একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ৮ হাজারি ক্লাবে ঢুকলেন টাইগার অধিনায়ক তামিম ইকবাল
এক সময় আর্জাতিক ক্রিকেটের তিন ফরমেটেই বাংলাদেশের পক্ষে সর্বাধিক রানের মালিক ছিলেন তামিম ইকবাল। তবে টেস্টে কিছুটা বিরতি পড়া ও টি২০ ক্রিকেটে দীর্ঘদিন না খেলে অবসরে যাওয়ার কারণে তিনি পিছিয়ে পড়েছেন। কিন্তু ওয়ানডে দলের অধিনায়ক হিসেবে নিয়মিত তিনি এই ফরমেটে। আর সে কারণে একের পর এক অবিস্মরণীয় অর্জন তাকে ধরা দিয়েছে। আর দীর্ঘদিন ধরেই ওয়ানডেতে বাঁহাতি এই ওপেনার বাংলাদেশের পক্ষে সর্বাধিক রানের মালিক। এই ফরমেটে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ৫ হাজার, ৬ হাজার ও ৭ হাজার রানের মাইলফলক পেরিয়েছেন তিনি। এবার ৮ হাজার ওয়ানডে রানের ক্ষেত্রেও প্রথম বাংলাদেশী হয়েছেন তিনি।
শুক্রবার হারারে স্পোর্টস ক্লাবে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ৮৮ বলে ৬২ রানের ইনিংস খেলার পথে তিনি এই মাইলফলক পেরিয়েছেন। ওয়ানডে ইতিহাসে ৩৩ নম্বর ব্যাটার হিসেবে এই অর্জনের মালিক হয়েছেন তিনি। কিন্তু ওপেনার হিসেবে মাত্র নবম ক্রিকেটার হিসেবে এই অর্জনে তামিম পৌঁছে গেছেন কিংবদন্তিদের কাতারে। সেই তালিকায় আছেন লিটল মাস্টার শচীন টেন্ডুলকর, সৌরভ গাঙ্গুলী, সনাথ জয়াসুরিয়া, ক্রিস গেইল, ডেসমন্ড হেইন্স, সাঈদ আনোয়ার, এডাম গিলক্রিস্ট ও হাশিম আমলা। আর যদি বাঁহাতি ওপেনারের হিসেবে তামিমের আগে মাত্র ৫ জন ৮ হাজার ওয়ানডে রানের মালিক।
হারারেতে শুক্রবার প্রথম ওয়ানডেতে নামার আগে তামিমের ২২৮ ম্যাচের ২২৬ ইনিংসে রান ছিল ৭৯৪৩। অর্থাৎ ৫৭ রান করতে পারলেই ৮ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করবেন। আর এদিন তিনি ক্যারিয়ারের ৫৪তম অর্ধশতক হাঁকান। যদিও সকালের আর্দ্রতার জন্য দেখেশুনে বেশ ধীরস্থির হয়েই খেলেছেন তামিম। আর সে কারণে ফিফটি পেয়েছেন ৭৯ বল খেলে। তবে এরপর দ্রুত ব্যাট চালিয়ে দলের রান বাড়াতে মনোযোগী হয়েছেন। কিন্তু বেশিদূর এগোতে পারেননি। ৮৮ বলে ৯ চারে ৬২ রান করার পর সাজঘরে ফেরেন। ততক্ষণে লিটন কুমার দাসের সঙ্গে ১১৯ রানের দুর্দান্ত এক ওপেনিং জুটি গড়েছেন তিনি। আর শুরুর এই ভিতটাই কাজে লাগিয়ে পরবর্তীতে লিটন, এনামুল হক বিজয় ও মুশফিকুর রহিমের অর্ধশতকে ৫০ ওভারে ২ উইকেটে ৩০৩ রানের বড় সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো এক ম্যাচে ৪ ব্যাটার ফিফটি প্লাস রান করেছেন এদিন। তবে মাত্র দ্বিতীয়বারের মতো শীর্ষ ৪ ব্যাটারই এই কীর্তি গড়লেন। ১১০১ দিন পর ওয়ানডেতে ফিরেছেন বিজয়, ৬২ বলে ৭৩ রানের ঝড়ো ইনিংস উপহার দিয়েছেন। ৮১ রান করেছেন লিটন এবং মুশফিক অপরাজিত থাকেন ৫২ রানে। তবে সবাইকে