ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পাকিস্তানের দুঃসাহস!

প্রকাশিত: ০৬:১২, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

পাকিস্তানের দুঃসাহস!

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যাকে অস্বীকারের পাশাপাশি গণহত্যার জন্য উল্টো মুক্তিবাহিনীর ওপর দোষ চাপানোর মতো বিকৃত তথ্য-চিত্র সংবলিত ‘ক্রিয়েশন অব বাংলাদেশ : মিথস এক্সপ্লোডেড’ নামে একটি বই লিখে প্রকাশ করেছেন পাকিস্তানের জনৈক নাগরিক। বাংলাদেশের সৃষ্টি নিয়ে লেখা বিভ্রান্তিমূলক বইটি পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই পাকিস্তানে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে পাঠিয়ে এটি ‘মূল্যবান দলিল’ হিসেবে সংরক্ষণের জন্য রীতিমতো চিঠি লিখে অনুরোধ জানিয়েছে। এই অনুরোধ করেছেন পাকিস্তানের ডিরেক্টর জেনারেল অব ইন্টেলিজেন্স। তীব্র নিন্দা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘লাখো শহীদের রক্ত ও মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ নিয়ে এই ধরনের অপপ্রচার অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের। এই স্পর্ধা ও সাহস ওরা পেল কোথায়?’ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির প্রত্যেকেই পাকিস্তানের ওই দুঃসাহসের তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাবে। সামনে স্বাধীনতার মাস মার্চ। মানুষের প্রত্যাশা ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়া হবে। পাকিস্তান একের পর এক ধৃষ্টতা দেখিয়ে চলেছে। সর্বশেষ একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা মীর কাশেমের ফাঁসির পর তাদের পেয়ারা পাকিস্তান চরম ঔদ্ধত্য দেখিয়েছিল। ইসলামাবাদের প্রতিক্রিয়ার কড়া প্রতিবাদ জানায় ঢাকা। তাদের জানিয়ে দেয়া হয়, যুদ্ধাপরাধের বিচার বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সে কারণে বাংলাদেশের এই একান্তই অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাতে নিষেধ করা হয় পাকিস্তানকে। ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই বার্তা দেয়া হয়। এর আগেও আমরা দেখেছি আলবদর নেতা মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় নাক গলায় পাকিস্তান। বাংলাদেশ সরকার তখনও একই ধরনের কড়া বার্তা দেয়। দফায় দফায় নাক না গলানোর জন্য পাকিস্তানকে বলা হলেও তারা শুনছে না। কথায় বলেÑ চোরায় না শোনে ধর্মের কাহিনী। একাত্তরে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী হত্যার নীল নক্সা প্রণয়নকারী নিজামীকে নিয়ে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক সপ্তাহের মধ্যে দুই দফা বিবৃতি দিয়ে কূটনৈতিক সংস্কৃতিতে বাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল। স্মরণযোগ্য সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদÑ এই জোড়া যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদ-ের রায় কার্যকর হওয়ার পর পাকিস্তান তার দীর্ঘকালের ওই দুই মিত্রের জন্য কূটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন করে এবং ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য প্রকাশ করে। একাত্তরে বাংলার মাটিতে নারকীয় গণহত্যা চালানোর পরও পাকিস্তানের ভেতর সামান্যতম অনুতাপ পরিলক্ষিত হয়নি বরং বিভিন্ন সময় তারা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর ঔদ্ধত্য দেখিয়েছে। একের পর এক যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি হওয়ায় সন্ত্রাসবাদের স্বর্গ পাকিস্তান আর নিশ্চুপ থাকতে পারেনি। প্রতিটি ফাঁসির পর দেশটির প্রতিক্রিয়া তারই বহিঃপ্রকাশ। গণহত্যায় নিজেদের সম্পৃক্ততা এভাবেই স্পষ্ট করেছে পাকিস্তান। সবশেষে সত্য বিকৃত করে গ্রন্থ রচনার মাধ্যমে তারা নজিরবিহীন দুঃসাহস দেখাল। আমরা আশা করব, বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কিত বক্তব্য প্রকাশে পাকিস্তান সর্বদা সতর্ক ও সংযত থাকবে। পাকিস্তানের কাছে আমাদের জোরালো প্রতিবাদ জানানোই শুধু নয়, সময় এসেছে কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণের। সেই সঙ্গে এদেশে অবস্থান করেও যাদের অন্তরে পাকিস্তান এবং একজন নেত্রীর মতো শহীদের সংখ্যার ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করে তাদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে।
×