ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

একাত্তরের যুদ্ধশিশু ৮

কানাডায় অনিল মৌলিং ভাল আছেন, সুযোগ পেলে দেশে আসবেন

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

কানাডায় অনিল মৌলিং ভাল আছেন, সুযোগ পেলে দেশে আসবেন

রাজন ভট্টাচার্য ॥ জন্মের পর নবজাতককে রেখে চলে গিয়েছিলেন মা! কোন জন্মদাত্রী এমন কাজ করতে পারেন। অথচ এমনটাই ঘটেছে। সেই ফেলে যাওয়া শিশুটি বড় হতে হয়েছে অন্য দেশে। জন্মের পর থেকে যাদের বাবা-মা ডেকে আসছেন তারাই আপন অথচ রক্তের কেউ নন। যাদের ভাইবোন বলে জেনে আসছেন; তাদের সঙ্গেও নেই রক্তের কোন সম্পর্ক! বড় হয়ে জন্মের এ রকম করুণ ইতিহাস শোনার পর কেমন প্রতিক্রিয়া হতে পারে? স্বাভাবিক কারণেই এর জবাব হবে নেতিবাচক। কিন্তু না। তা হয়নি। বিষয়টি একেবারেই স্বাভাবিকভাবে দেখার চেষ্টা করেছেন যুদ্ধশিশু অনিল। অনিল মনে করেন, ‘মা কোনভাবেই স্বার্থপর নন। তিনি মমতাহীনাও হতে পারেন না। তাকে ত্যাগ করায় তিনি মাকে মনে মনে ধন্যবাদ দেন। ভাবেন, যা ভাল হয়ত তাই করার চেষ্টা করেছিলেন মা। কারণ, মা জানতেন এই শিশুটির জন্মের পর সামাজিকভাবে তাকে নানা ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবেলা করতে হবে। এখন কানাডায় বড় হয়েছেন অনিল। প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশে কিছু করা আমার জন্য অত্যন্ত বড় সম্মানের বিষয় হবে। বাংলাদেশে আসার সুযোগ কবে আসবে তিনি এখনও জানেন না। তিনি বলেন, কানাডাতে আমি মানুষের সেবা কাজে নিয়োজিত। আমার পথ হলো নারী আর পুরুষের সম্মান ও সম্পর্ককে রক্ষা করা। শান্ত দৃষ্টিতে মন জয় মায়ের ॥ অনিলের বাবার নাম রে মৌলিং। মায়ের নাম এলিজাবেথ মৌলিং। মৌলিংরা ১৯৭১ সাল পর্যন্ত কানাডার অন্টোরিওর টরন্টোতে বসবাস করতেন। তারপর তারা কিউবেকের মন্ট্রিয়লের পশ্চিম প্রান্তে গিয়ে বসবাস শুরু করেন। সেখানে তারা অনিল, পানু এবং কেটিকে দত্তক নেন। মৌলিং দম্পতি আবার ১৯৭৬ সালে অন্টোরিওতে ফেরত আসে। তাদের দাম্পত্য জীবনের শুরু থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের অনাথদের নিজেদের সন্তানরূপে দত্তক নিতে চেয়েছিলেন। মন্ট্রিয়লে বসবাসের সময় মৌলিংরা দত্তকের মতো একাধিক আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। ১৯৭১ থেকে ১৯৭৫ সালের মধ্যে মৌলিংরা চারটি ছেলেমেয়ে দত্তক নিয়েছিলেন। অনিলকে বাংলাদেশ থেকে নেয়ার সময়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মা এলিজাবেথ বলেন, প্রথম দর্শনেই তিনি ছেলেটির শান্ত দৃষ্টি দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। শিশুটি যেন তার মুখভঙ্গিতে বলছিল তিনিই (এলিজাবেথ) তার (ভবিষ্যত মা) অন্য বিশেষ কেউ নয়। তিনি অনিলকে তাদের ছেলে হিসেবে মনোনীত করতে একটুও দ্বিধা করেননি। এখনও স্পষ্ট মনে আছে, শিশু ভবনে ছেলেটি যেন আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। তাৎক্ষণিক মা হিসেবে ঘনিষ্ঠ হয়ে গিয়েছিলেন চোখের পলকের সঙ্গে। সেই ভয়ঙ্কর সময়ের গল্প ॥ একাত্তরের যুদ্ধশিশু অবিদিত ইতিহাস গ্রন্থের লেখক মুস্তফা চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাতে এলিজাবেথ জানান, ‘১৯৭১ সালে পুরনো ঢাকার জীর্ণ অনাথ আশ্রম এবং অন্য বাড়িঘরকে জরুরী ভিত্তিতে সেবা সদনে রূপান্তর করা হয়েছিল। দুস্থ নারী ও শিশুদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে সরকার প্রাণান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছিল। সেসব ছিল ভয়ঙ্কর দৃশ্যাবলী। চোখে দেখে মাথা ঠিক রাখা সত্যিই দুঃসাধ্য ব্যাপার ছিল। অত এত শিশু, চারদিকে অনেকেই মারা যাচ্ছিল। তখন অনেক শিশুই মায়ের গর্ভে মারা গিয়েছিল। আবার অনেকেই জন্মের অল্প সময়ের মধ্যে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়’। তিনি বলেন, আমরা অবাক হয়েছিলাম শিশুদের বাঁচাতে অনাথ আশ্রমের কর্মীদের অবিশ্রান্ত পরিশ্রম দেখে। সামান্য অথবা কোন ওষুধ তাদের সঙ্গে না থাকলেও, শিশুদের আসা-যাওয়ার বিরাম ছিল না। অনাথদের জন্য তহবিল সংগ্রহ ॥ শুধু অনাথ শিশুদের দত্তক নিয়েই সামাজিক দায় শেষ করতে চাননি মৌলিং পরিবার। অনাথ শিশুদের মানবাধিকার থেকে শুরু করে সামাজিক প্রতিষ্ঠাসহ সব রকমের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার কাজে নিবেদিত ছিলেন তারা। কানাডায় ফেরত এসে এলিজাবেথ বাংলাদেশের অনাথদের জন্য তহবিল সংগ্রহের কাজ চালিয়ে যান। প্রতিবেশীদের অনেকের মধ্যে ইতিবাচক সাড়া জাগাতে পেরেছিলেন। ১৯৭৫ সালের বসন্তে ভিয়েতনাম ও কাম্পুচিয়া থেকে অনাথ শিশুদের তুলে পাইকারি হারে বিমানে করে আমেরিকায় আনা হয়। ছেলেমেয়েদের বয়স যখন ৫-৭ বছর তখন বাবা-মা ১৯৭৭ সালে আলাদাভাবে বসবাসের ব্যবস্থা করেন। দীর্ঘ ২১ বছর বিবাহিত জীবনযাপনের পর ১৯৮১ সালে তাদের বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে। যুদ্ধশিশুদের ভালবাসার কেউ ছিল না! ॥ এই দম্পতি বিশ্বাস করেন, তাদের সন্তানদের জন্য এত দিন তারা এক ছাদের নিচে বসবাস করেছেন। চার সন্তান বাস করেন মায়ের সঙ্গে। তবে ভরণপোষণ হতো আলোচনা সাপেক্ষে। পরবর্তী সময়ে মা এলিজাবেথ আরেকটি বিয়ে করেন। তিনি বলেন, সময় অনেক হলেও অনিলের সম্পর্কে অনেক কিছুই মনে আছে তার। ১৯৭১ সালের অক্টোবরে তারা যুদ্ধশিশুদের খবর শুনেছিলেন। যারা বাংলাদেশে জন্ম নিচ্ছিল, পাকিস্তানী সৈন্যদের ঔরসে। তারা আরও শুনেছিলেন, এই নবজাতকদের ভালবাসার মতো পরিবার অথবা কোন ভবিষ্যত তাদের জন্মদেশে পাবে