ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৪ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২

রেফারিদের দুঃখ-কষ্টের শেষ কোথায়?

মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল

প্রকাশিত: ০১:০২, ১৪ মে ২০২৫

রেফারিদের দুঃখ-কষ্টের শেষ কোথায়?

মাঠে এভাবেই নিয়মিত লাঞ্ছিত হচ্ছেন রেফারিরা

বাংলাদেশের ফুটবলে সমস্যার আরেক নাম যেন রেফারিং। প্রায়ই সামনে চলে আসে ম্যাচ পরিচালনাকারী এসব মানুষদের নানা সমস্যার কথা। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টি সামনে, সেটি আর্থিক সমস্যা। যে কারণে প্রায়ই ম্যাচ বয়কটের ডাক দিয়ে থাকেন রেফারিরা। এমন ডাক দিয়েছিলেন তারা গত সপ্তাহে।

প্রায় দুই কোটি টাকা বকেয়া নিয়েই তাদের এই আন্দোলন। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) থেকে শুরু করে ফেডারেশন কাপ, বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ (বিসিএল), প্রথম বিভাগসহ নিচের সারির লিগ পরিচালনার জন্য রেফারি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। 
কিন্তু বছরের পর বছর ধরে বয়ে চলা আর্থিক সমস্যা যেন কাটছেই না। ’নো বিল, নো গেম’ তত্বে কিছুটা সফলতা আসলেও সমস্যা যে কোটি টাকার। বকেয়া পরিশোধ না করলে ম্যাচ পরিচালনা করা হবে না এমন আলটিমেটামের পর টনক নড়ে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে)। তাতে প্রায় ১৬ টাকা পরিশোধের ঘোষণা আসে। এক সপ্তাহের মধ্যে সমপরিমাণ অর্থ পরিশোধের কথা বলে আপাতত সমস্যাকে আর বাড়তে দেওয়া হচ্ছে না।
কিন্তু দেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ লিগ পরিচালনা করে বছরের পর বছর ধরে বকেয়া রেখেও আবার ম্যাচ চালিয়ে নিচ্ছেন রেফারিরা। গত সপ্তাহে যখন নতুন করে বকেয়া নিয়ে আলোচনা হয় তখন বকেয়ার পরিমাণ ছিল দুই কোটি টাকার মতো। এ অবস্থায় ম্যাচ পরিচালনা থেকে নিজেদের বিরত রাখার পর বিপদে পড়ে সামান্য অর্থ পরিশোধ করা হয়।

এ কারণেই মুন্সীগঞ্জ, ময়মনসিংহ স্টেডিয়াম ও বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় তিন ভেন্যুতে একেবারে শেষ মুহূর্তে গিয়ে যে যার মতো পেরেছে সেই বাহন দিয়ে গিয়ে ম্যাচ পরিচালনা করেছেন তারা। পরিসংখ্যানের বিচারে ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ এ দুই মৌসুমের প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা বকেয়া রেখেও রেফারিরা প্রায় শেষ হওয়া মৌসুম শুরু করেছিল।

শীর্ষ লিগের ম্যাচ ছাড়াও বয়সভিত্তিক ক্লাব ফুটবল ও মহানগর লিগ কমিটির অধীনস্ত লিগের ম্যাচসমুহ পরিচালনা করে এই বকেয়া বুঝে পাননি মাঠের অভিভাবকরা। আন্দোলনের পর ম্যাচ বয়কটের খুব কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়ার পর যে অর্থ দেওয়া হচ্ছে তাতে সন্তুষ্ট ছিলেন না রেফারিররা। কারণ বাফুফে তাদের জানিয়েছে ফেডারেশন কাপের পুরো টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।
মোট রেফারি ৫০ জনের বেশি থাকলেও ফেডারেশন কাপ পরিচালনা করেছেন ২৫ জন। অথচ সমানসংখ্যক রেফারির বকেয়া ছিল। তারা মূলত পুরো ৫০ জনের বকেয়া পরিশোধ চাইছেন। যদিও রেফারিজ বিভাগের প্রধান আজাদ রহমান রেফারিদের অভ্যন্তরীণ বকেয়া গ্রুপে অর্থ প্রদানের রসিদ দিয়ে ম্যাচ পরিচালনা করানোর চেষ্টা করেছেন। সেই এলটমেন্টে রেফারিরা সাড়া না দেওয়ার অনেকটা বাধ্য হয়েই রেফারিদের সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলেন বাফুফের দুই সহ-সভাপতি।

মূলত তাদের অনুরোধ রাখতেই শেষ পর্যন্ত ম্যাচ পরিচালনা করতে রাজি হন তারা। এখানে আগের দিনের এলটমেন্টে নয়, যারা ভেন্যুর কাছে ছিলেন মূলত তারাই ম্যাচ পরিচালনা করেছেন। কেউ মটর সাইকেলে, কেউ সিএনজিতে আবার কেউবা প্রাইভেটকার ভাড়া করে ম্যাচ চালাতে ভেন্যুতে পৌঁছান। বাফুফের সহসভাপতি ফাহাদ করিম এখন বিষয়টি দেখছেন। তাতেই সমাধানের আশা বাড়ছে।
এক সপ্তাহ ধরে আলটিমেটাম দিলেও বাফুফে শুরুতে কোনো গুরুত্ব দেয়নি। এমনকি রেফারিদের সঙ্গে কোনো প্রকার আলোচনারও প্রয়োজন বোধ করেননি তারা। মূলত এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিলেন অনেক রেফারি। বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়ালের নেতৃত্বাধীন বাফুফের বর্তমান কমিটি দায়িত্ব নিলেও রেফারিজ কমিটি গঠন করা হয়নি। পাশাপাশি বাফুফের রেফারিজ বিভাগের প্রধান আজাদ রহমানের দিকেই আঙ্গুল তুলেছেন কেউ কেউ। তার কারণেই নাকি সমস্যার স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না।

যখনই আলটিমেটাম দেওয়া হয় তখন কিছু অর্থ দিলেও পরে আর এসব নিয়ে কাজ করা হয়না। রেফারিজ কমিটির প্রধান হিসেবে যে দায়িত্ব পালন করার কথা সেটি করছেন না বলেই এবার আজাদের কথায় ভরসা পায়নি রেফারিরা। এর আগে গত ৯ এপ্রিল বাফুফে সভাপতির সঙ্গে বৈঠকে সম্মানী প্রদানের একটা সময় দিলেও এই সময়ের মধ্যে অর্থ পায়নি রেফারিরা। 
সাধারণ সম্পাদক একাধিকবার সময় দিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন। এরপরই বিসিএল চলতি লিগের প্রথম পর্বের ৪৫ ম্যাচ, ফেডারেশন কাপ সম্পূর্ণ, চলতি বিপিএল এর প্রথম পর্বের ২০ ম্যাচের বিল একসঙ্গে পরিশোধ করার দাবি ছিল রেফারিদের।

×