। বিএনপির পক্ষ থেকে পাল্টা প্রধানমন্ত্রীপুত্র জয়ও যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইলের ক্ষমতাসীন লিকুদ পার্টির সদস্য মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে ফেসবুকে নকল ভিডিও আপলোড করে বিবিসি-সহ বিদেশী গণমাধ্যমে প্রচার করানো হয়। প্রধানমন্ত্রীপুত্র ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে এই নকল ভিডিওটির বিষয়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেছেন, মেন্দি কেন কোন বিদেশীর সঙ্গেই গত কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্রে তার বৈঠক হয়নি। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিবিসির কাছে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। বিবিসির বিরুদ্ধে মিথ্যা খবর পরিবেশনের অভিযোগটি তারা নিজস্ব মাধ্যমে তদন্ত করছে, যার ছায়া তদন্ত করছে ঢাকার গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানান, ইসরাইলের মেন্দি এন সাফাদির ঘটনার আগে ঘটে জয়কে যুক্তরাষ্ট্রে অপহরণ চেষ্টা মামলায় জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ ও জয় অপহরণ চেষ্টার যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই থেকে তথ্য চুরি করে তার বাসায় রাখার পর তা উদ্ধারের ঘটনা। এরপর এই মামলায় শ্যোন এ্যারেস্ট দেখানো হয় আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে। জয় অপহরণ ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে প্রমাণিত হওয়ার পর বিএনপির এক নেতার পুত্রকে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে সাজা দেয়া হয়। এই ঘটনা ধামাচাপা দিতে জয়ের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হয় এই বলে যে, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকে তার ৩০০ মিলিয়ন ডলার আছে। জয় ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেছেন, প্রমাণ করতে পারলে এতিমদের দিয়ে দেয়া হবে। উত্তরে বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কি বলেছিলেন? বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এক জনসভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের এ্যাকাউন্টে ৩০০ মিলিয়ন ডলার জমা আছে। তিনি প্রশ্ন করেন, এফবিআইএর একজন এজেন্টকে ঘুষ দিয়ে এক প্রবাসী বাংলাদেশী তরুণ বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পুত্রের ব্যাপারে কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছিল। সেই মামলার নথিতেই আছে প্রধানমন্ত্রীর পুত্রের একটি এ্যাকাউন্টেই আড়াই হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ ৩০০ মিলিয়ন ডলার জমা আছে। এই টাকা কোথা থেকে গেছে? এই টাকার উৎস কী? এর উত্তর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। সজীব ওয়াজেদ জয় তাঁর ব্যাখ্যা দিয়েছেন এবং বেগম খালেদা জিয়াকে একটি চ্যালেঞ্জও ছুড়ে দিয়েছেন। সজীব ওয়াজেদ জয় নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে খালেদা জিয়ার প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেছেন, ‘ম্যাডাম, আপনি যদি জানেন যে ৩০০ মিলিয়ন ডলার কোথায়, অনুগ্রহ করে আমাকে জানান। আমি সেই সমস্ত অর্থ এতিমদের দান করে দিতে চাই।’ গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রধানমন্ত্রী পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে একের পর এক মিথ্যা অপপ্রচারের ঘটনার জন্ম দেয়া হচ্ছে কেন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে তখনকার প্রধানমন্ত্রী বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ পুুত্র বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান হাওয়া ভবন তৈরি করে বদনাম কুড়িয়েছিলেন। রাজনীতির মাঠে অবতীর্ণ হয়েই দুর্নীতির বরপুত্র অভিহিত হওয়া ছাড়াও তখন সমান্তরাল সরকার গঠন করে দেশব্যাপী ক্যাডার বাহিনী দিয়ে অত্যাচার নির্যাতনের এক রেকর্ড তৈরি করা হয়। হাওয়া ভবন খ্যাত তারেক রহমানের রাজনীতিতে আসাটা বুমেরাং হয়ে বদনাম হয়। তারেক রহমানের বদনাম ঘুচাতে টার্গেট করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে, যাতে জয়েরও বদনাম হয়ে গেলে তার পক্ষে রাজনীতিতে অভিষেক সম্ভব না হয়। এটাই বিএনপির দুরভিসন্ধি বলে মনে করেন গোয়েন্দারা।
×