না। স্বভাবতই নানা ধরনের কূপম-ূকতার জন্য। শুরুতেই মৌলিংরা জানতে পেরেছিলেন, এ ধরনের অনাথ শিশুদের অবাঞ্ছিত বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে বাংলাদেশে। কাজেই নিজেদের দেশে তারা কলঙ্কিত এবং অপ্রার্থিত। তাদের জন্ম ঘিরে যেসব ঘটনা রয়েছে সেসবের জন্য মূলত এই পরিস্থিতির সৃষ্টি। তারা আরও জানতে পারেন, এই শিশুদের গ্রহণ করে নেয়ার মতো কোন পরিবার সে দেশে পাওয়া যাবে না। কানাডীয় মূল্যবোধের প্রেক্ষাপটে সামাজিকভাবে এ ধরনের শিশুদের কেউ ভিন্ন দৃষ্টিতে এখন আর দেখে না। তাই তাদের বড় করার ক্ষেত্রে তেমন কোন সমস্যা হয়নি। ছেলেমেয়েদের দুটি করে জন্মদিন, আনন্দে বেড়ে ওঠার পরিবেশ, তাদের বাংলাদেশ থেকে নেয়ার গল্প, জন্মের ইতিহাস সবকিছুই চর্চা হতো মৌলিংদের পরিবারে। জন্মের ইতিহাস ॥ ঢাকার মাদার তেরেসা শিশু ভবনে ১৯৭২ সালের ২৩ মে অনিলের জন্ম। জন্মের সময় ওজন হয়েছিল তিন কেজি। অন্য যুদ্ধশিশুদের মতো ওর মাও জন্মের পর পালিয়ে গিয়েছিলেন। নিজের নাম-ঠিকানাও রেখে যাননি। তখন আশ্রম কর্তৃপক্ষ নবজাতকের নাম রাখে অনিল। তাকে যখন কানাডায় নেয়া হয় তখন বয়স আট সপ্তাহ। ছোট্ট শিশুটিকে রোগা দেখালেও প্রকৃতপক্ষে তার কোন অসুখ ছিল না। ডাক্তাররা তাকে স্বাস্থ্যবান ছেলে বলেই বিবেচনা করেন। এলিজাবেথ বলেন, কানাডাতে নিয়ে আসার পর অনিল খুবই চেঁচামেচি করত। তাকে সয়া দুধ খাওয়ানোর পর চেঁচামেচি বন্ধ হয়। অনিলের বাবা-মা জানতে পারেন, অনাথ আশ্রমে ওরা শিশুদের যে দুধের ফর্মুলা খাওয়া তো, সে দুধ অনিল পছন্দ করত না। তাতে অনিলের এ্যালার্জিক ছিল। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ওর ওজন বাড়তে থাকে। অনাথ আশ্রমের দেয়া নামটি পরবর্তী সময়ে মধ্য নাম হিসেবে রাখা হয়েছিল। দত্তক বাবা-মায়ের কাছে তার পুরো নাম হয়, মার্ক অনিল মৌলিং। অনিলের শিক্ষাজীবন ॥ ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত অনিল পড়াশোনা করেন মেডোভেইল পাবলিক স্কুলে। তারপর তিনি ব্রাম্পটন শহরে জে এ টার্নার সেকেন্ডারি স্কুল থেকে ১৯৯০ সালে গ্রেড-১৩ শেষ করেন। তারপর অনিল ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে খ-কালীন পড়াশোনা করেন ১৯৯৫ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত। শুরুর বছরগুলোতে তিনি টরন্টোর ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞানে পড়াশোনা চালিয়ে যান। তিনি হলিস্টিক আরোগ্য পদ্ধতির কৌশল বিষয়ে বেশ কয়েকটি কর্মশালা ও প্রশিক্ষণ কোর্স নেন। হলিস্টিক বলতে অনিল যা বোঝেন তা হলো, অস্তিত্বের বিষয়ে এক ধরনের মতবাদ যা, বাস্তবতাকে শুধু অংশ হিসেবে গণ্য না করে সামগ্রিকভাবে সকল মৌলিক উপাদান অন্তর্ভুক্ত ও সমর্থন করা। তার মতে, ডেইমউডের দৃষ্টিভঙ্গি নিজের ভাবাবেগ ও আধ্যাত্মিকতার সফরে সহায়তা যুগিয়েছে। নিজের সম্পর্কেও অন্যদের বুঝতে জানতে সহজ হয়েছে। চার ভাইবোনের সংসার ॥ অনিলের বয়স তখন কত ছিল, ঠিক মনে নেই। তখন তিনি দত্তক শব্দের অর্থ জানতে পারেন। যদিও মৌলিং পরিবারে দত্তক একটি সাধারণ শব্দ ছিল। যেটা সবাই ব্যবহার করত। এই পরিবারের চারটি সন্তানেই দত্তক হিসেবে আসা। অনিলের এখনও মনে আছে, মা তাকে তার জন্মের ইতিহাস খোলাখুলিভাবে বলেছিলেন। মা এলিজাবেথের মতে, তার ছেলের জন্য এটা জানা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যে কোন পরিবেশে মা তাকে গর্ভে ধারণ করেছিলেন। অনিল বলেন, তার মা-বাবা তাকে যতটুকু তথ্য তার জীবনবৃত্তান্ত বিষয়ে দিয়েছেন পুরোটাই বয়স অনুসারে দেয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, যেভাবে আমি আমার জীবন সম্পর্কে তথ্য জেনেছি এতে খুশি। এবার অনিলের কর্মজীবনে প্রবেশ করার পালা। কর্মজীবন ॥ কয়েক বছর অনিল ভেবেছে নিজের পেশা নিয়ে কয়েকটা প্রচেষ্টা চালাবে। এক সময়ে সে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেয়ার কথা ভাবে। এটা তার মাথায় কিছুদিন ছিল। তারপর এ বিষয়ে আগ্রহ হারান তিনি। আরেকবার তিনি থাইচিতে আগ্রহী হন। এবং ইনস্ট্রাকটর পর্যন্ত প্রশিক্ষণ শেষ করেন। কিন্তু কয়েক বছরে কয়েক দফা কাজ পরিবর্তন করেন অনলি। তবে কর্মহীন হয়ে পড়লে তিনি কখনও হতাশ হন না। অনিল বলেন, জীবনে সবারই ভুল হয়। কেউ কি কখনও নিখুঁতভাবে একবারই ফাঁদ পেতে ইঁদুর ধরতে পারে? তার পেশাজীবী মা এলিজাবেথের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে মানসিক রোগীদের চিকিৎসা করাতে গিয়ে তিনি এক মিনিটের জন্যও নিজেকে বাস্তবতাবিরোধী মনে করেননি। অথবা তার এমন মনে হয়নি, কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। মনোবিকলন শেখা বা পেশা হিসেবে মানসিক রোগীর চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়ার মাধ্যমে অনিল আপন ভাবাবেগের সন্তুষ্টিবিধান ও মূল্যবাদ হৃদয়বৃত্তির সুষ্ঠু লালন-পালন করতে চায়। বিভিন্ন সময়ে পেশা পরিবর্তনের পর এখন অনিল টরন্টো এলাকায় ক্যাডিলাক ফেয়ার ভিউতে কাজ করছেন। অবসর সময়ে তিনি ককেয়কটি সিকিউরিটি কোম্পানির জন্য প্রশিক্ষণ কোর্স পরিচালনা করেন। ব্যক্তিগতভাবে অনিল মনে করেন, তিনি কানাডাতে খুবই দৃঢ় সংহত মানুষ হিসেবে বড় হয়ে উঠেছেন। তিনি জানেন তার জন্ম বাংলাদেশে। বড় হয়েছেন কানাডায়। এখানেই তার বাড়ি। মৌলিং দম্পতিই তার বাবা-মা। দেশ সম্পর্কে মনে হলে...॥ অনিল জানান, আমি যখন বাংলাদেশ সম্পর্কে ভাবি তখন কোন পরিবার বা জন্মদাত্রী অথবা বাবার কথা মনে হয় না। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সম্পর্কে আমার মনে হলে বাঘের কথা, ঢাকার ব্যস্ততম রাস্তার কথাসহ গরমের কথা ভাবি। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ তার জন্য একটি দূরের দেশই বটে। ২২ বছর বয়সে জন্মের ইতিহাস নিয়ে কিছুটা ভাবনা আসে তার মনে। তখন মায়ের কাছে এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানতে চান অনিল। কিন্তু এসব কাহিনী শোনার পর আর গভীরে যেতে চাননি। তবে পাকিস্তানী সৈন্যদের যৌন লালসার কাহিনী শোনার পর অনিল তার জন্মদাত্রী সম্পর্কে অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল। যাকে তিনি একজন অসহায় নির্যাতিতা হিসেবে দেখেন। ছেলের চোখে মা ভাগ্যহীনা ছিলেন না। ছিলেন না স্বার্থপর এমনকি মমতাহীনাও। পেটের সন্তানকে ত্যাগ করায় মাকে শাস্তি দেয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না, বরং তিনি মাকে মনে মনে ধন্যবাদ দেন। ভাবেন, যা ভাল তাই করার চেষ্টা করেছিলেন মা। আবার সন্তানকে ত্যাগ করার জন্যও মাকে ধন্যবাদ জানান তিনি। যখন তিনি জানতে পারেন তার মা কখনই তাকে রাখতে পারবেন না বাংলাদেশের সমাজে। যদি দেশে আসা হয়...॥ অনিল জানান, তেমন কোন সুযোগ এলে বাংলাদেশে বেড়াতে আসবেন। যদি আসেন তখন এ দেশে সময় কাটাবেন সেবামূলক কাজ করে। হয়ত তার জন্মস্থানেই কাজ করবেন তিনি। জন্মের সময় তাকে যারা লালন-পালন করেছেন, তাদের প্রতিও রয়েছে অশেষ কৃতজ্ঞতা অনিলের। তিনি বলেন, যেহেতু আমার জীবন এবং যা কিছু আশীর্বাদ আমি পেয়েছি এ যাবতকাল সবই তাদের জন্য। বাংলাদেশে কিছু করা আমার জন্য অত্যন্ত বড় সম্মানের বিষয় হবে। তবে বাংলাদেশে আসার সুযোগ কবে আসবে তিনি এখনও জানেন না। তিনি বলেন, কানাডায় আমি মানুষের সেবা কাজে নিয়োজিত। তিনি বলেন, আমার পথ হলো নারী আর পুরুষের সম্মান ও সম্পর্ককে রক্ষা করা। আমি নারী ও পুরুষকে যৌন আক্রমণাত্মক শারীরিক নিগ্রহ প্রতিরোধের প্রশিক্ষণ দেই। সে কারণে আমি নিজেকে নিয়তি বলে পরিচয় দিয়েছি। সম্প্রতি অনিল মেলিসা বার্টেলো নামে এক ইতালীয় কানাডীয়র সঙ্গে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন। মেলিসার জন্ম টরন্টো শহরে। তিনি নিবন্ধিত নার্স। বর্তমানে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ক্যান্সার কেয়ার ইউনিটে কাজ করেন। ২০১২ সালের তাদের দু’জনের প্রথম দেখা হয়। তারপর কথাবার্তা, আন্তরিকতা প্রেম থেকে পরিণয়। ২০১৪ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি তারা বিয়ে করেন। অনিল এখন টরন্টোতে বসবাস করেন। তার বাবা-মা থাকেন মিসিসাগায়। শত ব্যস্ততার মধ্যেও পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো, যোগাযোগ রাখা, ভাইবোনদের খোঁজ নেয়াসহ পারিবারিক বন্ধন এখনও জীবনের সঙ্গে মিশে আছে।
×