ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অশ্রুসিক্ত চোখে ফেদেরারের বিদায়

প্রকাশিত: ২২:৩৯, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২

অশ্রুসিক্ত চোখে ফেদেরারের বিদায়

.

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ রজার ফেদেরারের চোখে পানি। পেছনে দাঁড়িয়ে অশ্রু সংবরণের চেষ্টা করছেন পেশাদার টেনিসে তার বড় ‘শত্রু’ রাফায়েল নাদাল। ‘ফেদাল’- এর সেই বন্ধুত্ব, আবেগের বিস্ফোরণে কেঁদে ফেলল গোটা টেনিস দুনিয়া। বিশ্বের ক্রীড়া ইতিহাসের অন্যতম সেরা মন খারাপের, সেরা মুহূর্তের ছবি হয়ে থাকবে এই ফ্রেম। লেভার কাপ চললেও শুক্রবার (স্থানীয় সময় রাতে) লন্ডনের ও’টু এরিনার মঞ্চ তৈরি ছিল ফেদেরারের জন্য। বন্ধু রাফাকে সঙ্গী করে দ্বৈতের ম্যাচ দিয়ে সুইস কিংবদন্তির দুই যুগের শেষ হলো এদিন। তবে শেষ ম্যাচটা জিতে নিজের সাম্রাজ্যকে বিদায় জানাতে পারেননি ২০ বারের গ্র্যান্ডস্ল্যাম চ্যাম্পিয়ন। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর টিম ওয়ার্ল্ডের ফ্রান্সেস টিয়াফো এবং জ্যাক সকের ফেদেরার-নাদাল জুটি হেরে গেছেন ৪-৬, ৭-৬ (৭/২), ১১-৯ ব্যবধানে। ম্যাচটা তো জয়-পরাজয়ের ছিল না, ছিল ফেদেরারের, ম্যাচটা ছিল ‘ফেদাল’-এর, ভক্তদের জন্য ম্যাচটা কান্নাভেজা চোখে বীর বিদায়ের।
ম্যাচ শেষে কোর্টে সাক্ষাতকার দেয়ার সময় অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে প্রথমেই রাফার কথা বললেন ফেদেরার, ‘রাফার সঙ্গে একই দলে খেলতে পেরে, সবার সামনে, সব কিংবদন্তিরা... ধন্যবাদ।’ পেশাদার টেনিস সার্কিটে দুই তারকার প্রথম সাক্ষাত হয়েছিল ২০০৪ সালে। দুই দশকে অনেক ঐতিহাসিক ম্যাচ উপহার দিয়েছেন দুজনে। মোট ৪০ দেখায় ২৪-১৬ ব্যবধানে এগিয়ে নাদাল। উপস্থিত নোভাক জোকোভিচ, এ্যান্ডি মারেসহ সবার সঙ্গে হাত মোলানোর এক পর্যায়ে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি ফেদেররা। বাচ্চাদের মতো হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন।

পাশে বসা নাদালও তখন নিজের অশ্রু সংবরণ করতে পারেননি। ফেদেরারের বিদায়ে একটি অধ্যায়ের শেষ হলো বলে মনে করেন রাফা, ‘আমাদের এই খেলার ইতিহাস অনন্য, এ মুহূর্তের সঙ্গী হতে পারটা আমাদের জন্য বিশেষ সম্মানের। দুজনে একসঙ্গে কত বছর ধরে কত কিছু ভাগ করে নিয়েছি। ফেদেরারের চলে যাওয়া মানে আমার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়েরও সমাপ্তি।’ শুধু নাদাল নন, লন্ডনের ও’টু এ্যারেনায় লেভার কাপের ম্যাচ খেলতে ও দেখতে আসা প্রত্যেকেই চোখ মুছতে দেখা গেছে। মুছবেনই বা না কেন, টেনিসের আকাশ থেকে ‘ফেদোরার’ নামের ধ্রুবতারাটা যে খসে পড়ল। অনেকটা সময় কাঁদার পর নিজেকে সামলে নিয়ে ফেদেরার বলেন, ‘আমি সুস্থ আছি, সুখে আছি, সবকিছু ভালই চলছে। এটা তো একেবারে শেষও নয়! আপনি জানেন, জীবন নিজের গতিতেই বয়ে চলে।’
টেনি খেলোয়াড় হিসেবে ২০ বার যে গ্র্যান্ডস্ল্যাম জয় করা যায়, সেটা বিশ্ব প্রথম দেখে ফেদেরারের হাত ধরে। সবচেয়ে বেশি সময় র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে থাকার রেকর্ডও তার দখলে। মাত্র ১৬ বছর বয়সে ১৯৯৮ সালে টেনিস কোর্টে অভিষেক হয়েছিল ফেদারের। দুই যুগের বেশি সময়ের ক্যারিয়ারে নিজেকে নিয়ে গিয়েছে সত্যিকারের কিংবদন্তিদের কাতারে। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে খেলেছেন ১৫২৭টি ম্যাচ। উইম্বলডনে রেকর্ড আট, ইউএস ওপেনে টানা পাঁচ, অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে ছয় ও ফরাসী ওপেনে এক, সবমিলিয়ে এক বিশ গ্র্যান্ডস্ল্যাম জিতেই বিদায় নিলেন এই সুইস তারকা।  বয়স হয়ে গিয়েছিল ৪১, ইনজুরিটাও পিছু ছাড়ছিল না অনেকদিন ধরেই। ২০২১ সালে উইম্বলডনের সেমিফাইনালের পর হাঁটুর চোট তাকে আর টেনিস কোর্টেই নামতে দেয়নি। হাঁটুর এই চোট অবশ্য নতুন নয়। এই চোটের সঙ্গে যুদ্ধ করেই শেষ কিছুদিন মাঠে নেমেছেন। অবশেষে আর হলো না, বুঝে গেলেন বিদায়ের সময় হয়েছে।

×