ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যাপিত জীবন ॥ জীবনের যত রঙ

শিউলী আহমেদ

প্রকাশিত: ০০:৩৭, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

যাপিত জীবন ॥ জীবনের যত রঙ

৪টি বিভাগ থেকে একযোগে রঙিন হয়ে প্রকাশ হওয়া ‘দৈনিক জনকণ্ঠ

৪টি বিভাগ থেকে একযোগে রঙিন হয়ে প্রকাশ হওয়া ‘দৈনিক জনকণ্ঠ’ সূচনালগ্ন থেকেই ছিল ডাল-পালা নিয়ে সমৃদ্ধ ও পরিপূর্ণ একটি পত্রিকা। অনেকগুলো ফিচার পাতার শাখা-প্রশাখা নিয়ে প্রকাশিত এই দৈনিকটি পুরো দেশে সাড়া জাগিয়ে ছিল। এতটা রঙিন আর জীবনঘেঁষা পত্রিকা তখন শুধুই জনকণ্ঠ ছিল। ‘যাপিত জীবন’ তারই একটি শাখা। জীবন-যাপনের প্রায় প্রতিটি বিষয় নিয়ে লেখা আসতে থাকে এই পাতায়। শুরুতেই তাই এটি সবার মনে জায়গা করে নেয়।

আমি নিজেকে অনেক সৌভাগ্যবতী মনে করি যে, সেই কৈশোরে জড়িয়ে থাকা এই পত্রিকায় জীবনের এই পূর্ণ সময়ে এসে নিজেকে জড়াতে পেরেছি। ‘শিক্ষা সাগর’ নামে পাতাটির বদৌলতে জন্মলগ্ন থেকেই ঘরে আসতে থাকে জনকণ্ঠ। আর তখন থেকেই নজর কাড়ে ফিচার পাতা ‘যাপিত জীবন’। জীবনকে আরও একধাপ রাঙিয়ে দিতে যাপিত জীবন পাতাটি নজর কেড়েছিল সবারই।

তখন এত ব্যাপক হারে সবাই ফ্যাশন সচেতন ছিল না। সাজ-সজ্জা, পোশাক-আশাক কেমন হবে, কোথায় কিভাবে সাজবে সবই থাকত এখানে। তখন আজকের মতো স্যাটেলাইট আর ইন্টারনেট ছিল না। পত্রিকা আর একমাত্র টিভি চ্যানেল বিটিভি ছিল খবরা-খবরের একমাত্র মাধ্যম। উন্নত বিশ্বে কোথায় কি হচ্ছে, বর্তমান যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেকে কিভাবে আপডেটেড রাখতে হবে, তার সবই ছিল পত্রিকানির্ভর। সে সময় আধুনিকতার পথ পাওয়া যেত পত্রিকাতেই।

গৃহসজ্জা, সাজসজ্জা, ত্বকের যত্ন, চুলের যত্ন, জীবনকে সুন্দর করে সাজিয়ে তোলা, সব জায়গায় নিজেকে খাপ খাইয়ে নিয়ে কিভাবে জটিল পরিস্থিতিতেও হাসিমুখে-নির্ঝঞ্জাটভাবে পথচলা যায় ইত্যাদি বহুবিধ বিষয়ে দিক নির্দেশনা দিয়ে, অগণিত পাঠকের মনের মণিকোঠায় জায়গা করে নিয়েছিল ‘দৈনিক জনকণ্ঠ’- এর এই ফিচার পাতা ‘যাপিত জীবন’। শুধু আমি না, আমার মতো সবে কৈশোরে পা রাখা অনেক কিশোরী নিজেকে গড়ে নিয়েছিল সে সময়। বিভিন্ন দিবসে মানুষের মনের সুপ্ত ভাবনাগুলো এই যাপিত জীবনেই প্রকাশ হয়।

বাবা দিবস, মা দিবস, বৈশাখ, ফাল্গুন, ভ্যালেন্টাইন্সসহ বিভিন্ন দিবস উদযাপনসহ কি পোশাক পরবে, কিভাবে সাজবে, এমনকি কোথায় যাওয়া যেতে পারে- এসব বিষয়ে এই ফিচার পাতাগুলো এতো রঙিন আয়োজন করত! দেখে চোখ জুড়িয়ে যেত। আর মনের সুপ্ত ইচ্ছেগুলো একটু একটু করে ডানা মেলে উড়তে শুরু করল। এক ফেব্রুয়ারি জুড়েই ৪ অনুষ্ঠান। ১ তারিখ থেকে শুরু হয় একুশে বইমেলা, তারপর পয়লা ফাল্গুন, পরদিনই ভ্যালেন্টাইন্স ডে, এরপর ২১ ফেব্রুয়ারি।

