
ছবি: সংগৃহীত
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী বুধবার একটি ব্যাপক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) পরিকল্পনা প্রকাশ করতে যাচ্ছেন, যা তাঁর দুই মেয়াদের মধ্যে প্রযুক্তি বিষয়ে সবচেয়ে বিস্তৃত নীতিগত বক্তব্য হতে চলেছে। “AI Action Plan” নামের এই রোডম্যাপের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে বিশ্বে এআই-নেতৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চায়—সেটি তুলে ধরা হবে। এতে থাকবে উদ্ভাবন, অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা, জাতীয় নিরাপত্তা এবং “মানবিক অগ্রগতি” নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি।
এই পরিকল্পনায় ‘মানবিক অগ্রগতি’র অর্থ দেওয়া হয়েছে আমেরিকার নেতৃত্ব, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, শক্তি ও ব্যক্তি-স্বাধীনতার প্রসারের মাধ্যমে সামগ্রিক কল্যাণ নিশ্চিত করা। ট্রাম্প এই বক্তব্য দেবেন “Winning the AI Race” শীর্ষক এক সম্মেলনে, যেখানে থাকবেন তাঁর প্রযুক্তি উপদেষ্টা ডেভিড স্যাকস এবং বিখ্যাত All-In পডকাস্টের আয়োজকরা। এই ঘোষণাটি এমন এক দিনে আসছে, যেদিন ট্রাম্পের গত জানুয়ারির নির্বাহী আদেশ অনুযায়ী AI পরিকল্পনা তৈরির ১৮০ দিনের সময়সীমা শেষ হচ্ছে।
আগের প্রশাসনের তুলনায়, ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনেক বেশি উদ্ভাবন-ভিত্তিক এবং বাজারমুখী। এটি মূলত নিয়ম-কানুন দিয়ে এআই নিয়ন্ত্রণ না করে বরং প্রযুক্তিকে মুক্তভাবে এগিয়ে নেওয়ার পক্ষে। একে "অধিকতর উদ্ভাবনের মাধ্যমে বৈশ্বিক আধিপত্য নিশ্চিত করা"—এই দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা হচ্ছে। নীতিমালায় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য নিয়ম শিথিল করা, ফেডারেল এজেন্সিগুলোর মধ্যে সমন্বয় জোরদার করা, এবং আমেরিকান ব্যবসাকে উৎসাহিত করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে।
এআই পরিকল্পনার পেছনে রয়েছে প্রযুক্তি খাতে বিপুল বিনিয়োগ ও নতুন পরিকাঠামো গড়ে তোলার ইঙ্গিত। এর মধ্যে রয়েছে হাই-স্পিড কম্পিউটিং, ডেটা সেন্টার, শক্তিশালী বিদ্যুৎব্যবস্থা এবং STEM শিক্ষায় বিনিয়োগ। কর্মশক্তি গঠনের জন্য থাকবে রিস্কিলিং ও অ্যাপ্রেন্টিসশিপ প্রোগ্রাম। গবেষণা ও উন্নয়নে বাড়বে সরকারি অর্থায়ন, পাবলিক ডেটাসেট ব্যবহারের সুযোগও বাড়বে।
এআই নীতিতে নিয়ন্ত্রণমূলক অংশ খুব সীমিত থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও কলোরাডোর মতো এলাকায় অতিরিক্ত বিধিনিষেধ আরোপের ফলে যে জটিলতা ও বিরোধ দেখা দিয়েছে, তা এড়াতে ট্রাম্প প্রশাসন একটি সহজতর এবং ব্যবসাবান্ধব কাঠামো গড়ে তুলতে চায়।
পেনসিলভানিয়ায় একটি এনার্জি ও ইনোভেশন সামিটে ট্রাম্প সম্প্রতি গুগল, ব্ল্যাকস্টোন, কোরউইভ প্রভৃতি কোম্পানির মাধ্যমে ৯০ বিলিয়ন ডলারের AI ও শক্তি প্রকল্পের ঘোষণা দেন। এসব প্রকল্পে রয়েছে ডেটা সেন্টার, জলবিদ্যুৎ এবং প্রাকৃতিক গ্যাস অবকাঠামোর উন্নয়ন। এআই-তে চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতাকে "জাতীয় অগ্রাধিকার" হিসেবে চিহ্নিত করে প্রশাসন পরিবেশগত নিয়ম শিথিল করছে—যদিও পরিবেশবাদীদের মতে, এটি জলবায়ু সংকটকে আরও তীব্র করতে পারে।
এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে একটি সামগ্রিক ও একীভূত AI নীতি গড়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে, যেখানে মূল ফোকাস থাকবে উদ্ভাবন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান তৈরির ওপর। তবে এখন প্রশ্ন হলো—এই ত্বরান্বিত পন্থা বাস্তবিক অর্থে নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারবে কি না।
পরিকল্পনার বিস্তারিত প্রকাশের পর এর রাজনৈতিক ও প্রযুক্তিগত প্রভাব নিয়ে আরও বিশ্লেষণ সামনে আসবে।
শিহাব