ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

আরও ১৬ জনের অনুপ্রবেশ

২০৮ সেনা-বিজিপি সদস্য ফিরিয়ে নিতে অনীহা মিয়ানমারের

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ও নিজস্ব সংবাদদাতা, উখিয়া

প্রকাশিত: ২৩:৫৮, ১৬ এপ্রিল ২০২৪

২০৮ সেনা-বিজিপি সদস্য ফিরিয়ে নিতে অনীহা মিয়ানমারের

২০৮ সেনা-বিজিপি সদস্য ফিরিয়ে নিতে অনীহা মিয়ানমারের

 দফায় দফায় অনুপ্রবেশ করছে মিয়ানমারের সেনা এবং বিজিপি সদস্যরা। মঙ্গলবার আরও ১৬ সদস্য অনুপ্রবেশ করেছে দেশে। বর্তমানে ২০৮ সদস্যকে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকারের তৎপরতা নেই বলে জানা গেছে।
সীমান্ত সূত্রে জানা যায়, ওপারে চলমান যুদ্ধের জের ধরে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ও সীমান্ত রক্ষায় বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড বিজিবি যেখানে হিমশিম খাচ্ছে- সেখানে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর সদস্যদের অনুপ্রবেশ ও তাদের নিরাপত্তা এবং খাওয়া-চিকিৎসা ইত্যাদি নিয়ে অস্থির হয়ে পড়েছেন বিজিবি জওয়ানরা। তার পরও পার্শ্ববর্তী দেশের সৈন্য বলেই সীমান্ত আইন অনুসারে বিজিবি ওপারের বিজিপি সেনা সদস্যদের হেফাজতে রেখেছেন। মেহমান হিসেবে খাবার সরবরাহ ও চিকিৎসা সেবা দিয়ে চলেছেন।

আশ্রিত ওই সেনা ও বিজিপি সদস্যদের নিজ দেশে ফেরাতে বাংলাদেশ সরকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ব্যাপক তৎপরতা চালালেও মিয়ানমার সরকার তাদের বাহিনীর সদস্যদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে গাফিলতি করছে বলে জানা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক বিজিবি কর্মকর্তা বলেন, অনুপ্রবেশ করা ওই সদস্যদের মিয়ানমারের ফেরত পাঠানোর জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আলোচনা চলছে। হয়ত আগামি সপ্তাহে এদের ফেরত পাঠানো হতে পারে।
বিজিবি জানায়, মিয়ানমারের চলমান যুদ্ধের জের ধরে দেশটির সেনা ও বিজিপির আরও ১৬ সদস্য বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। এ নিয়ে গত ৩ দিনে মোট ৩২ জন পালিয়ে এসে আশ্রয় য়েছেন বাংলাদেশে। মঙ্গলবার সকালে ও বিকেলে নতুন করে ওই ১৬ সদস্য বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন। রেজুপাড়া সীমান্ত দিয়ে দুজন এবং জুমছড়ি সীমান্ত দিয়ে ১০ জন ও ঝিমংখালী সীমান্ত দিয়ে ৪জন অনুপ্রবেশ করেছে। পরে বিজিবি নিরস্ত্র করে মিয়ানমার সরকারি বাহিনীর ওই সদস্যদের নিজেদের হেফাজতে আশ্রয় দিয়েছেন। 

বিজিবি জানায়, মঙ্গলবার সকালে ও বিকেলে নতুন করে ১৬ জন পালিয়ে আসেন দেশে। এর মধ্যে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির রেজুপাড়া সীমান্তদিয়ে দুজন এবং জুমছড়ি সীমান্ত দিয়ে ১০ জন ও বিকেলে টেকনাফের জিমংখালী সীমান্ত দিয়ে ৪জন অনুপ্রবেশ করেছে। তাদের মধ্যে বিজিপি ও সেনা সদস্য রয়েছে। এদের কাছ থেকে অস্ত্র জমা নিয়ে বিজিবি তাদের হেফাজতে নিয়েছে। এ নিয়ে গত ৩ দিনে নতুন করে ৩২ জন পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।

যেখানে সোমবার দুপুরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশফাড়ি সীমান্তদিয়ে ২ সেনা সদস্য পালিয়ে আসেন। এর আগে গত ১৪ এপ্রিল টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে আসেন বিজিপির ১৪ সদস্য। নতুন করে আসা ৩২ জনকে নাইক্ষ্যংছড়ি সদরে ১১ বিজিবি হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ওখানে আগে থেকে ১৮০ জন আশ্রয়ে রয়েছেন। এ নিয়ে মোট ২১২ জন ওখানে রয়েছেন। আগে থাকা ১৮০ জনের মধ্যে গত ৩০ মার্চ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর তিন সদস্য নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন।

এর আগে ১১ মার্চ আশ্রয় নেন আরও ১৭৭ জন বিজিপি ও সেনা সদস্য। কয়েক দফায় বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন আরও ৩৩০ জন। যাদের গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। 
সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, ফেব্রুয়ারির শুরুতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন বিভিন্ন বাহিনীর ৩৩০ জন সদস্য। যাদের দ্রুত (১৫ ফেব্রুয়ারি) জলপথে মিয়ানমার সরকার ফেরত নিয়েছে। বর্তমানে আশ্রয় নেওয়া ২১২ সদস্যকে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার গাফিলতি করে চলছে। কেউ কেউ বলছেন- মিয়ানমার সরকার যেখানে সাড়ে ছয় বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও ফিরিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়েছে, সেখানে তাদের বাহিনীর সদস্যদের এত দ্রুত ফেরত নিলে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়তে পারে।

আবার কেউ কেউ বলছেন, সরকারী বাহিনীর সদস্য ও রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীকে ফেরত নেয়ার বিষয়ে বহু ফারাক রয়েছে। হয়ত শীঘ্রই অনুপ্রবেশকৃত সেনা-বিজিপি সদস্যদের ফেরত নিয়ে যেতে পারে মিয়ানমার। স্বাধীনতাকামী আরাকান আর্মি (এএ) ও জান্তা সরকারের মধ্যে যুদ্ধ চলমান। এ অবস্থায় প্রাণে বাঁচতে মিয়ানমার সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা এদেশে পালিয়ে আসছে।

×