ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কাল থেকে মাংস বিক্রির ঘোষণা

রমজানের আগেই অস্থির গরু ও খাসির মাংসের বাজার

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

রমজানের আগেই অস্থির গরু ও খাসির মাংসের বাজার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রমজান সামনে রেখে তিন মাস আগে অস্থির হয়ে উঠছে গরু ও খাসির মাংসের বাজার। সিটি কর্পোরেশন নির্ধারিত দাম অকার্যকর করে বর্তমানে প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৪৮০-৫০০ টাকায়। মানভেদে ৫৮০-৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খাসির মাংস। আগামী রোজায় এই দামেও মাংস পাওয়া যাবে কি না তা উদ্বিগ্ন বাড়ছে ভোক্তাদের। তবে মাংস ব্যবসায়ীরা বলছেন, গরুর হাটে অতিরিক্ত খাজনা আদায় বন্ধ এবং চাঁদাবাজি বন্ধ হলে মাংসের দাম কমে আসবে। একদিকে মাংসের দাম বাড়ানো হচ্ছে, অন্যদিকে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া সামনে এনে ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছেন মাংস ব্যবসায়ীরা। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ আগামীকাল রবিবার মাংস ব্যবসায়ী ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে বৈঠকের ঘোষণা দিয়েছেন। সমস্যা সমাধানে মন্ত্রীর আশ্বাস পেয়ে মিটলেস ডে হওয়ার পরও রবিবার থেকেই রাজধানীতে মাংস বিক্রি করার ঘোষণা দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে, শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম বলেন, শনিবার পর্যন্ত ধর্মঘট ছিল। ব্যবসায়ীরা তা পালন করবে। আপাতত নতুন কোন কর্মসূচী দেয়া হচ্ছে না। আমরা আশা করি, আলোচনার মাধ্যমে আমাদের দাবি মেনে নেয়া হবে। প্রসঙ্গত, গাবতলী গরুর হাটে অতিরিক্ত খাজনা আদায় বন্ধ, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তাকে অপসারণসহ চার দফা দাবিতে গত সোমবার মাংস বিক্রেতাদের ছয় দিনের এই ধর্মঘট শুরু হয়। তাদের এই ধর্মঘটের কারণে ঢাকার বিভিন্ন কাঁচাবাজারের মাংসের দোকানগুলো বন্ধ রয়েছে। গরু ও খাসির মাংসের সঙ্কটের কারণে রাজধানীতে দাম বেড়েছে সব ধরনের মুরগির। বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি ও ঢাকা মেট্রোপলিটন মাংস ব্যবসায়ী সমিতির যৌথ সংবাদ সম্মেলনে রবিউল জানান, শনিবার পর্যন্ত তাদের ধর্মঘটের কর্মসূচী ছিল, তা পালন করা হবে। আপাতত নতুন কোন কর্মসূচী তারা দিচ্ছেন না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে রবিবার তাদের বৈঠক। সেখানে আলোচনার মাধ্যমে দাবি মেনে নেয়া হবে বলেই তারা আশা করছেন। দাবি মানা না হলে এরপর ধর্মঘট হবে সারাদেশে। আর সব দাবি পুরোপুরি মানলে মাংসের কেজি ৪০০ টাকার নিচে নেমে আসবে বলে আমি আশা করি। আর কয়েকটি দেশ থেকে ঠিকঠাক মতো বৈধ পথে গরু আমদানি করা গেলে এই দাম নেমে আসবে ৩০০ টাকার নিচে। গাবতলী গরুর হাটের ইজারা বাতিল, হুন্ডি ব্যবসায়ী, কালা মইজাকে বিচারের আওতায় আনা, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ‘দুর্নীতিবাজ’ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তাকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা, ট্যানারি শিল্প মালিকদের দুই ভাগে ভাগ করে সফল ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা এবং ব্যর্থ মালিকদের কারখানা বন্ধ করার দাবি রয়েছে মাংস ব্যবসায়ীদের। রবিউল বলেন, বৈধপথে নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমার থেকে গরু আমদানি করতে হবে। আমাদের দেশে