ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাগেরহাটে বিনা চিকিৎসায় মরতে বসেছেন মুক্তিযোদ্ধা মান্নান

প্রকাশিত: ০১:০৭, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

বাগেরহাটে বিনা চিকিৎসায় মরতে বসেছেন মুক্তিযোদ্ধা মান্নান

বাবুল সরদার, বাগেরহাট ।। বাগেরহাটের চিরুলিয়া-বিষ্ণুপুর রনাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান চৌধুরীর নাম মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই তালিকায় নেই। পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে একাধিক সম্মুখ যুদ্ধে বীরত্মের সাথে অংশ নেওয়া বাগেরহাটের পশ্চিম বাসাবাটী গ্রামের মৃত: আব্দুল ওহিদ চৌধুরীর ছেলে মান্নান চৌধুরী এখন দারিদ্রতার কষাঘাতে জর্জরিত। স্ত্রী, তিন মেয়ে ও দুই ছেলে নিয়ে অনাহারে/অর্ধাহারে তার দিন কাটে। তার ওপর সড়ক দুর্ঘটনায় সম্প্রতি তার একটি পা সম্প্রতি ভেঙ্গে যাওয়ায় স্বাভাবিক চলাচল করতে পারছেন না। অর্থাভাবে ঠিকমত চিকিৎসাও হচ্ছে না। তবুও মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কালে গত বৃহস্পতিবার তিনি অন্যের সহযোগীতায় অতিকষ্টে বাগেরহাট সদর উপজেলা প্রাঙ্গনে হাজির হন। তবে পা ভাঙ্গা থাকায় সিড়ি ডিঙ্গিয়ে ভবনের দ্বিতীয় তলার নির্দিষ্ট কক্ষে হাজির হতে পারেননি। তখন মান্নান চৌধুরীর পক্ষে সেখানে উপস্থিত ’৭১ রনাঙ্গনের সহযাত্রী বন্ধু মুক্তিযোদ্ধারা আর্জি জানান। কিন্তু যাচাই-বাছাই তালিকায় তার নাম না থাকায় তিনি যাচাই-বাছাইয়ের আওতায় পড়েননি। এসময় তার বন্ধু মুক্তিযোদ্ধারা বিষ্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ক্ষুদ্ধ হয়ে তারা মান্নান চৌধুরীর নাম অন্তভূক্ত করার দাবী জানান। দাবীর প্রেক্ষিতে যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য সচিব বাগেরহাট সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার শরীফ নজরুল ইসলাম নিজেই উপজেলা পরিষদ ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে নেমে এসে মুক্তিযোদ্ধা মান্নান চৌধুরীর সাথে সাক্ষাত করেন। সেখানে মান্নান চৌধুরীরর সহযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো: বেলায়েত হোসেন, কথা সাহিত্যিক সুশান্ত মজুমদার, খুলনা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের প্রাক্তন কমান্ডর সেলিম খান পুটু, এ্যাডভোকেট সিদ্দিকুর রহমান নান্না, মানবাধিকার কর্মী তালুকদার আলী আহসান খসরুসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। অত্যন্ত সহজ সরল মুক্তিযোদ্ধা মান্নান চৌধুরী জনকণ্ঠকে জানান, ২৩ বছর বয়সে ৭১’সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রথম দিকেই তিনি চিরুলিয়া-বিষ্ণুপুর রনাঙ্গনে রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে যোগ দেন। এখানে প্রশিক্ষনের পর অস্ত্র সংগ্রহের জন্য বাগেরহাট থানা আক্রমন, কচুয়া থানা আক্রমন, ডেমা পুলিশ ফাঁড়ি আক্রমন, বাঁশবাড়িয়া-সাড়ে-চারানি যুদ্ধ, বেশরগাতী যুদ্ধ, বিষ্ণুপুর রনক্ষেত্রে সরাসরি অংশ গ্রহন করেছেন। কিন্তু যুদ্ধের পর জীবন জীবিকা ও সংসারের ভিড়ে যান। কখনও সনদ পত্রের জন্য কোন আবেদন করেননি। তবে দীর্ঘদিন পর ২০০৫ সালে বন্ধুদের সহায়তা তিনি একবার আবেদন করলেও তখন যাচাই-বাছাই না হবার কারনে তিনি তালিকা ভূক্ত হতে পারেননি। এখন স্ত্রী, ছেলে-মেয়েসহ সাত জনের সংসার নিয়ে তিনি মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন। ভেঙ্গে যাওয়া পায়ের চিকিৎসা করানো তো দূরে থাক, ঠিক মত দু’বেলা খেতে পারছেন না। তার বন্ধু সহযোদ্ধা যুবায়ের নোমা জানান, সম্মুখ যুদ্ধে মান্নান চৌধুরী একজন সাহসী যোদ্ধা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বিভিন্ন লেখা-লেখিতে বারবার তার নাম উল্লেখিত হয়েছে। কিন্তু নিরক্ষর ও অত্যন্ত সহজ-সরল হবার কারনে তিনি সনদপত্র সংগ্রহ বা’ মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম অন্তভূক্ত করার ব্যাপারে উদাসীন ছিলেন। তিনি বীর এ মুক্তিযোদ্ধার নাম দ্রুত মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তভূক্ত কারার জন্য দাবী জানান। এ বিষয়ে বাগেরহাট সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার শরীফ নজরুল ইসলাম বলেন, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নাম অন্তভূক্ত করতে নির্দেশনা অনুযায়ী যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। আবেদন না করার কারনে আব্দুল মান্নান চৌধুরীর নাম তালিকায় নেই। তবুও এ ব্যাপারে তিনি যথাসাধ্য ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলে উল্লেখ করেন। বাগেরহাট জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের কমান্ডার ও যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি সাহিনুল আলম ছানা বলেন, কোন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার নাম তালিকা থেকে বাদ যাবে না। এ ব্যাপারে যা করনিয়, তা করা হবে।
×