সিকান্দার রাজা
সিকান্দার রাজার জীবন যেন হলিউড সিনেমার কোনো নায়কের চরিত্র। জন্ম পাঞ্জাবের শিয়ালকোটে। শৈশবে স্বপ্ন দেখতেন যুদ্ধ বিমানের পাইলট হবেন। সেই লক্ষ্যে পাকিস্তান এয়ার ফোর্স (পিএএফ) কলেজে পড়াশোনাও করেছিলেন। যদিও চোখের সমস্যার কারণে সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিতে পারেননি। সেই কষ্ট ভুলতে চেয়েছিলেন সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে। সেটাও পূরণ হয়নি। জীবনের স্রোত তাকে বানিয়েছে বাইশ গজের সৈনিক। যেখানে ব্যাট-বল হাতে যুদ্ধ করছেন জিম্বাবুইয়ের হয়ে। ক্রিকেটে আফ্রিকান দেশটির সোনালি সেই সময় আর নেই।
কিন্তু রাজকীয় নৈপুণ্যে রাজা বুঝিয়ে দিচ্ছেন তিনি ফিরে এসেছেন এ্যান্ডি ফ্লাওয়ার, গ্র্যান্ট ফ্লাওয়ার, এ্যালিস্টার ক্যাম্পবেলের ক্লোন হয়ে! ধুঁকতে থাকা দলটির হয়ে এক হাতেই বদলে দিচ্ছেন দৃশ্যপট। টানা ১৯ জয়ে উড়তে থাকা বাংলাদেশকে মাটিতে নামিয়ে এনেছেন ৩৬ বছর বয়সী অলরাউন্ডার। সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ৩০৩ রান টপকে জিম্বাবুইয়ের জয় ৫ উইকেটে। অপরাজিত ১৩৫ রানের দুর্দান্ত ইনিংসে নায়ক সেই অকুতোভয় যোদ্ধা।
‘ক্রিকেটে নিজে ভালো করার এবং দলকে জেতানোর চাপ আছে। মিথ্যা বলবো না, আমি এয়ার ফোর্স ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছি, এটা অবশ্যই আমাকে সাহায্য করে। আমি কখনোই হাল ছেড়ে দেই না। আমি আঘাত পাই, আমাকে আঘাত পেতে হয়, আঙ্গুল ভাঙ্গে, পায়ের আঙ্গুল ভাঙ্গে, আরও কত কিছু হয়। এগুলো আমি পরোয়া করি না।’ বলেন রাজা। বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৬ রানে ২ এবং ৬২ রানে ৩ উইকেট হারানো জিম্বাবুইয়ের অবিস্মরণীয় জয়ের কারিগর দারুণ সঙ্গ পেয়েছেন ইনোসেন্ট কাইয়ার কাছ থেকে। দুজনেই হাঁকিয়েছেন সেঞ্চুরি।
চতুর্থ উইকেটে যোগ করেছেন রেকর্ড ১৯২ রান। ১২২ বলে ১১ চার ও ২ ছক্কায় ১১০ রান করে আউট হয়েছেন কাইয়া। আর ১০৯ বলে ৮ চার ও ৬ ছক্কায় অপরাজিত ১৩৫ রান করে দলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন রাজা। শুরুতেই খাদের কিনারায় চলে যাওয়া দলকে কেবল একজন যোদ্ধাই পারেন এভাবে উদ্ধার উদ্ধার করতে,‘ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয় সাড়ে তিন বছর পাকিস্তান এয়ার ফোর্স কলেজে কাটানো আমাকে দারুণভাবে সাহায্য করে। আমার ভেতরে সবসময় লড়াকু মানসিকতা থাকে। আমি হয়ত যুদ্ধ বিমানের পাইলট হতে পারিনি। কিন্তু একজন মানুষ হিসেবে আমি সবসময়ই একজন যোদ্ধা। মানসিক ও শারীরিক প্রশিক্ষণগুলো এখন আমাকে পথ দেখাচ্ছে’- যোগ করেন তিনি।
৩০৪ রান করে জয় পাওয়া সবসময়ই কঠিন। অথচ রান চেজ করতে নামার আগেই রাজা সতীর্থদের জানিয়েছিলেন, অন্তত তিন ওভার আগে এই ম্যাচ জিততে চান তিনি,‘আমরা চেঞ্জিং রুমে একসাথে হলাম। ব্যাটসম্যানদের একসঙ্গে দাঁড় করিয়ে বললাম, ইনশাল্লাহ আমরা এই ম্যাচটা ৩ ওভার হাতে রেখেই জিতব।’ ম্যাচসেরার পুরস্কার নিতে গিয়ে রাজা আরও যোগ করেন,‘আপনারা জানেন, আমি এমন একজন মানুষ যে কিনা পরিসংখ্যান দেখতে পছন্দ করি। গতকাল একটি পরিসংখ্যান চোখে পড়ে।
আমি একটি আর্টিকেল পড়ছিলাম, যেখানে বলা হয়েছে সম্ভবত বাংলাদেশের বিপক্ষে আমরা ২০ ওয়ানডে ম্যাচে (প্রকৃত ১৯টি) জয় পাইনি। আমি এটা দেখলাম। মনে হচ্ছিল, যদি জিততে পারি, দারুণ হবে।’ রাজা বলেন, ‘আমার সেঞ্চুরির পরও যদি দল হারত, তাহলে সেই সেঞ্চুরির কোনো দাম থাকত না। জিম্বাবুইয়েকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়তে পেরেছি, এ জন্য খুবই ভাল লাগছে।’ তবে বাংলাদেশকেও সমীহ করছেন তিনি, ‘আমরা এটা অস্বীকার করতে পারি না যে বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশ একটা বড় দল। তারা সম্প্রতি ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে এখানে এসেছে, বিশ্বকাপের সুপার লীগের পয়েন্ট টেবিলে দ্বিতীয় স্থানে আছে। আমি মোটেই বাংলাদেশকে অসম্মান করতে পারি না। ওয়ানডেতে তারা অনেক শক্তিশালী।’
৮ বছরের ক্যারিয়ারে ১৭ টেস্ট, ১১৫ ওয়ানডে ও ৫৮ টি২০ খেলা রাজা দারুণ ছন্দে আছেন। সদ্য টি২০ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে মূল পর্বের প্রাথমিক রাউন্ডে জায়গা করে নিয়েছে জিম্বাবুইয়ে। যেখানে দুরন্ত অলরাউন্ড নৈপুণ্যে টুর্নামেন্টসেরার পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।