ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আত্মবিশ্বাসই মরক্কোর বড় শক্তি ॥ কোচ ওয়ালিদ

শাকিল আহমেদ মিরাজ

প্রকাশিত: ২২:১৬, ৯ ডিসেম্বর ২০২২

আত্মবিশ্বাসই মরক্কোর বড় শক্তি ॥ কোচ ওয়ালিদ

.

এফ-গ্রুপে মরক্কোর সঙ্গে ছিল সোনালি প্রজন্মের বেলজিয়াম, গত বিশ্বকাপের ফাইনালিস্ট ক্রোয়েশিয়া ও ৩৬ বছর পর শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে ফেরা কানাডা। বেলজিয়াম আর কানাডাকে কেবল বিদায় করেই নয়, ক্রোয়েশিয়াকে টপকে গ্রুপসেরা হয়ে শেষ ষোলোতে উঠে আসে মরক্কো। সেখানে সাবেক চ্যাম্পিয়ন স্পেনকে হারিয়ে গড়ে ইতিহাস। দক্ষিণ আফ্রিকান অঞ্চলের দেশটি প্রথমবারের মতো নাম লেখায় কোয়ার্টার ফাইনালে। ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর পর্তুগালের বিপক্ষে আজ তাদের ঐতিহাসিক সেই ম্যাচ। এবার ইতিহাসকেও ছাড়িয়ে যেতে চান ওয়ালিদ রেগ্রাগুই।

র‌্যাঙ্কিং, হেড টু হেড বা ইউরোপ-আফ্রিকান স্টাইল নয়, মরক্কো কোচের বড় শক্তি নিজেদের ওপর বিশ্বাস। ‘পৃথিবীতে কিছু অর্জনের জন্য সবার আগে আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে যে, আপনি সেটা পারবেন। কাতার বিশ্বকাপের শুরুতে হয়তো কেউ ভাবেনি আমরা এতদূর আসতে পারব, কিন্তু আমি ছেলেদের মধ্যে এই বিশ্বাস ছড়িয়ে দিতে চেয়েছি। পর্তুগাল বড় দল কিন্তু নিজেদের ওপর বিশ্বাসটাই আমাদের বড় শক্তি।’ বলেন মরক্কো কোচ। ওয়ালিদের দল আসর শুরু করেছিল ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে। এরপর র‌্যাঙ্কিংয়ের দ্বিতীয়সেরা ও অন্যতম ফেভারিট বেলজিয়ামের বিপক্ষে ২-০ গোলের জয়ে লাইমলাইটে উঠে আসে মরক্কো। কানাডাকে ২-১ গোলে হারিয়ে হয় গ্রুপসেরা। বেলজিয়ামকে হারানোর পরই কোচ বলেছিলেন, ‘আমরা জানতাম যদি শতভাগ নিংড়ে দেয়া না যায়, তাহলে জেতা অসম্ভব। তবে ভক্ত-সমর্থক-অনুরাগীদের ভালোবাসা-উৎসাহ, খেলোয়াড়দের আপ্রাণ প্রচেষ্টা এবং টিম স্পিরিট... সব মিলিয়ে আমরা যে কোনো কিছুই করতে পারি। তবে আমাদের লড়াই এখনো শেষ হয়ে যায়নি। অভীষ্ট লক্ষ্যের দিকে মনোযোগী হলে, ইতিবাচক থাকলে অবশ্যই আমরা সফলকাম হবো।’ শেষ ষোলোয় শক্তিশালীয় স্পেনকে নির্ধারিত ৯০ ও অতিরিক্ত ৩০ মিলিয়ে ১২০ মিনিট পর্যন্ত গোলশূন্য রাখতে মরক্কানদের পরিকল্পনা যে সফল ছিল। টাইব্রেকে সেটিই প্রমাণিত হয়। যেখানে ৩-০তে জয়ের পথে নায়ক বনে যান গোলরক্ষক ইয়াসিন বউনু। মরক্কো আফ্রিকান অঞ্চলের মুসলিম অধ্যুষিত দেশ হলেও এটি একেবারে ইউরোপিয়ান ঘেঁষা। ফুটবলারদের অনেকেই প্রতিবেশী স্পেনের বিভিন্ন ক্লাবে খেলে থাকেন। তাদের ৪৭ বছর বয়সী কোচের জন্ম পর্তুগালে। পূর্বপুরুষ আবার মধ্যপ্রাচ্যের।

