
ছবি: সংগৃহীত
পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন বরফের একটি টুকরো যার বয়স প্রায় ১৫ লাখ বছর বা তারও বেশি সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে আনা হয়েছে। এটি অ্যান্টার্কটিকা থেকে খনন করে সংগ্রহ করা হয়। এখন এই বরফকে ধীরে ধীরে গলিয়ে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করতে চলেছেন সেই সময়কার পৃথিবীর জলবায়ু, যা আজকের বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রেক্ষাপটে নতুন আলোকপাত করতে পারে।
এই বরফের স্তম্ভটি আকারে একটি স্বচ্ছ কাঁচের নলবিশেষের মতো, যা ২.৮ কিলোমিটার গভীর থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এটির মধ্যে আটকে থাকা প্রাচীন ধূলিকণা, আগ্নেয়গিরির ছাই, সামুদ্রিক শৈবাল (ডায়াটম) ও রাসায়নিক উপাদানগুলো বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা বোঝার চেষ্টা করবেন সেই সময়ের বাতাস, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ও তাপমাত্রা কেমন ছিল।
ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভের (BAS) বিজ্ঞানী ড. লিজ থমাস বলেন, “এটি আমাদের পৃথিবীর এক সম্পূর্ণ অজানা অধ্যায়। এখানে এমন তথ্য লুকিয়ে থাকতে পারে যা জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত আমাদের বর্তমান ধারণাকেই পাল্টে দিতে পারে।”
এখানকার -২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার হিমঘরে রাখা হয়েছে সেই বরফ। সাংবাদিকদের একমাত্র ১৫ মিনিট করে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয় সেখানে, কারণ বেশি সময় থাকলে যন্ত্রপাতি বা শরীরেই সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকি, ফটো ক্যামেরার ইলেকট্রনিক শাটার পর্যন্ত জমে গিয়েছিল।
এই বরফকে টুকরো করে ১ মিটার করে কেটে বাক্সে ভরে বিশেষ ঠান্ডা ভ্যানে করে কেমব্রিজের ল্যাবে আনা হয়। সেখানে পরবর্তী সাত সপ্তাহ ধরে এই বরফ ধীরে ধীরে গলানো হবে, যাতে এর মধ্যে আটকে থাকা প্রাচীন উপাদানগুলো সংগ্রহ করা যায়। তারপর সেই তরল নমুনা পাঠানো হবে পাশের ল্যাবে, যেখানে রয়েছে অত্যাধুনিক ICP-MS (Inductively Coupled Plasma Mass Spectrometer)। এই যন্ত্র ২০টির বেশি উপাদান ও ট্রেস মেটাল শনাক্ত করতে পারে, যার মধ্যে থাকবে বিরল পৃথিবীর ধাতু, সাগরের লবণ, আগ্নেয়গিরির নিঃসরণ এবং আরও অনেক কিছু।
এই গবেষণার একটি প্রধান উদ্দেশ্য হলো, মিড-প্লাইস্টোসিন ট্রানজিশন (৮ থেকে ১২ লাখ বছর আগে) নামের এক রহস্যময় পরিবর্তন সম্পর্কে জানার চেষ্টা। সে সময় পৃথিবীতে বরফযুগের চক্র হঠাৎ করে বদলে যায়। আগে যেখানে ৪১ হাজার বছর পরপর বরফযুগ আসত, হঠাৎ তা হয়ে যায় ১ লাখ বছর অন্তর। কেন এই পরিবর্তন ঘটেছিল সেটিই এখনো জলবায়ুবিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় প্রশ্নগুলোর একটি।
এছাড়াও বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, এই বিশ্লেষণে তারা এমন সময়ের প্রমাণ পাবেন, যখন কার্বন ডাইঅক্সাইডের মাত্রা আজকের মতোই (বা তার চেয়েও বেশি) ছিল, তবে তা ছিল প্রাকৃতিকভাবে। এর মাধ্যমে বোঝা যাবে যে, বর্তমান মানবসৃষ্ট গ্যাস নিঃসরণের ফলে আমরা কোন বিপজ্জনক এলাকায় ঢুকে পড়ছি।
মুমু ২