ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন যুবরাজ পেয়ে গেছে পর্তুগীজরা

জিএম মোস্তফা

প্রকাশিত: ০০:৪৩, ৮ ডিসেম্বর ২০২২

নতুন যুবরাজ পেয়ে গেছে পর্তুগীজরা

স্পেনের তরুণ ফরোয়ার্ড গঞ্জালো রামোস

গত দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে বিশ্ব ফুটবলে আধিপত্য বিস্তার করছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো। আর পর্তুগালের জার্সিতে তো একক দাপট। সিআর সেভেন বিহীন পর্তুগাল যেন অকল্পনীয় ব্যাপারই! তবে অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, কাতার বিশ্বকাপেই যেন শেষ দেখে ফেলছেন পাঁচবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী এই তারকা ফুটবলার। মঙ্গলবার শেষ ষোলোর ম্যাচে তো একাদশেই জায়গা পাননি সিআর সেভেন।

তার জায়গায় প্রথম একাদশে খেলার সুযোগ পান গঞ্জালো রামোস। সেইসঙ্গে স্বপ্নের বিশ্বকাপে পর্তুগালের জার্সিতে অভিষেকও হয়ে গেল ২১ বছর বয়সী এই তরুণ ফরোয়ার্ডের। সুযোগ পেয়েই নিজেকে মেলে ধরলেন দারুণভাবে। দুর্দান্ত এক হ্যাটট্রিক করে দলকে বড় ব্যবধানে জয়ের নায়কও বনে যান রামোস। ফলে বেনফিকার তরুণ প্রতিভাবান এই ফুটবলারকেই পর্তুগালের নতুন যুবরাজ ভাবছেন ফুটবলপ্রেমীরা।

লুসাইল স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার রাতটা ছিল পর্তুগালের। শেষ ষোলোর ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে যে একের পর এক গোল করেছে ফার্নান্দো সান্তোসের দল। আরও সুস্পষ্ট করে বললে সুইসদের বিপক্ষে গোল উৎসব করেছেন রামোস। নিজে তিন গোল করার পাশাপাশি এক গোল করাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন বেনফিকার এই তরুণ প্রতিভাবান ফুটবলার। প্রথমার্ধে একটির পর দ্বিতীয়ার্ধে করেন জোড়া গোল। আর তাতেই ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নেন তিনি।

২০২২ বিশ্বকাপে প্রথম ফুটবলার হিসেবে হ্যাটট্রিক করার মাইলফলক স্পর্শ করলেন রামোস। কাতারে দুটি করে গোল করার রেকর্ড আছে অনেকেরই। যাদের মধ্যে রিচার্লিসন, কিলিয়ান এমবাপে, মার্কাস রাশফোর্ড অন্যতম। কিন্তু হ্যাটট্রিক করার কৃতিত্ব নেই কারও। আর সেই কীর্তিটাই গড়লেন রামোস।
পর্তুগালের ইতিহাসে দ্বিতীয় ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে হ্যাটট্রিক করলেন রামোস। তার আগে এই রেকর্ড গড়েছিলেন পর্তুগিজ কিংবদন্তি ইউসেবিও। ১৯৬৬ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার-ফাইনালে উত্তর কোরিয়ার বিপক্ষে ৪ গোল করেছিলেন তিনি। সেই বিশ্বকাপের সেমিফাইনালেও জায়গা করে নিয়েছিল তারা। এখন পর্যন্ত যা, বিশ্বকাপে পর্তুগালের সেরা সাফল্য। প্রথমবার অংশ নিয়েই সেই বিশ্বকাপে তৃতীয় হয়েছিল পেপে-রোনাল্ডোর পূর্বসূরিরা।

সব মিলিয়ে পর্তুগালের চতুর্থ খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিকের স্বাদ পেলেন রামোস। ইউসেবিওর পর ২০০২ আসরে গ্রুপ পর্বে পোল্যান্ডের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেছিলেন পাওলেতা। সর্বশেষ ২০১৮ বিশ্বকাপে গ্রুপপর্বে স্পেনের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করার গৌরব অর্জন করেছিলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো। ইউসেবিও, পাওলেতা-রোনাল্ডোর পর এই তালিকায় যোগ হলো রামোসের নাম।
তবে তরুণ প্রতিভাবান এই ফুটবলারের নাম উঠে গেছে আরও কিছু পরিসংখ্যানের পাতায়। ২০০২ সালে জার্মানির মিরোস্লাভ ক্লোসার পর প্রথম  খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপে প্রথমবার শুরুর একাদশে নেমেই হ্যাটট্রিক করলেন গঞ্জালো রামোস। আর ৩২ বছর পর বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে কেউ হ্যাটট্রিক করলেন। তার আগে সবশেষে ১৯৯০ আসরে শেষ ষোলোয় কোস্টা রিকার জালে তিনবার বল পাঠিয়েছিলেন চেকোস্লোভাকিয়ার স্কুরাভি।

ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি পেলের পর সবচেয়ে কম বয়সে বিশ্বকাপের নকআউট ম্যাচে হ্যাটট্রিক করার গৌরবও এখন ২১ বছর বয়সী এই রামোসের। তবে পরিসংখ্যান বলছে, রামোসের হ্যাটট্রিক করার অভ্যাস পুরনো। ২০২১ সালে পর্তুগালের হয়ে অনূর্ধ্ব-২১ ইউরো কোয়ালিফায়ারের ম্যাচে সাইপ্রাসের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেন তিনি। এছাড়া চলতি বছর বেনফিকার হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ড্যানিশ ক্লাব মিজুল্যান্ডের বিপক্ষেও হ্যাটট্রিক করেন রামোস।
অথচ আন্তর্জাতিক ফুটবলে পা রেখেছেন এখনো এক মাস হয়নি রামোসের। বিশ্বকাপ শুরুর আগে গত ১৭ নভেম্বর নাইজেরিয়ার বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ দিয়ে দেশের হয়ে অভিষেক হয় তার। যে কারণে এদিন যে দলে সুযোগ পাবেন তা কল্পনাতেও ছিল না তার। রামোস বলেন, ‘কখনো কল্পনা করিনি নকআউট পর্বে শুরুর একাদশে জায়গা পাব।

জানি না পরের ম্যাচে শুরু থেকে খেলতে পারব কি না, সেটা নির্ভর করছে কোচের ওপর। আমাকে যতটা সম্ভব কঠোর পরিশ্রম করে যেতে হবে। দেখা যাক, কী হয়।’ তবে নেতা মানছেন রোনাল্ডোকেই। তার ভাষ্যমতে, ‘ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো আমার সঙ্গে কথা বলেন, সবার সঙ্গেই বলেন। তিনি আমাদের নেতা এবং সবসময় পাশে থাকার চেষ্টা করেন।’

সম্পর্কিত বিষয়:

×