ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

দাম কমানোর আশ্বাস ব্যবসায়ীদের

শুল্ক ছাড়ের পরও ভোগ্যপণ্যের বাজারে তেজ

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস

প্রকাশিত: ০০:১২, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪; আপডেট: ১১:৪৭, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

শুল্ক ছাড়ের পরও ভোগ্যপণ্যের বাজারে তেজ

কিছুরই প্রতিফলন নেই ভোগ্যপণ্যের বাজারে

রোজা এসেই গেল। সরকারের নানা উদ্যোগ ও নির্দেশনা, আমদানিতে শুল্কছাড়, ব্যবসায়ীদের দাম কমানোর আশ্বাস- কোনো কিছুরই প্রতিফলন নেই ভোগ্যপণ্যের বাজারে। পাইকাররা বলছেন, বাজারে সরবরাহ সংকট নেই, দাম বাড়বে না। অপরদিকে ক্রেতারা বলছেন, দাম তো যা বাড়ার আগেই বেড়ে গেছে। ‘দাম আর বাড়বে না’ এমন অভয় কেন? বাস্তবচিত্র হলো, খুচরা পর্যায়ে সবকিছুরই দাম বেশি। দ্রব্যমূল্যের তেজি অবস্থার মধ্যেই শুরু হতে যাচ্ছে মুসলমানদের সিয়াম সাধনার মাস।
ভোগ্যপণ্যের পাইকারি ও খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে কোনো সুখবর মিলছে না। ভালো সংবাদ বলতে একটাই, পণ্যের সংকট নেই। মানে টাকা হাতে থাকলে কেনা যাবে। দোকান থেকে ফেরত আসতে হবে না। কিন্তু স্বল্প আয়ের ক্রেতাদের কী হবে?  দরিদ্রদের জন্য ভিজিএফ এবং টিসিবি থাকছে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থা নি¤œমধ্যবিত্ত ও কিছুটা সম্মানজনক চাকরিতে থাকা ক্রেতারা, যারা না পারেন বিনামূল্যের চাল নিতে, না পারেন টিসিবি পণ্যের জন্য সড়কে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে। 
দেশে গত কয়েক বছর ধরে পরিলক্ষিত হচ্ছে মূল্যবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা। দাম বাড়ছেই। মাঝে কিছু কমলেও তা ১০ টাকা বেড়ে দুই টাকা হ্রাস। মূল্য বেড়ে এখন কয়েক বছর আগের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। এবার শীত মৌসুমেও কাঁচাবাজারে দরপতন হয়নি। শীত চলে গিয়ে এখন বসন্ত, আসছে গ্রীষ্ম। ফলে শীতের সবজি এবার আর কমমূল্যে পাওয়া গেল না। পেঁয়াজের দাম এখনই একশ টাকার ওপরে। ফলে আগামী দিনগুলোতে মূল্য পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে ঠেকে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ক্রেতাসাধারণ। 
ভোগ্যপণ্যের বৃহত্তম পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে যে তথ্য পাওয়া গেল, তাতে অন্তত মূল্য কমার কোনো সুখবর নেই। সকলের এক কথা- পর্যাপ্ত মজুত আছে, সরবরাহ ঠিক আছে, রোজায় দাম বাড়বে না। কিন্তু সবকিছু ঠিক থাকলে দাম না কমে ‘বাড়বে না’ আশ^াসে সন্তুষ্ট নন ভোক্তাসাধারণ। নতুন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রধান চ্যালেঞ্জ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, যা বলেছেন দায়িত্বশীল মন্ত্রীরা। শুল্ক কমানো, বাকিতে আমদানিসহ কিছু সুবিধা প্রদানের পাশাপাশি বাজার মনিটরিংয়ে কঠোরতার হুমকিও এসেছে। কিন্তু এর কোনো ইতিবাচক প্রভাবই দেখা যাচ্ছে না বাজারে। সবকিছু কিনতে হচ্ছে বাড়তি মূল্যে। 
রোজায় যে পণ্যগুলোর চাহিদা বেশি থাকে তার মধ্যে রয়েছে চিনি, ভোজ্যতেল, ডাল, মটর, ছোলা, খেসারি, খেজুর ও পেঁয়াজ। এরমধ্যে তেলের দাম বাড়তি হলেও বেশ কিছুদিন স্থির অবস্থায় আছে। বাকি সকল পণ্যের ক্ষেত্রেই উচ্চমূল্য। মূল্য পরিস্থিতির এমনই ওঠানামা যে, খুচরা ব্যবসায়ীরাও একসঙ্গে অধিক পণ্য নিতে সাহস পাচ্ছেন না। 
বুধবার খাতুনগঞ্জ আড়তদার কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন জনকণ্ঠকে জানান, মসুর ডাল মানভেদে প্রতিকেজি ৯১ টাকা থেকে ১২৮ টাকা।

