ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাফুফে ভবনে জাঁকজমকের সঙ্গে দলবদল সম্পন্ন করলো মোহামেডান

প্রকাশিত: ২১:৫৯, ৪ নভেম্বর ২০২২; আপডেট: ২২:০৩, ৪ নভেম্বর ২০২২

বাফুফে ভবনে জাঁকজমকের সঙ্গে দলবদল সম্পন্ন করলো মোহামেডান

বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের উপস্থিতিতে দলবদল সম্পন্ন মোহামেডানের

Òফুটবল জাগরণে মোহামেডানের বিকল্প নেই“, Òএগিয়ে যাও মোহামেডান, জান লাগাও মোহামেডান“, Òস্বাগতম মোহামেডান পরিবার, সাদাকালো উল্লাসে“, Òমোহামেডানের সাফল্য কামনায়”, Òমোহামেডানের সাথে প্রতারণা ও চুক্তি ভঙ্গকারী প্রতারক খেলোয়াড়ের (রাফি, রহমত, নাঈম) অবিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি“ ... আজ শুক্রবার বিকেলে মতিঝিলে অবস্থিত মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে গিয়ে এমনই সব বাহারি ব্যানারের ভাষা চোখে পড়লো। ক্লাব প্রাঙ্গণে প্রচুর সমর্থকদের ভিড়। প্রখ্যাত ক্রীড়ালেখক ও স্থির আলোকচিত্রী নাজমুল আমিন কিরনের “কিরন ডেস্ক“-এর উদ্যোগে ক্লাবের দেয়ালজুড়ে প্রচুর ডিজিটাল ব্যানার লাগানো হয়েছে অস্থায়ীভাবে। যেন আর্ট গ্যালারিতে স্থিরচিত্র প্রদর্শনী। এতে আছে মোহামেডানের বিভিন্ন খেলার সাফল্যের স্থিরচিত্র, তারকা কোচ-খেলোয়াড়দের স্মরণীয় সব দৃশ্য।   

দলগত শিরোপা জিততে হলে চাই ভাল দলগঠন। এজন্য চাই দক্ষ, কার্যকর ও কুশলী ফুটবলার। সেই সঙ্গে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও কিছুটা ভাগ্যের পরশও। আবারও চলে এসেছে নতুন মৌসুম। ফুটবলাররা আবারও ব্যস্ত হয়ে পড়বেন। তবে তার আগে কিছু আনুষ্ঠানিকতা বাকি। সেটা হচ্ছে নতুন মৌসুমের দলবদল। শুক্রবার দলবদল (৩২ জনের দল) করে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। উৎসবমুখর পরিবেশে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে, ছয়টি ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) ভবনে সমথর্কবেষ্টিত হয়ে প্রবেশ করেন মোহামেডানের খেলোয়াড়, কোচিং স্টাফ এবং কর্মকর্তারা। সম্মেলন কক্ষে মোহামেডানের হেড কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক বলেন, Òএবার আমরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো দল গড়েছি।“ 

মোহামেডান দলবদল সম্পন্ন করতে বাফুফে ভবনে এসেছিল ছয়টি ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে


একই কথা বলেছেন মোহামেডানের ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মো. আলমগীরও, Òআমরা ভালো দল গড়েছি। এই দল নিয়ে অন্তত দুটি ট্রফি এবার আমরা ঘরে তুলবো।“
মোহামেডান লিগে সর্বশেষ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ২০০২ সালে। আর সর্বশেষ শিরোপা জিতেছে ২০১৪ সালে স্বাধীনতা কাপে। আগের মৌসুমগুলোতে মোহামেডান দলগঠন করেছিল সেরা পাঁচে থাকার জন্য। তখন শিরোপা ভাবনা ছিল না। এ প্রসঙ্গে কোচ মানিকের ভাষ্য, Òএ বছর প্রথম থেকেই আমাদের লক্ষ্যটা একটু ভিন্নই ছিল। সবাই বলছিল আমরা ৫-৬ নম্বরের জন্য টিম করছি। এমন একটা কথা উঠেছিল। এই বছর আমাদের লক্ষ্য ছিল চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইট দেওয়ার জন্য দল করবো। সে লক্ষ্য নিয়েই আমাদের দলগঠন করা। আমরা গত বছরের টিম থেকে ভালো খেলোয়াড়দের রেখে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেই। তারপর অন্য ক্লাব থেকে খেলোয়াড় এনে ভালো দল করার চেষ্টা করি। কাউকে পেয়েছি, কাউকে পাইনি। আমাদের সেরা যে তিন খেলোয়াড় চেয়েছিলাম, তাদের এখন পর্যন্ত পাইনি। তাদের পাবো প্রত্যাশা করে আমরা আজ বাফুফের কাছে ৩২ খেলোয়াড়ের তালিকা জমা দিলাম। ওই তিনজনের জন্য আমরা এখনো অপেক্ষায়।“ 
গত মৌসুমের ১৩ ফুটবলারকে ধরে রেখেছে সাদাকালো বাহিনী। ১৪ নতুন খেলোয়াড়। ব্রাজিল, ভেনিজুয়েলা, ইরান, মালি ও উজবেকিস্তান-এই পাঁচ দেশের ৫ ফুটবলার এবার খেলবে মোহামেডানে। এদের মধ্যে মালির সুলেমানে দিয়াবাতে দলের অধিনায়ক। তিনি আগের মৌসুমেও এই দলে খেলেছেন। নতুনদের একজন আলমগীর কবির রানা। বসুন্ধরা কিংস থেকে যোগ দিয়েছেন মোহামেডানে। এই ক্লাবে তিনি ২০০৯ সালেও খেলেছিলেন। মাঝে মুক্তিযোদ্ধা, শেখ জামাল ও শেখ রাসেলেও খেলেছেন। ৩০ বছর বয়সী রানা জনকণ্ঠকে বলেন, Òআমরা যারা লোকাল প্লেয়ার আছি, তারা হচ্ছে উনিশ-বিশ। গত মৌসুমে মোহামেডান হারিয়েছিল কিংসকে। সেই মোহামেডানেই এবার এসেছি। ভালোমানের তিন বিদেশী খেলোয়াড় পেলে আমরা ব্যালেন্সড দলে পরিণত হব এবং এই দল নিয়ে এই মৌসুমের সব শিরোপা জেতার জন্য চেষ্টা করতে পারবো। শুরুটা করতে চাই স্বাধীনতা কাপ দিয়ে। এই আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়ে মোহামেডানের আট বছরের শিরোপাখরার অবসান ঘটাতে চাই।“

