ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২০ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২

শুক্রাণুরা প্রতিযোগিতায় ছোটে না, বিজয়ীকে বেছে নেয় ডিম্বাণুই! শত বছরের ধারণা ভুল প্রমাণিত নতুন গবেষণায়

প্রকাশিত: ২০:৪৮, ২০ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ২০:৪৯, ২০ জুলাই ২০২৫

শুক্রাণুরা প্রতিযোগিতায় ছোটে না, বিজয়ীকে বেছে নেয় ডিম্বাণুই! শত বছরের ধারণা ভুল প্রমাণিত নতুন গবেষণায়

ছবিঃ সংগৃহীত

রূপকথার মতোই এতদিন শোনা যেত—লাখ লাখ শুক্রাণুর দৌড় শেষে একটি “বীরপুরুষ” শুক্রাণু ছুটে গিয়ে ছুঁয়ে ফেলে ডিম্বাণুর রাজপ্রাসাদ! কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞানের আলোয় সেই গল্পে এবার ফাটল ধরেছে। নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে এক চমকপ্রদ তথ্য—ডিম্বাণুও চুপ করে বসে থাকে না, বরং সে-ই ঠিক করে কে আসবে তার কাছে!

বিজ্ঞানীরা বলছেন, ডিম্বাণু রাসায়নিক সংকেত পাঠিয়ে পছন্দের শুক্রাণুকে আগেই ‘ডাকে’। এর মাধ্যমে সে নিজেই নিয়ন্ত্রণ করে কোন শুক্রাণুটি তার কাছে পৌঁছাবে এবং নিষিক্ত করবে। এমনকি অপছন্দের শুক্রাণুগুলোকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতাও থাকে ডিম্বাণুর।

২০২০ সালে স্টকহোম ও ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক যৌথ গবেষণায় প্রমাণিত হয়, ডিম্বাণু এমন এক রাসায়নিক নিঃসরণ করে যা শুক্রাণুকে আকর্ষণ করতে পারে। কিন্তু আকর্ষণ সব শুক্রাণুর জন্য নয়। প্রতিটি ডিম্বাণুর রয়েছে নিজস্ব পছন্দ, এবং সেই অনুযায়ী সে নির্দিষ্ট শুক্রাণুকে সংকেত পাঠায়।

বিজ্ঞান বিষয়ক লেখিকা স্টার ভার্টনের সাম্প্রতিক বই The Stronger Sex: What Science Tells Us About the Power of the Female Body-তেও উঠে এসেছে এ বিষয়টি। সেখানে বলা হয়েছে, ডিম্বাণু শুধুই নিষিক্ত হওয়ার জন্য অপেক্ষা করে না, বরং সক্রিয়ভাবে নির্ধারণ করে—কোন শুক্রাণু তার শরীরের অভ্যন্তরে ঢুকতে পারবে।

এই তথ্য অবশ্য একেবারে নতুন নয়। ১৯৯০-এর দশক থেকেই গবেষণায় এমন ধারণা উঠে আসছে। ১৯৯১ সালে জীববিজ্ঞানী এমিলি মার্টিন তার গবেষণাপত্র Egg and Sperm: How Science Has Constructed Romance Based on Stereotypical Male-Female Roles-এ দেখিয়েছিলেন, কীভাবে সমাজে প্রচলিত লিঙ্গভিত্তিক ধারণা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার ওপরও প্রভাব ফেলে।

তিনি বলেন, "পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদের দুর্বল ভাবা হয় বলেই হয়তো এমন ভুল ধারণা জন্ম নিয়েছে যে, ডিম্বাণু শুধু অপেক্ষা করে থাকে আর সক্রিয় ভূমিকায় থাকে শুধুই শুক্রাণু।"

২০১৭ ও ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ একাধিক গবেষণায় আবারো একই বিষয় উঠে আসে—ডিম্বাণু শুক্রাণুর মধ্যে থেকে বেছে নেয়। এটি কোনো দুর্ঘটনা নয়, বরং একটি সুপরিকল্পিত জৈবিক প্রক্রিয়া।

নারীবাদী জীববিজ্ঞানী ইভলিন ফক্স কেলার দীর্ঘদিন ধরে দেখিয়ে আসছেন, কীভাবে বিজ্ঞানের তথাকথিত নিরপেক্ষ সংজ্ঞাগুলোর ভেতরেও লুকিয়ে থাকে লিঙ্গভিত্তিক পক্ষপাত। তার মতে, জীববিজ্ঞানের সবচেয়ে সরল ব্যাখ্যাগুলোর মধ্যেও সমাজ ও সংস্কৃতির ছাপ থেকে যায়।

এতসব গবেষণার পরেও এখনও পাঠ্যবইয়ে লেখা থাকে—“শুক্রাণু ছুটে গিয়ে অপেক্ষারত ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করে।” তবে সময় এসেছে সেই বয়ান বদলানোর। কারণ বাস্তবে বিজয়ীকে নয়, বিজয়ীকেই বেছে নেয় ডিম্বাণু।

ইমরান

×