
ছবিঃ সংগৃহীত
প্রতিদিন আমি ঘন্টার পর ঘন্টা ডেস্কে বসে কাজ করি। কাজের গতির জন্য ডুয়াল মনিটর আমার জন্য যেন একপ্রকার অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী। সাধারণত আমি ১৭ ইঞ্চির ল্যাপটপকে মূল ডিসপ্লে হিসেবে ব্যবহার করি আর সঙ্গে রাখি ২৭ ইঞ্চির গেমিং মনিটর। বাইরে গেলে ছোট ১৫.৪ ইঞ্চির পোর্টেবল মনিটর নিয়ে কাজ করি।
কিন্তু কথা হলো — ভালো মনিটর সস্তা নয়। আর যেহেতু বাড়িতে পুরনো একটা টিভি পড়ে ছিল, ভাবলাম একবার সেটা দিয়েই ট্রাই করে দেখি কেমন হয়। আশ্চর্যজনকভাবে, এই সিদ্ধান্তটা খারাপ হয়নি বরং অনেক কিছু শিখলাম।
স্ক্রিন বড় হলে কাজেও সুবিধা
আমি যে ৩২ ইঞ্চির টিভিটা ব্যবহার করলাম, সেটা আমার ২৭ ইঞ্চি মনিটরের চেয়ে চোখে পড়ার মতো বড়। এতে একসাথে অনেক ট্যাব খোলা রাখা যায়, ভিডিও দেখা যায় বড় স্ক্রিনে—যা দারুণ লাগে। তবে একটা জিনিস একটু বিরক্তিকর লেগেছে—টিভির স্ক্রিনটা গ্লসি, মানে আলো বা জানালার রোদের রিফ্লেকশন পড়ে, যা মনিটরের ম্যাট স্ক্রিনে হয় না।
আর একটা ব্যাপার, আমার ডেস্ক খুব বড় নয়। টিভির পা দুটো দুইদিকে হওয়ায় জায়গা বেশি নেয়, তাই ল্যাপটপকে একটু সাইডে সরিয়ে রাখতে হয়েছে। শুরুতে একটু কষ্ট হলেও ২-৩ দিনের মধ্যেই অভ্যস্ত হয়ে গেছি।
পারফরম্যান্সে তফাৎ আছে, কিন্তু সবক্ষেত্রে নয়
আমার গেমিং মনিটরের রেজোলিউশন 1440p আর রিফ্রেশ রেট 300Hz—যেটা এক কথায় ঝরঝরে। আর টিভিটার রেজোলিউশন 1080p আর রিফ্রেশ রেট 60Hz, মানে খুব সাধারণ মানের। স্ক্রিনে লেখা পড়া বা উইন্ডো বদলানোর সময় মনিটরের স্মুথনেস আমি মিস করেছি। কাছ থেকে দেখলে পিক্সেলগুলোও চোখে পড়ে।
তবে লেখালেখি বা ইমেইল চেক করার মতো সাধারণ কাজে টিভিটা বেশ ভালোই পারফর্ম করেছে। গেমিং বা মুভির ক্ষেত্রে মনিটরের মতো ডিটেইল, কালার বা ক্ল্যারিটি পাইনি — কিন্তু ঠিক আছে, মানিয়ে নেওয়া যায়।
মনিটরের মতো অ্যাডজাস্ট করা যায় না
মনিটরের একটা সুবিধা আমি বরাবরই উপভোগ করি — সেটা হলো এর অ্যাডজাস্টেবিলিটি। উচ্চতা বাড়ানো-কমানো, বাঁয়ে ডানে ঘোরানো, এমনকি পোর্ট্রেইট মোডেও রাখা যায়। যদিও আমি বেশি নড়াচড়া করি না, কিন্তু এমন অপশন থাকা মানে নিজের মতো করে সেট করা যায়।
অন্যদিকে, টিভির কোনো অ্যাডজাস্টমেন্ট নেই। যে জায়গায় রাখব, সেখান থেকেই দেখতে হবে। আমি যেহেতু বেশি লম্বা না, আমার জন্য সেটা বড় সমস্যা হয়নি। তবে লম্বা কাউকে হয়তো নিচু হয়ে বসে কাজ করতে হতে পারে।
কানেক্টিভিটিতে মিশ্র অভিজ্ঞতা
গেমিং মনিটরে DisplayPort, HDMI, USB, অডিও সবই থাকে। আমি সাধারণত DisplayPort দিয়ে কানেক্ট করি। টিভিতে DisplayPort নেই, শুধু HDMI দিয়েই ল্যাপটপ লাগাতে হয়।
তবে টিভির একটা মজার দিক হলো—এটা স্মার্ট টিভি। Wi-Fi কানেক্ট করেই ব্রাউজিং, ইউটিউব, নেটফ্লিক্স সব দেখা যায় ল্যাপটপ ছাড়াই। মাঝে মাঝে শুধু টিভি দিয়েই সময় কেটে যায়।
দামে টিভিই জিতে যায়
একটা ৩২ ইঞ্চি মনিটরের দাম শুরু হয় প্রায় ১৮০ ডলার থেকে, আর একই সাইজের টিভি পাওয়া যায় ১২০ ডলার বা তার কমেও, যদি ডিসকাউন্টে পাওয়া যায়।
হ্যাঁ, মনিটর একটু দামি, কিন্তু সেই দামের পেছনে যুক্তি আছে—উচ্চ রেজুলিউশন, দ্রুত রিফ্রেশ রেট, ভালো অ্যাডজাস্টমেন্ট। টিভি যদিও একটু কম ফিচার দেয়, তবুও দাম অনুযায়ী ভালোই ভ্যালু দেয়, আর স্পিকার ও স্মার্ট ফিচার তো বোনাস।
তাহলে, টিভি দিয়ে কাজ চালানো যায়?
অবশ্যই যায় — তবে নির্ভর করে আপনি কী ধরণের কাজ করছেন আর আপনার বাজেট কেমন। যদি কেবল টাইপিং, ব্রাউজিং, মুভি দেখা এসব হয়, তাহলে টিভি দারুণ কাজ করবে। কিন্তু যদি আপনি গেমার হন বা ভিডিও এডিটিংয়ের মতো হেভি গ্রাফিক্স কাজ করেন, তখন মনিটরই সেরা।
ব্যক্তিগতভাবে আমি যদি বাড়িতে কোনো পুরনো টিভি পড়ে থাকতো, তাহলে সেটাকে মনিটর হিসেবে ব্যবহার করতাম — কিন্তু নতুন কিনতে গেলে মনিটরই বেছে নিতাম।
মারিয়া