ব্যাতিক্রমধর্মী সমর্থকগোষ্ঠী মহাপাগলের কজন মোহামেডান ফ্যান ব্যানার নিয়ে বাফুফে ভবনের সামনের মাঠে 

ব্যতিক্রমধর্মী সমথর্কগোষ্ঠী Òমহা পাগল“-এর প্রতিষ্ঠাতা-কর্ণধার টি ইসলাম তারিক বলেন, Òগতবারের চেয়ে এবারের দল নিঃসন্দেহে ভালো হয়েছে। তবে রাফি, রহমত ও নাঈম এই তিন খেলোয়াড়ের অনুপস্থিতিতে মোহামেডানের অনেক ক্ষতি হয়েছে। লোকাল প্লেয়াররা গত ৩/৪ বছর ধরে একসাথে খেলছে। তারা ক্লাবে সেট হয়ে গেছে। এদের সঙ্গে নতুন যারা এসেছে, তাদের সঙ্গে কম্বিনেশনটা খারাপ হবে না। সেই সঙ্গে বিদেশী যারা এসেছে, তাদের প্র্যাকটিস দেখে চারজনকে ভালো মনে হয়েছে। সবাই মিলে যদি সার্ভিস দিতে পারে এবং পরীক্ষিত ও লাকি কোচ মানিকের অধীনে যদি পুরো টিম যদি সমন্বিতভাবে চেষ্টা করে, তাহলে মোহামেডান চ্যাম্পিয়ন ফাইট দিতে পারবে। আর আমরা মহাপাগল কিন্তু মোহামেডানের দুঃসময়ে আগেও তাদের সঙ্গে ছিলাম, এখনও আছি, ভবিষ্যতেও থাকবো। সমর্থকরা যেন ঝিমিয়ে না পড়ে, তাদের উজ্জীবিত করতে মহাপাগল সবসময় থাকবে।“   

Òআমরা আজকে খুব জাঁকজমকপূর্ণভাবে দলবদল করতে এসেছি। যাতে মনে হয় ফুটবলের যৌবন ফিরে আসছে। একসসময় আবাহনী ও মোহামেডানের খেলায় তিন দিন আগে থেকে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো শত শত ভক্ত। টিকেট পাওয়া যেত না। এই যে মোহামেডান ও আবাহনীর মধ্যে টান টান উত্তেজনা থাকতো, তা এখন আর নেই। সেই দিনগুলো নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। তাই মনে করি আজ এই দলবদলের মধ্য দিয়ে সেই দিন ফিরে আসবে। আমরা চেষ্টা করবো ভাল দল গড়তে। যাতে দর্শকরা আগের মতো স্টেডিয়ামমুখো হয়“, দলবদল করতে এসে কথাগুলো বলেন মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ডিরেক্টর ইন-চার্জ অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এবং জাতীয় পার্টির সাংসদ কাজী ফিরোজ রশীদ। এ সময় বাফুফের সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিন, মোহামেডানের পরিচালক শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন-এমপি উপস্থিত ছিলেন।

বেলা সাড়ে ৩টা থেকেই বাদ্যযন্ত্র বাজতে থাকে মোহামেডান ক্লাবে। মাথায় সাদা-কালো ব্যান্ড, হাতে প্ল্যাকার্ড হাতে হাজারখানেক সমর্থক বাফুফেতে এসে হাজির হন। প্রকৌশলী গোলাম মো. আলমগীর বলেন, Òআজ শুক্রবার সত্বেও যাতে চাপ না থাকে সেজন্য এসেছি। এতে বাফুফের সভাপতি সাহেবও রাজী হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, মোহামেডান ও আবাহনী যদি ফুটবল খেলে, তাহলে ফুটবল এগুবে। সেই কথাকে গুরুত্ব দিয়ে সবাই সাদা-কালো শিবিরকে উজ্জীবিত করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। অনেকে বলে মোহামেডান ক্লাবে চার-পাঁচটা সমর্থক গোষ্ঠী। আসলে আজ সবাই এক হয়ে ক্লাবের দলবদলে এসেছে।” 

×