ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শেষ আটের দ্রুপদী লড়াইয়ে ফ্রান্স-ইংল্যান্ড

জাহিদুল আলম জয়

প্রকাশিত: ২২:২৭, ৯ ডিসেম্বর ২০২২

শেষ আটের দ্রুপদী লড়াইয়ে ফ্রান্স-ইংল্যান্ড

ম্যাচ সামনে রেখে অনুশীলনে ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের ফুটবলাররা

বিশ্বকাপের ইতিহাসে মুখোমুখি লড়াইয়ে কখনো ইংল্যান্ডকে হারাতে পারেনি ফ্রান্স। দুদলের সার্বিক লড়াইয়েও অনেক এগিয়ে ইংলিশরা। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোর হিসেবে আবার ফরাসিদের দাপট। এমন আবহ আর প্রেক্ষাপট সামনে রেখে চলমান কাতার বিশ্বকাপের হাইভোল্টেজ কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স ও গত আসরের সেমিফাইনালে খেলা ইংল্যান্ড। কাতারের রাজধানী দোহার আল খোরের আল বায়াত স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় আজ রাত ১টায়।
ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স দুদলই দাপটের সঙ্গে এগিয়ে চলেছে। শেষ ষোলোতে ইংলিশরা ৩-০ গোলে সেনেগালকে ও ফ্রান্স ৩-১ গোলে হারিয়েছে পোল্যান্ডকে। দুদলই সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে সেমিফাইনালে খেলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। ইতিহাস জানান দিচ্ছে, কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে  ইংল্যান্ডের বিদায় যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। এর আগে ১৯৫৪, ১৯৬২, ১৯৭০, ২০০২ ও ২০০৬ বিশ্বকাপে শেষ আট থেকে বিদায় নিতে হয়েছে ইংলিশদের। শেষ আটটি বিশ^কাপের ছয়টিতেই তাদের ইউরোপিয়ান কোনো দলের সঙ্গে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে তল্পিতল্পা গোছাতে হয়েছে। কোনো গোল হজম না করে বিশ্বকাপে তিনটি ম্যাচ পার করা ইংল্যান্ডের জন্য অবশ্যই প্রশংসার। কোচ গ্যারেথ সাউথগেটের সামনে এখন আরও একটি সুযোগের হাতছানি। থ্রি লায়ন্সের প্রথম কোচ হিসেবে তিনি হতে পারেন ইংল্যান্ডকে একের অধিক সেমিফাইনালে পৌঁছে দেয়ার কারিগর।

