ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ জুলাই ২০২৫, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২

বার্ধক্য রোধে ‘ম্যাজিক মাশরুম’! প্রাথমিক গবেষণায় চমকপ্রদ ফল

প্রকাশিত: ১৯:০০, ১৯ জুলাই ২০২৫

বার্ধক্য রোধে ‘ম্যাজিক মাশরুম’! প্রাথমিক গবেষণায় চমকপ্রদ ফল

ছবি: সংগৃহীত

মানসিক উদ্দীপক ‘সিলোসাইবিন’–এর ব্যবহার শুধু মস্তিষ্ক নয়, এবার বার্ধক্য রোধেও কাজে লাগতে পারে—এমনই সম্ভাবনার ইঙ্গিত মিলেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়। ‘ম্যাজিক মাশরুম’–এ থাকা এই সাইকেডেলিক উপাদানটি মানব কোষ এবং প্রবীণ ইঁদুরের ক্ষেত্রে বয়স বৃদ্ধির কিছু লক্ষণ কমিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে বলে দাবি করেছেন গবেষকরা।

৮ জুলাই জার্নাল npj Aging–এ প্রকাশিত এই গবেষণায় বলা হয়েছে, সিলোসাইবিন শরীরে গিয়ে সিলোসিনে পরিণত হয়, যা কোষের আয়ু বাড়াতে সহায়ক হতে পারে। পরীক্ষাগারে দেখা গেছে, মানব ত্বক ও ফুসফুসের কোষে এই সিলোসিন প্রয়োগে কোষগুলোর আয়ু ৫৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। একই সঙ্গে কোষগুলোর টেলোমিয়ার (ডিএনএর সুরক্ষামূলক অংশ) সংরক্ষিত থেকেছে এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেসও কমেছে।

গবেষক দলের প্রধান যুক্তরাষ্ট্রের বেইলর কলেজ অব মেডিসিনের সহযোগী অধ্যাপক ড. লুইস হেকার বলেন, ‘সিলোসিন প্রয়োগে কোষগুলো অনেকটাই তরুণ কোষের মতো আচরণ করেছে। আমি তথ্য দেখে মুগ্ধ। সব পরীক্ষা যেভাবে সাড়া দিয়েছে, তা অভূতপূর্ব।’

এছাড়াও, প্রায় ১৯ মাস বয়সী (মানব বয়সে প্রায় ৬০ বছর) স্ত্রী ইঁদুরদের ওপর একাধিক মাসব্যাপী সিলোসাইবিন প্রয়োগে দেখা গেছে, যেসব ইঁদুর ওষুধ পেয়েছে, তাদের ৮০ শতাংশ গবেষণার শেষ পর্যন্ত জীবিত ছিল, যেখানে ওষুধ না পাওয়া দলে টিকে ছিল মাত্র ৫০ শতাংশ। এ ছাড়া ওষুধপ্রাপ্ত ইঁদুরগুলোর চুলের উজ্বলতা এবং গায়ের রঙেও দেখা গেছে ইতিবাচক পরিবর্তন।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, কোষে দীর্ঘজীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত ‘Sirt1’ নামক প্রোটিনের মাত্রাও বেড়ে গেছে সিলোসিনের প্রভাবে। গবেষকদের মতে, এটি বার্ধক্যজনিত কোষের ক্ষয়প্রাপ্তি রোধে ভূমিকা রাখতে পারে।

সাইকেডেলিক ওষুধগুলো সাধারণত স্নায়ুতন্ত্র ও ইমিউন সিস্টেমের ওপর প্রভাব ফেলে—যা বিভিন্ন অঙ্গের কার্যকারিতা ও রোগ প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকিয়াট্রি বিভাগের অধ্যাপক স্কট থম্পসন। যদিও তিনি এ গবেষণায় সরাসরি যুক্ত ছিলেন না, তবে বলেন, ‘গবেষণাটি এক নতুন দিক দেখিয়েছে—যেখানে সাইকেডেলিকস টেলোমিয়ারের দৈর্ঘ্য পরিবর্তনের মাধ্যমে বার্ধক্য রোধে ভূমিকা রাখতে পারে।’

তবে গবেষণার একটি সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। ইঁদুরদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ওষুধের মাত্রা মানুষের তুলনায় অনেক বেশি। তবে গবেষক হেকার বলেন, ‘ইঁদুরের শরীরের বিপাকক্রিয়া অনেক দ্রুত হয়, ফলে কার্যকারিতা কম সময়ের মধ্যে দেখা যায়, তাই তুলনাটি সরল নয়।’

এখনও মানুষের ওপর এই গবেষণা শুরু হয়নি, তবে গবেষকরা বলছেন, ভবিষ্যতে সিলোসাইবিনের সঠিক মাত্রা ও নিরাপত্তা যাচাই করে বয়সজনিত রোগের চিকিৎসায় এটি ব্যবহার করা যেতে পারে।

 

সূত্র: লাইভ সায়েন্স।

রাকিব

×