মাসজুড়ে উৎসবে মাতোয়ারা বাঙালি। কিন্তু সে সময় এই দিনগুলো এত ঘটা করে পালন হতো না। খুব পড়ুয়া ব্যক্তি ছাড়া তেমন কেউ বই মেলায়ও যেতেন না। পত্রিকার এই সুন্দর, সাজানো-গুছানো উপস্থাপন, আর উৎসাহ মানুষকে মেলামুখী করে। ফলে বইয়ের পাঠকও বেড়ে যায়। ঘরোয়াভাবে বা বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে উদযাপন করা দিনগুলোও জাঁকজমকভাবে উদযাপিত হতে লাগল এই ফিচার পাতার বদৌলতেই। বাঙালি উৎসব প্রিয়, ১২ মাসে তার তেরো পার্বণ। এই দিবসগুলো বাঙালিকে রাঙিয়ে দিয়ে উৎসবমুখর করে তোলে। তার চেয়ে বড় কথা ভালোবাসা দিবস, মা দিবস, বাবা দিবস- এসব দিবসগুলো আমাদের দেশে তেমন প্রচলিত ছিল না।

ভ্যালেন্টাইন্স ডে যেহেতু একজন ফরাসি প্রেমিকের ভালোবাসাকে কেন্দ্র করে, তাই এ দিনটি শুধুই প্রেমিক-প্রেমিকাদের জন্যই মনে করা হতো। পরবর্তীতে তাকে এই বেড়াজাল ছিন্ন করে ভালোবাসা বাবা-মা, ভাই-বোন, বন্ধু সবার জন্য- এ বিষয়টি এই ফিচার পাতার বদৌলতেই প্রকাশ পায়। যদিও ভালোবাসার কোনো নির্দিষ্ট দিন লাগে না। আমরা আমাদের প্রিয় মানুষগুলোকে সব সময়ই নিখাঁদভাবে ভালোবাসি। তবু একটা দিন থাকলে মন্দ হয় না। এই সুযোগে মনের গোপন কথাটার বহির্প্রকাশ ঘটে। এই বহির্প্রকাশের মাধ্যমটাও জানা গেছে যাপিত জীবনের মাধ্যমেই। মুখে না বলে, প্রিয় মানুষটিকে তার পছন্দের জিনিস উপহার দিয়েও ভালোবাসাটা জানানো যায়।

সেই উপহার কেমন হতে পারে, সেই বিষয়গুলো সুন্দরভাবে তুলে ধরে মানুষের এসব সুপ্ত ইচ্ছেগুলো যাপিত জীবনে সুন্দরভাবে উপস্থাপন হতো। সাজ-পোশাকের প্রতি আগ্রহ মানুষ তখন থেকেই প্রকাশ করে। চলছে ফাগুন মাস, মাত্রই গেল ভালোবাসা দিবস। প্রকৃতিতে ফাল্গুনী হাওয়া বইছে। মৃদু-মন্দ শীতল মিষ্টি বাতাসের সঙ্গে রুক্ষ্ম প্রকৃতি এ সময় মানুষকে কিছুটা উদাসীন আর বিষাদগ্রস্তও করে তোলে। আমাদের এই জনকণ্ঠ পরিবারেও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উচ্ছ্বাসের আড়ালে একটা বিষণœতা উড়ে বেড়াচ্ছে।
বছর ঘুরে আবার এসেছে স্বমহিমায় উদ্ভাসিত জনগণের পত্রিকা ‘দৈনিক জনকণ্ঠ’- এর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। যিনি এর জনক, আজ তিনি নেই। রয়ে গেছে তাঁর সৃষ্টি। এক ঝাঁক নিবেদিত প্রাণ তাঁর স্বপ্নের এই পত্রিকাটি ভালোবেসে শক্ত হাতে দাঁড় বেয়ে নিয়ে যাচ্ছে। অনেক ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে ৩০ বছর ধরে তার প্রত্যেকটি শাখা-প্রশাখা নিয়ে স্বদর্পে পথ চলছে এই ‘দৈনিক জনকণ্ঠ’। জনকণ্ঠের প্রতিষ্ঠাতা আমাদের প্রিয় সম্পাদক স্যার, বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিকউল্লাহ খান মাসুদ- তাঁর সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনায় কোটি মানুষের চোখে বিস্ময় সৃষ্টি করেছিলেন সে সময়।

তাঁর এই সৃষ্টি আজও স্ব মহিমায় উদ্ভাসিত। আজ ‘যাপিত জীবন’ পরিবর্তিত জীবনের পথ চলায় কোটি মানুষের সঙ্গী হয়ে আছে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কিভাবে কণ্টকাকীর্ণ পথকে মসৃণ করে নিয়ে চলতে হয়, তা নিয়ে প্রতিনিয়ত জনগণের পাশে থাকছে ‘যাপিত জীবন’। শুরু থেকে প্রতি সপ্তাহে পাতাটি প্রকাশ পেলেও, কোভিডের কারণে সৃষ্টি হওয়া বিরূপ পরিস্থিতি প্রতিটা ক্ষেত্রেই আঘাত হেনেছে। কিন্তু থেমে যায়নি।  এখন তা প্রতি ১৫ দিন পর পর সোমবারে প্রকাশিত হচ্ছে। অগণিত পাঠকের ভালোবাসায় সিক্ত, আমাদের স্যারের স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা এক ঝাঁক নিবেদিত প্রাণ। ভালোবেসেই হাঁটছি আমরা এ পথ। ভালোবেসেই ভালোবাসা বিলিয়ে যাব আপনাদের চলার পথে।

লেখক : সহ সম্পাদক, দৈনিক জনকণ্ঠ

×