ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ময়মনসিংহে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে কাদের

হুঙ্কারে সরকারের পতন ঘটবে না

স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ

প্রকাশিত: ০০:৫৩, ৪ ডিসেম্বর ২০২২

হুঙ্কারে সরকারের পতন ঘটবে না

সাধারণ সম্পাদক এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতু ও সড়ক যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি বলেছেন, হুঙ্কার দিয়ে সরকার পতন ঘটানো যাবে না। তিনি ডিসেম্বর মাসে দলের নেতাকর্মীরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের পর আওয়ামী লীগের এবারের অঙ্গীকার হচ্ছে স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ। মন্ত্রী শনিবার দুপুরে ময়মনসিংহ সার্কিট হাউস মাঠে ময়মনসিংহ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেছেন।
মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি প্রতিপক্ষকে মোকাবিলায় পাড়া-মহল্লায় সতর্ক থাকার জন্য দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, খেলা হবে দুর্নীতি ও ভোট চুরির বিরুদ্ধে। রাজপথ, জনপথ, শহর-গ্রাম, পাড়া-মহল্লা সবখানেই দলের নেতা কর্মীদের সজাগ ও সতর্ক থাকবে হবে। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। হামলা হলে পাল্টা জবাব ও হামলা হবে কিনা- তা সময়ই বলে দেবে।
মন্ত্রী আরও বলেন, ১৫ আগস্টের সেনাপতি ছিলেন জিয়াউর রহমান। আর ২১ আগস্টে গ্রেনেড হামলার সেনাপতি ছিল তারই পুত্র তারেক রহমান। লন্ডন থেকে তারেক রহমান শুক্রবারও ঢাকার এক ক্যাডারের সঙ্গে কনভারসেশন করে বলেছে ‘তোমরা ঢাকার রাস্তা ছাড়বা না। শেখ হাসিনা পালানোর পথ খুঁজছে। তার মন্ত্রী এমপিরাও পালানোর পথ খুঁজছে’।
শনিবার দুপুর  ১২টায় স্থানীয় সার্কিট হাউস মাঠে জাতীয় ও দলের পতাকা উত্তোলনসহ শান্তির প্রতীক পায়রা ও বর্ণাঢ্য বেলুন উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন সাবেক মন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী এমপি। এর আগে জাতীয় সংগীদের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বের আনুষ্ঠানিকতা। পবিত্র কুরআন থেকে তেলওয়াত, গীতা ও ত্রিপিটক পাঠ শেষে শুরু হয় বক্তব্যের পালা।

শুরুতে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ, ১৫ আগস্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের শহীদ সদস্য, জেলখানায় জাতীয় চার নেতা হত্যাসহ বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে বিগত সময়ে ময়মনসিংহ জেলা ও মহানগর কমিটির নিহত সদস্যদের জন্য শোক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়।
সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি, বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপি। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম।

ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকার সভাপতিত্বে এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্ত এর সঞ্চালনায় সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন আহমদ হোসেন, শীফউল আলম চৌধুরী নাদেল, বাবু অসীম কুমার উকিল, মারুফা আক্তার পরি, রেমন্ড আরেং, গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এমপি, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ এমপি, সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু, ময়মনসিংহ সিটি মেয়র ইকরামুল হক টিটু, মনিরা সুলতানা মনি এমপি, ফাহমি গোলন্দাজ বাবেল এমপি ও নাজিম উদ্দিন আহমেদ এমপি।
শনিবারের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ময়মনসিংহ ছিল উৎসবের নগরী। পোস্টার, ব্যানার, তোরণ আর মিছিলের নগরী। উজ্জীবিত ছিল দলের  নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। শনিবার সকাল থেকেই নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ও জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে মিছিলসহ দলের কর্মী-সমর্থকরা নগরীর সার্কিট হাউস মাঠে সম্মেলনস্থলে আসতে শুরু করে। দুপুরের দিকে তীব্র খরতাপ উপেক্ষা করে সার্কিট হাউস মাঠে জমায়েত হয় নেতাকর্মী ও সমর্থকরা।