চিনি প্রতি মণ (৩৭ কেজি) চার হাজার ৯৫০ টাকা, সয়াবিন তেল প্রতি মণ (খোলা) ৫৮০০ টাকা, পাম অয়েল প্রতি মণ ৪৮০০ টাকা, মটর ডাল প্রতি কেজি ৬৯ টাকা, ছোলা মানভেদে প্রতি কেজি ৮৭ থেকে ৯৪ টাকা ও খেসারি প্রতি কেজি ১০৮ থেকে ১১০ টাকা। 
খেজুরের দামে মানভেদে বিরাট ফারাক। তবে খুচরা পর্যায়ে গড়পড়তা যে খেজুর বিক্রি হয়ে থাকে সেগুলো প্রতি বস্তা (১০ কেজি) দুই হাজার ৫শ থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে এগুলো আগের খেজুর। আমদানির নতুন খেজুর এখনো পুরোপুরি আসেনি। নতুন খেজুর এলে দাম কিছুটা কমে আসবে, বলছেন ব্যবসায়ীরা। 
খুচরা ব্যবসায়ী দিদারুল আলম জনকণ্ঠকে জানান, তারা প্রতি কেজি মসুর ডাল বিক্রি করছেন মানভেদে ১১০ থেকে ১৬০ টাকায়। খোলা চিনি প্রতি কেজি ১৪৫ ও প্যাকেটজাত ১৫০ টাকা। সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৭০ এবং পাঁচ লিটারের কন্টেনার ৮২০ টাকা। মটর প্রতি কেজি ৮০ টাকা, ছোলা প্রতি কেজি ১১০ টাকা এবং খেসারির ডাল প্রতি কেজি ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খেজুরের দাম এবার গত বছরের চেয়ে বেশি। গত বছর যে মানের খেজুর প্রতি কেজি ৪শ টাকায় বিক্রি হয়েছিল তা এবার প্রায় ৮শ টাকা ছুঁয়েছে। 

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, রোজাকে সামনে রেখে ব্যবসায়ীদের প্রস্তুতি থাকে। পাঁচ থেকে ছয় ধরনের পণ্য এই এক মাসেই বিক্রি হয় সারা বছরের অর্ধেক। খুচরা ব্যবসায়ীরা এর মধ্যেই দোকানের জন্য পণ্য নিতে শুরু করেছেন। এই সময়ের মধ্যে অতি মুনাফা লাভের চেষ্টা যেমন থাকে, তেমনিভাবে অত্যধিক মজুত হয়ে গেলে এক ধরনের ঝুঁকিও থাকে। ফলে পণ্য আটকে রাখলে শেষ পর্যন্ত তা লাভজনক নাও হতে পারে। ফলে যা পণ্য রয়েছে তা অতি দ্রুতই মার্কেটে চলে আসবে। এর একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

তবে ভোক্তাদেরও একসঙ্গে অধিক পণ্য বা পুরো মাসের বাজার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সাধারণত দেখা যায়, দোকানে ক্রেতারা রোজার প্রথম সপ্তাহেই একসঙ্গে কেনাকাটা সেরে ফেলেন। দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে দোকানগুলোতে বেচাবিক্রি কমে যায়। তখন দামও আর আগের মতো থাকে না। বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী ধাপে ধাপে পণ্য কেনার অভ্যাসটা সকলকে গড়ে তুলতে হবে।

×