
ছবি: সংগৃহীত
নিউক্লিয়ার বর্জ্য নিয়ে জনমনে দীর্ঘদিনের উদ্বেগ ও প্রশ্নের জবাব দিতে এবার বড়সড় পদক্ষেপ নিয়েছেন এমআইটির (MIT) বিজ্ঞানীরা। তাঁদের নেতৃত্বে পরিচালিত এক নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটার মডেলিংয়ের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক বর্জ্য নিষ্পত্তির দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নির্ভরযোগ্যভাবে পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব।
এই গবেষণায় অংশ নিয়েছেন MIT-এর পিএইচডি গবেষক দাউরেন সারসেনবায়েভ ও সহকারী অধ্যাপক হারুকো ওয়েইনরাইট, যাঁরা Lawrence Berkeley National Lab ও University of Orléans-এর বিজ্ঞানীদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করেছেন। তাঁদের তৈরি মডেল বাস্তবভিত্তিক এক ভূগর্ভস্থ পরীক্ষার সঙ্গে মিল খেয়েছে—যা সুইজারল্যান্ডের মন্ট টেরি গবেষণা কেন্দ্রে পরিচালিত হয়।
কী বলছে গবেষণা?
গবেষকরা ১৩ বছরের পুরনো একটি পরীক্ষার তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন, যেখানে পারমাণবিক বর্জ্যের সঙ্গে সিমেন্ট-ক্লে বাধার বিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করা হয়। এই "স্কিন" অঞ্চলে জমা হওয়া খনিজ পদার্থ ও ছিদ্রপথের বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনাগুলোর মডেলিং ফলাফল পরীক্ষার ফলাফলের সঙ্গে হুবহু মিলে যায়।
গবেষণায় ব্যবহৃত নতুন সফটওয়্যারটির নাম CrunchODiTi। এটি পারমাণবিক বর্জ্যের সঙ্গে ক্লে ও সিমেন্টের তড়িৎ-রাসায়নিক বিক্রিয়া হিসাব করতে সক্ষম একমাত্র মডেলিং টুল, যা ত্রিমাত্রিক (3D) বিশ্লেষণ করতে পারে।
গুরুত্ব কেন?
বিশ্বজুড়ে পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু এসব প্রকল্প থেকে উৎপন্ন তেজস্ক্রিয় বর্জ্য কোথায় ও কীভাবে সুরক্ষিতভাবে সংরক্ষণ করা হবে, তা এখনো বহু দেশের জন্য অনিশ্চয়তা তৈরি করে রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্রের একমাত্র স্থায়ী পারমাণবিক বর্জ্য নিষ্পত্তি কেন্দ্রও বছরের পর বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। এই গবেষণা সেই অচলাবস্থায় নতুন আশার আলো দেখাচ্ছে।
পরবর্তী ধাপ কী?
গবেষকরা বলছেন, তাঁদের সফটওয়্যার অন্যান্য দেশের মডেলিং কার্যক্রমেও ব্যবহৃত হতে পারে। ভবিষ্যতে মেশিন লার্নিংয়ের সাহায্যে আরও দ্রুত ও সাশ্রয়ী মডেল তৈরি করার পরিকল্পনাও রয়েছে।
গবেষণার নেতৃত্বদানকারী সারসেনবায়েভ বলেন, “এই গবেষণা বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও সমাজ, এই তিনটি স্তম্ভকে একত্রে যুক্ত করেছে। ভবিষ্যতে পারমাণবিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় জনসচেতনতা ও নীতিনির্ধারকদের আস্থা গড়তে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
আঁখি