অনেকে রোদের তাপ থেকে বাচতে অবস্থান নেয় সার্কিট হাউস মাঠ সংলগ্ন ব্রহ্মপুত্র পারের ছায়াশীতল জয়নুল আবেদীন পার্ক ও আশপাশের সড়কে। কে হচ্ছে জেলা ও মহানগরের নেতা- এ নিয়ে ছিল সবার কৌতূহল। অবশেষে সম্মেলনের পর ঘোষণা করা হয় ময়মনসিংহের জেলা ও মহানগর কমিটি। গত ২০১৬ সালে সর্বশেষ সম্মেলনের ছয় বছর পর অনুষ্ঠিত হলো এবারের সম্মেলন।
এহতেশামুল সভাপতি, মোয়াজ্জেম সম্পাদক ॥ সম্মেলন শেষে ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এহতেশামুল আলমকে জেলা সভাপতি ও অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুলকে পুনরায় সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। ময়মনসিংহ সিটি মেয়র ইকরামুল হক টিটুকে মহানগরের সভাপতি এবং মোহিত রহমান শান্তকে পুনরায় সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। ময়মনসিংহ জেলার সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকাকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সভাপতি করা হয়েছে।
রাজশাহীতে বিএনপির সমাবেশ সুপার ফ্লপ ॥ বিশ^বিদ্যালয় রিপোর্টার জানান, রাজশাহীতে বিএনপির সমাবেশকে ‘সুপার ফ্লপ’ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উদ্দেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, শুধু একটি বিশ^বিদ্যালয় (ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়) ছাত্রলীগের সমাবেশের ছবিটা একটু দেখেন। ভোট চুরি যারা করে (বিএনপি) তারাই বলে ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনবে। বিএনপিকে কেউ বিশ^াস করে? বাংলাদেশের নিরীহ মানুষও বলে, বিএনপি থেকে সাবধান। এই ডিসেম্বরের বিজয়ের মাসে বিজয়ের শক্তিতে খেলা হবে।
শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের এ কথা বলেন। বিএনপির সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পছন্দ না হওয়ার কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৭ মার্চের ঘোষণা, পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ, মুক্তিবাহিনীর বিজয়ের সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ফখরুলের পছন্দ হয় না।

তিনি চান ৩৫ হাজার বর্গফুটের পল্টন। বেগম জিয়াও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মিটিং করেছেন, গত নির্বাচনে সমাবেশ করেছেন। ফখরুলের কেন পছন্দ হয় না? ধরা পড়ে গেছেন। স্বাধীনতা-মুক্তিযুদ্ধের বিশ্বাস আপনাদের কাছে নেই, এটা আপনারা আবারও প্রমাণ করেছেন। আপনারা আগুন, বোমা, লাঠি নিয়ে আসবেন, সেজন্যই পল্টন আপনাদের পছন্দ।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্দেশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ফখরুল সাহেব পল্টনকে আওয়ামী লীগ ভয় পায় না। আওয়ামী লীগ ভয় পায় আপনাদের আগুন সন্ত্রাস, লাঠি মজুত করাকে। আর আপনারা ঢাকা দখল করবেন? আমরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ললিপপ খাব? কত বড় সাহস! এখন কামাল হোসেনও নাচে। ট্যাক্স ফাঁকি, ইহুদি জামাতার মাধ্যমে টাকা পাচার করেছিল। এখন তিনিই বলেন, ‘শেখ হাসিনা বাইরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।’ শেখ হাসিনা আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পান না।
এদিকে নানা আয়োজন ও নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে ঢাবি ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার বিকাল সাড়ে ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার সামনে জাতীয় সংগীত ও দলীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সম্মেলন শুরু হয়। সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়। উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য, ঢাবি ছাত্রলীগ সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন সহ কেন্দ্রীয় ও ঢাবি শাখার নেতাকর্মীরা।
শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রদল বা অন্য কেউ অরাজকতা সৃষ্টি করতে চাইলে তাদের দাঁতভাঙা জবাব দিতে ছাত্রলীগ প্রস্তুত আছে দাবি করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেছেন, আমরা ধরি ধরি; ধরি না, ধরলে কিন্তু ছাড়ি না। তিনি বলেন, আজ যখন আওয়ামী  লীগ সরকার পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু টানেল ও মেট্রোরেলের মতো বড় বড় মেগাপ্রকল্প সম্পন্ন করেছে, সে সময় বিএনপির মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। উন্নয়নের কথা শুনলে তাদের গায়ে জ্বালা ধরে, তারা সহ্য করতে পারে না। ষড়যন্ত্রের জন্য তারা বার বার বিজয়ের মাসকে বেছে নেয়।

×