অন্যদিকে গত সাতটি আসরের পাঁচটিতেই কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছে ফ্রান্স। এর মধ্যে আছে শেষ তিনটি বিশ^কাপ। কোচ দিদিয়ের দেশমের দল শেষ দশটি নকআউট পর্বের আটটিতেই ইউরোপের দলের বিরুদ্ধে জয় পেয়েছে। এমন সাফল্যের পরও সমালোচনার কিছু দিক আছে তাদের। কেননা এবারের বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত নিজেদের খেলা চার ম্যাচেই গোল হজম করেছে ফ্রান্স। এই বিষয়টি নিয়ে বেশি করে ভাবতে হচ্ছে চ্যাম্পিয়নদের। এর আগে ১৯৬৬ ও ১৯৮২ বিশ^কাপে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুইবার খেলে প্রতিবারই হেরেছে ফ্রান্স। কিন্তু সাম্প্রতিক পারফরমেন্সে এগিয়ে তারা। সবশেষ আটটি ম্যাচে বর্তমান বিশ^চ্যাম্পিয়নদের বিরুদ্ধে মাত্র একটিতে জয় পেয়েছে ইংলিশরা। আগের ম্যাচে রক্ষণভাগে তিনজনকে রাখা নিয়ে অনেকেই সাউথগেটের সমালোচনা করেছেন। কিন্তু ৫২ বছর বয়সী ইংলিশ কোচ তার পরীক্ষিত ৪-৩-৩ ফর্মেশনেই অটল থাকবেন বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। এ পর্যন্ত এই ফর্মেশনে খেলেই ইংল্যান্ড সফল হয়েছে। মধ্যমাঠে আরও একবার হেন্ডারসেনর সঙ্গে রাইস ও বেলিংহ্যামকেই দেখা যাবে বলে জানা গেছে।  
অন্যদিকে গোঁড়ালিতে কিছুটা অস্বস্তি বোধ করায় এমবাপে ফরাসিদের সবশেষ অনুশীলনে আসেননি বলে গুঞ্জন রটে। যদিও বিষয়টি পরবর্তীতে নাকচ করে জানানো হয়েছে, সংবাদটি রং মিশিয়ে পরিবেশন করা হয়েছে! অর্থাৎ এমবাপে অনুশীলনে ফিরেছেন এবং তাকে নিয়েই সেমির টিকিট পাওয়ার লড়াইয়ে নামবে ফরাসিরা। রাশিয়া বিশ্বকাপেই নিজের জাত চেনানো এমবাপে এখন পর্যন্ত যে নয়টি বিশ্বকাপ ম্যাচে মূল একাদশে খেলেছেন তার সবটিতেই জয় পেয়েছে জিনেদিন জিদানের দেশ। আজ রাতেও এ ধারাবাহিকতা ধরে রাখার আশা তাদের। এখন পর্যন্ত পাঁচ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা এমবাপে যে কতটা ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারেন সেটা সবারই জানা। ইংলিশরাও তাই এই গতি তারকাকে আটকাতে ছক কষছেন। এমনটাই জানিয়েছে ইংল্যান্ড কোচ গ্যারেথ সাউথগেট।
তিনি বলেন, এমবাপে বিশ্বমানের একজন খেলোয়াড়। সে সবসময় দলের চাহিদা অনুযায়ী নিজেকে উপস্থাপন করে। সেরা খেলোয়ড়রা এমনটাই করেন। আর আমরা এই চ্যালেঞ্জটারই মুখোমুখি হতে চলেছি। আমরা তাকে আটকানোর সবরকম চেষ্টা করবো। ইংলিশদের এমন পরিকল্পনায় আবার জল ঢালতে প্রস্তুত ফরাসিরা। ইংলিশ ডিফেন্ডার কাইল ওয়াকারের একটি বক্তবকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ফরাসি মিডফিল্ডার ইউসুফ ফোফানা বলেছেন, তোমরা পারলে এমবাপেকে ঠেকাও। ১৯৬৬ সালে নিজেদের একমাত্র বিশ্বকাপ জেতা ইংল্যান্ডের সেমিফাইনালে যাওয়ার পথে সবচেয়ে বড় বাধা হতে পারেন এমবাপেই। কেবল বিশ্বকাপেই নয়, ক্লাব ফুটবলেও চলতি মৌসুমে দারুণ খেলছেন ২৩ বছর বয়সী এই ফুটবলার। বৈশ্বিক আসরের বিরতির আগ পর্যন্ত ফরাসি লিগ ওয়ান ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও সর্বোচ্চ গোল তার। ফরাসি মিডফিল্ডার ফোফানা তাই আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলেন, যদি ওয়াকার (ইংলিশ ডিফেন্ডার) এমবাপেকে আটকাতে পারে তাহলে তার জন্য ভালো। কিন্তু লিগ ওয়ানের অন্য ১৯টি দল ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগের দলগুলো এই সমাধানের জন্য অপেক্ষা করছে। মাঠেই সত্যটা বেরিয়ে আসবে। এমবাপের ওপর আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে। তিনি আরও বলেন, এমবাপে সংবাদপত্র পড়ে না, আপনাদের জন্য দুঃখিত! আপনারা যা লেখেন তা সে পড়ে না। সে তার খেলায় মনোনিবেশ করে। দলের জন্য কি করতে হবে তার মনোযোগটা শুধু সেখানেই।

 

 

সম্পর্কিত বিষয়:

×