ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশালের সেই বিচারককে বদলির উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ২৬ জুলাই ২০১৭

বরিশালের সেই বিচারককে বদলির  উদ্যোগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ইউএনও তারিক সালমানকে নাজেহালের ঘটনায় বরিশালের মুখ্য মহানগর হাকিমকে বদলির জন্য সুপ্রীমকোর্টে প্রস্তাব পাঠিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ের এ চিঠি সুপ্রীমকোর্টে পৌঁছেছে বলে জানা গেছে। এ চিঠিতে বরিশালের মুখ্য মহানগর হাকিম আলী হোসাইনকে অন্যত্র বদলি করার কথা বলা হয়েছে। এ বিষয়ে সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার সাব্বির ফয়েজ সাংবাদিকদের বলেন, বরিশালের মুখ্য মহানগর হাকিমকে বদলির প্রস্তাব সুপ্রীমকোর্টে এসেছে। সুপ্রীমকোর্টের জেনারেল এ্যাডমিনিস্ট্রেশন কমিটি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে তা আইন মন্ত্রণালয়কে জানাবে। বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ওবায়েদ উল্লাহ সাজুর করা মানহানির মামলায় বরগুনা সদরের ইউএনও গাজী তারিক সালমানকে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় আলোচনা চলছে এ বিচারককে নিয়ে। বরিশাল সার্কিট হাউসে তার ৯৩ হাজার ৯৫০ টাকা বকেয়া থাকার ঘটনাও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তারিক সালমান বরিশালের আগৈলঝাড়ার ইউএনও থাকাকালে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রে বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃত করে ছাপিয়েছিলেন অভিযোগ করে গত ৭ জুন মামলা করেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ওবায়েদ উল্লাহ সাজু। ওই মামলায় সমন জারির প্রেক্ষাপটে ১৯ জুলাই তারিক সালমান আদালতে হাজির হলে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন মুখ্য মহানগর হাকিম মোঃ আলী হোসাইন। একই বিচারক দুই ঘণ্টা পর জামিন মঞ্জুর করেন বলে ইউএনও তারিকের ভাষ্য। তিনি জানান, আগৈলঝাড়া উপজেলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৮তম জন্মদিবস ও জাতীয় শিশুদিবস-২০১৭ উপলক্ষে আয়োজিত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় প্রথম ও দ্বিতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত দুই শিশুর আঁকা দুটি ছবি ব্যবহার করে স্বাধীনতা দিবসের আমন্ত্রণপত্রটি তৈরি করা হয়েছিল। তাকে আদালত প্রাঙ্গণে পুলিশের ধরে নেয়ার ছবি প্রকাশ হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। ওই ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিস্মিত হয়েছেন জানিয়ে তার উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম গণমাধ্যমকে বলেন, সেই ছবিতে বিকৃত করার মতো কিছু তারা দেখেননি বরং এটি একটি ‘সুন্দর কাজ’। এ প্রেক্ষাপটে ২১ জুলাই ওবায়েদ উল্লাহ সাজুকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করে আওয়ামী লীগ। তারিক সালমানকে নাজেহালের দিন বরিশালের আদালতে দায়িত্বরত পুলিশের ছয় সদস্যকেও সরিয়ে দেয়া হয়। এরপর ওবায়েদ উল্লাহ সাজু গত রবিবার মামলা প্রত্যাহার করে নিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, বঙ্গবন্ধুর ছবিটি যে শিশুর আঁকা- তা তার জানা ছিল না। মামলা করার সময় সাজু আদালতে বলেছিলেন, তার কাছে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের অনুমোদন আছে এবং তা তিনি পরে জমা দেবেন। কিন্তু তিনি তা না দেয়ায় রবিবার মামলা প্রত্যাহারের আবেদনের শুনানিতে অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম অমিত কুমার দে বাদীর ব্যাখ্যা চান। জবাবে সাজু বলেন, সেই কাগজপত্র তার জমা দেয়া হয়ে ওঠেনি। ইউএনও তারিক সালমন বলে আসছেন, ঘটনার দিন প্রথমে জামিন নামঞ্জুর করার পর তাকে প্রায় দুই ঘণ্টা কোর্ট হাজতে আটক রাখ হয়েছিল। কিন্তু বরিশালের সিএমএম মোহাম্মদ আলী হোসাইন ওই মামলার নথিসহ যে ব্যাখ্যা গত রবিবার সুপ্রীমকোর্টের রেজিস্ট্রারের দফতরে পাঠিয়েছেন, সেখানে বলা হয়, ইউএনওর জামিন আবেদন একটিবারের জন্যও নামঞ্জুর হয়নি। স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রে বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতির অভিযোগ ওঠার পর বরিশালের জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারের পক্ষ থেকেও তারিক সালমানকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছিল। পরে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও সুপারিশ করা হয়েছিল। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সোমবার সাংবাদিকদের জানান, ইউএনওর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার মতো কিছু তারা পাননি। এ কারণে বিষয়টির নিষ্পত্তি করে দেয়া হয়েছে। বরং তারিক সালমানের বিরুদ্ধে মামলা ও তার পরের ঘটনাপ্রবাহে আইনের কোন ব্যত্যয় ঘটেছে কিনা- তা খতিয়ে দেখতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ একটি তদন্ত কমিটি করেছে বলে জানান তিনি। সোমবারই বরিশালের জেলা প্রশাসক গাজী মোঃ সাইফুজ্জামান এবং বরগুনার জেলা প্রশাসক বশিরুল আলমকে প্রত্যাহার করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ফেরত নেয়া হয়। তাদের জায়গায় নিয়োগ দেয়া হয় নতুন দুজনকে।
×