ছাপিয়ে আলোকিত হয়েছেন তামিম। কারণ অবিস্মরণীয় এক অর্জনের মালিক হয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটার হিসেবে ২২৭তম ইনিংসে ব্যাট করে ৮ হাজার রান পেরিয়ে গেছেন তামিম। ৫ হাজার রান করেছিলেন ১৫৮ ইনিংসে, ৬ হাজার ১৭৫ ইনিংসে ও ৭ হাজারে পৌঁছেন ২০৪ ইনিংসে। অর্থাৎ আরও ২৩ ইনিংস খেলে বাকি ১০০০ রান করলেন এবং পেরিয়ে গেলেন ৮ হাজার রান। ওয়ানডে ইতিহাসে ৩৩তম ব্যাটার হিসেবে এই কীর্তি গড়লেও দ্রুততার দিক থেকে তামিম ১৬তম। ভারতের বিরাট কোহলি মাত্র ১৭৫ ইনিংসে ৮ হাজার রান ছুঁয়ে দ্রুততম। অর্থাৎ ১৭ জনকে এক্ষেত্রে পেছনে ফেলেছেন তামিম। এখন তামিমের ২২৯ ওয়ানডে খেলে ২২৭ ইনিংসে ৩৭.০৬ গড়ে রান ৮ হাজার ৫। বাংলাদেশের পক্ষে ২২১ ওয়ানডেতে ৬৭৫৫ রান করে দ্বিতীয় স্থানে সাকিব আল হাসান। এছাড়া তৃতীয় স্থানে থাকা মুশফিকুর রহিম ২৩৩ ওয়ানডেতে এই ম্যাচের আগে করেছেন ৬৬৯৭ রান। সর্বাধিক ১৮ হাজার ৪২৬ রান করেছেন ভারতীয় কিংবদন্তি শচীন। সব ম্যাচে ওপেনিং করেননি তিনি।
ওপেনার হিসেবে শচীন করেছেন সর্বাধিক ১৫ হাজার ৩১০ রান। কিন্তু ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সব ম্যাচেই ওপেনার ছিলেন তামিম। তাই ওয়ানডেতে ওপেনার হিসেবে রান করার দিক থেকে তামিমের অবস্থান এই মুহূর্তে ৯ নম্বরে। অর্থাৎ ৮ হাজার রান করার মাধ্যমে ওয়ানডে ইতিহাসের মাত্র নবম ওপেনিং ব্যাটার হিসেবে এই ক্লাবের সদস্যপদ পেয়েছেন তামিম। তার আগে এই কীর্তিতে নাম লেখানো ওপেনাররা হচ্ছেন- শচীন, জয়াসুরিয়া, গেইল, গিলক্রিস্ট, গাঙ্গুলী, হেইন্স, আনোয়ার ও আমলা। বর্তমান সময়ে যারা আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে ওপেনিং করেন, তাদের মধ্যে তামিমের সবচেয়ে নিকটতম ভারতের রোহিত শর্মা।
তিনি ১৪৯ ম্যাচে ওপেনিং করে ৭ হাজার ৪০৯ রান করেছেন। অবশ্য বাঁহাতি ওপেনার হিসেবে ওয়ানডে ইতিহাসে মাত্র ষষ্ঠ ব্যাটার তামিম ৮ হাজার রানে। তার আগে বাঁহাতি যে ৫ ব্যাটার ৮ হাজার রান করেছেন তারা হচ্ছেন জয়াসুরিয়া, গেইল, সৌরভ গাঙ্গুলী, গিলক্রিস্ট ও আনোয়ার। সর্বাধিক ১২ হাজার ৭৪০ রান করে বাঁহাতি ওপেনারদের মধ্যে সবার ওপরে জয়াসুরিয়া। বাঁহাতি ওপেনারদের মধ্যে বর্তমানে খেলা চালিয়ে যাওয়াদের মধ্যে তামিমের কাছাকাছি ভারতের শিখর ধাওয়ান। তার রান ১৫২ ইনিংসে ৬৪৯৩। সার্বিকভাবে ওয়ানডেতে অবশ্য বাঁহাতি ব্যাটারদের রান করার তালিকায় তামিম আছেন ১১ নম্বরে। সাঙ্গাকারা ৩৮০ ইনিংসে ১৪ হাজার ২৩৪ রান। আর তামিমের একেবারে কাছাকাছি নিউজিল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক স্টিফেন ফ্লেমিং ২৬৯ ইনিংসে ৮ হাজার ৩৭ রান করে। অর্থাৎ তামিমের সামনে সুযোগ রয়েছে আরও ওপরে ওঠার।