‘আরব বা ইউরোপিয়ান বড় কথা নয়, আমি মরক্কোর, একজন মরক্কান হিসেবে গর্বিত। মাঠে মরক্কোর জন্য লড়াই করব।’ পর্তুগাল ম্যাচ নিয়ে তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই পর্তুগালকে নিয়ে আমাদের গেম প্ল্যান থাকবে। হ্যাঁ আমার দলে কোনো সুপারস্টার নেই। এর সুবিধা হচ্ছে, সবাই শতভাগ দিতে প্রস্তুত।’
স্পেনের বিপক্ষে সেদিন ডিফেন্ডার আশরাফ হাকিমি দুর্দান্তভাবে প্রতিপক্ষের আক্রমণভাগকে রুখে দেন, ঠিক একইভাবে জয়সূচক পেনাল্টি স্ট্রোকটিও আসে তার পা থেকেই। স্পেনের হাজার পাসের কৌশল শেষ পর্যস্ত সফল হতে দেননি ওয়ালিদ। পেনাল্টিতে বউনু স্প্যানিশদের দুটি শট রুখে দেন, আরেকটি শট পোস্টে লেগে ফিরে আসে। অন্যদিকে মরক্কো তিনটি শটই গোলে পরিণত করে। গত ১২ বছরে প্রথম ও চতুর্থ আফ্রিকান দল হিসেবে শেষ আট নিশ্চিত করা মরক্কোর জন্য এখন পুরো আফ্রিকান অঞ্চলই আশা দেখছে, সঙ্গে যোগ হয়েছে আরব সমর্থকরা। এ নিয়ে বিশ্বকাপসহ গত ৭ ম্যাচের ৬টিতেই তারা কোনো গোল হজম না করে মাঠ ছেড়েছে। বিশ্বকাপে তারা এ পর্যন্ত টানা পাঁচ ম্যাচে অপরাজিত রয়েছে। হাকিমির প্রতিভা ও প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সতীর্থ ফুল-ব্যাক নুসাইর মাজরই এবং তাদের মধ্যমাঠে অত্যন্ত পরিশ্রমী সোফিয়ান আমরাবাতের কারণেই মূলত মরক্কোর এই সাফল্য।
 বিশ্ব ফুটবলে এই মুহূর্তে অন্যতম শক্তিশালী রক্ষণভাগ হিসেবে মরক্কোকেই বিবেচনা করা হচ্ছে। গ্রুপ দুই শীর্ষ দল ক্রোয়েশিয়া ও বেলজিয়ামের পর শেষ ষোলোয় স্পেনকে বিদায় করে দেয়ার পর এবার পর্তুগালকেও আটকে দিতে চায় তারা। মরক্কো এর আগে পাঁচবার বিশ্বকাপে খেলেছিল, যেখানে চারবারই তারা বিদায় নিয়েছে গ্রুপ পর্ব থেকে (১৯৭০, ১৯৯৪, ১৯৯৮ ও ২০১৮)। মাত্র একবার উঠেছিল দ্বিতীয় রাউন্ডে (১৯৮৬)। ১৯৮৬ আসরে গ্রুপ পর্বে পর্তুগালকে ৩-১ এবং ১৯৯৮ আসরে গ্রুপ পর্বে স্কটল্যান্ডকে ৩-০ হারানোটাই ছিল সেরা সাফল্য। তবে বেলজিয়াম ও স্পেন-বধে এবার সেই সাফল্যকেও ছাপিয়ে গেছে তারা। মরক্কানদের সামনে এবার আরও বড় ইতিহাসের হাতছানি।

 

সম্পর্কিত বিষয়:

×