আগে ৬৫ শতাংশ পশু ভারত থেকে আনা লাগত। এখন ৩৫ শতাংশ আনা লাগে। আর আগামী তিন বছর আনতে হবে ৩০ শতাংশ পশু। পশু আনার জন্য আমরা যেন বৈধ পথে টাকা নিয়ে যেতে পারি, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, মাংস ব্যবসায়ীদের দাবি মেনে নিন, তা না হলে ইচ্ছামতো দামে মাংস বিক্রি করার হুকুম দিন। ভ্রাম্যমাণ আদালত দিয়ে জেল জরিমানা বন্ধ রাখুন। ঘাটে ঘাটে চাঁদাবাজি আর দুর্নীতিকে মাংসের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন এই ব্যবসায়ী। ভারতীয় বর্ডার পাস করতে ১৫-২০ হাজার টাকা লাগে। সীমান্ত থেকে গাবতলী পৌঁছতে একটি গরুতে ব্যয় হয় ২০-৩০ হাজার টাকা। দেশে ইজারাদার, চামড়া ব্যবসায়ী, হুন্ডি ব্যবসায়ী, ঢাকা উত্তর সিটির কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার কারণে এখন ৫০০ টাকা কেজিতে মাংস বিক্রি করতে হচ্ছে। ট্যানারি মালিকদের সিন্ডিকেটের কারণে চামড়ার দাম কমে যাওয়া নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব। তিনি বলেন, গরুর যে চামড়া আমরা এক সময় ৪ চার থেকে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করতাম, সেই চামড়া এখন ২০০-৬০০ টাকায় বিক্রি করতে হয়। ছাগলের যে চামড়া আমরা এক সময় ৫০০-৬০০ টাকায় বিক্রি করতাম, তা এখন ২০-৩০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। ৬০০ দরখাস্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে দেয়া আছে, একটি দরখাস্তও বিবেচনা করা হয়নি। হাইকোর্টে রিট আবেদন করার পর গাবতলী গরু হাটের ইজারাদার অত্যাচার বাড়িয়ে দিয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রী ডেকেছেন, আমরা তার সঙ্গে কথা বলব। রবিবার বেলা ২টায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন আমাদের ডেকেছে, সেখানেও আমরা যাব। এটা আমাদের পেশা, কোন সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামাতে বা ক্ষমতা দখল করতে আমরা ধর্মঘটে যাইনি। অন্যদের মধ্যে ঢাকা মহানগর মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শেখ আব্দুল বারেক ও সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। এদিকে, মাত্র এক বছর আগেও রাজধানীতে প্রতিকেজি গরুর মাংস কেনা যেত ৪০০ টাকায়। বছর ঘুরতে না-ঘুরতেই এর দাম ৫০০ টাকা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এক বছরে দাম বেড়েছে প্রায় ১০০ টাকা। এ জন্য পরস্পরকে দায়ী করছে মাংস ব্যবসায়ী সমিতি ও গাবতলী পশুর হাট ইজারাদার কর্তৃপক্ষ। ইজারাদারদের পাল্টা অভিযোগ, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মাংস ব্যবসায়ীদের গরু প্রতি ৫০ টাকা, মহিষের জন্য ৭০ টাকা ও ছাগলের জন্য ১৫ টাকা করে খাজনা দিতে হয়। সাধারণ ক্রেতাদের জন্য খাজনা পশুর দামের শতকরা সাড়ে ৩ টাকা। এই সুযোগের অপব্যবহার করে মাংস ব্যবসায়ীরা হাট থেকে পশু কিনে হাটের বাইরে ক্রেতাদের কাছে সরবরাহ করে খাজনার টাকা থেকে কমিশন নিচ্ছেন। এতে ক্ষতি হচ্ছে ইজারাদারের। সবজির দাম কমলেও বেড়েছে চালের দাম ॥ রাজধানীতে সবজির দাম কমলেও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকারি বাজারে গত এক মাসে প্রকারভেদে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) চালের দাম বেড়েছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। এর প্রভাবে খুচরা বাজারে প্রকারভেদে প্রতিকেজি চালের দাম ২ থেকে থেকে ৪ টাকা বেড়েছে। বাজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারসাজিতে বাজারে চালের দাম বেড়ে যাচ্ছে।
×