ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ড. জীবেন রায়

এবার চতুরঙ্গ নাটকটি মঞ্চস্থ হোক

প্রকাশিত: ০৩:৫৬, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

এবার চতুরঙ্গ নাটকটি মঞ্চস্থ হোক

ইংরেজীতে কন্সপাইরেসি থিওরি বলে একটা কথা মার্কিন মুল্লুকে খুবই প্রচলিত। যেমন ধরুন, ১৯৬৯ সালে আমেরিকার নভোচারী চাঁদে পায়ের ছাপ রেখে এসেছে। অনেক ছবি, ভিডিও আছে। কন্সপাইরেসি থিওরি বলছে, এটা ঠিক নয়। মানুষ চাঁদে যায়নি। এটা আমেরিকায় নেভাদা রাজ্যের মরুভূমিতে তোলা ফটোগ্রাফির কারসাজি। এ নিয়ে ডকুমেন্টারি পর্যন্ত হয়েছে খোদ আমেরিকায়। জন এফ কেনেডি ডাল্লুসে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। কেনেডিকে অসওয়াল্ড টেক্সাস লাইব্রেরি চারতলা থেকে বন্দুক দিয়ে মারেনি। সিআইডির লোকরাই গাছের আড়াল থেকে গুলি করে মেরেছে। প্রতিটি বড় বড় ঘটনার একটা এমনকি একের বেশি কন্সপাইরেসি থিওরি নিয়ে আর্টিক্যাল লেখা হয়, সিনেমা– ডকুমেন্টারি হয়। ২০১২ সালে কানেক্টিকাটে স্যান্ডি হুক নামে একটি প্রাইমারি স্কুলে ২০ জন ছোট ছেলেমেয়েসহ প্রায় ২৬ জন প্রাণ হারায় এক ২০ বছরের ছেলের হাতে। যারা এই আমেরিকাতে গান কন্ট্র্রোলের বিপক্ষে, তারা বলছে, এটা একটা হোক্স। ডেমোক্র্যাটরা ঘটনাটা ঘটিয়েছে গান কন্ট্রোলের জন্য। বুঝুন, ছোট্ট ছেলেমেয়েদের রক্তের বন্যায়ও এ দেশে নৌকা বাইচ হয়। তবে এ ঘটনা কিছু সংখ্যক লোকের সৃষ্টি। এতে মেজরিটি লোকজনের সাপোর্ট নেই। বাংলাদেশে তো রাজনীতিবিদরা এতই তীক্ষè ধীশক্তির অধিকারী যে তারা প্রতনিয়তই নতুন নতুন কন্সপাইরেসি থিওরি বের করেন। তবে ভিডিও কিংবা সিনেমা এখন পর্যন্ত হয়ত হয়নি। ফেসবুকের কল্যাণে বাংলাদেশে এই থিওরি প্রতিটি ঘটনা নিয়েই চালু হয়ে গেছে। এটা অবশ্যই উর্বর মস্তিষ্কের লক্ষণ। যদিও এই রটনাগুলো ক্ষণস্থায়ী। এই যেমন বছরখানেক আগে গুলশানের রেস্তরাঁয় সন্ত্রাসী হামলায় নিহত কুড়িজনের মাঝে এমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফারাজ ছিল। দুই বান্ধবীকে নিয়ে খেতে গিয়ে ফারাজই সন্ত্রাসী হয়ে গেল? ষড়যন্ত্রটা পাকাপোক্ত হতো যদি ফারাজের ছবিটাকে ফটোশপিং করে আইএসের ওয়েবসাইটে জুড়ে দিত। সেই এক্সেসটা হয়ত ষড়যন্ত্রকারীরা পায়নি। বর্তমানে জেলহাজতের বাসিন্দা সাঈদী সাহেবকে এক সময় যেমন চাঁদে পাঠিয়ে দিয়েছিল। এবার বলতে হয়, চতুরঙ্গ নাটকটি কোন্ ঘটনা নিয়ে হবে? বাংলাদেশে দুর্নীতি একটি সাধারণ ব্যাপার। দুর্নীতি হাতেনাতে ধরা পড়ে আবার অনেক দুর্নীতির বিচারও হয়। তবে পদ্মা সেতুর জন্মলগ্ন থেকে অর্থাৎ তখনও কাজই শুরু হয়নি, যেহেতু কোটি কোটি টাকার প্রজেক্ট, দুর্নীতি যে হতে পারে না অথবা হবে না কথাটা তা নয়। একটি দেশের দুর্নীতি তথ্য প্রমাণ ছাড়াই আন্তর্জাতিক অঙ্গন পর্যন্ত ছড়িয়ে গেল। বিশ্বব্যাংক পর্যন্ত নাখোশ হয়ে গেল। কানাডিয়ান লিঙ্ক নিয়ে ইনভেস্টিগেশন শুরু হয়ে গেল। পদ্মার পানি প্রায় নিঃশেষ হয়ে যায়; ব্রিজ আর হবে কি করে? কিন্তু এই ইস্যুতে বর্তমান সরকার এতই কনফিডেন্স ছিল যে নিজস্ব অর্থায়নে কাজ শুরু করে দিল। পদ্মা সেতু আর এখন স্বপ্ন নয়। অনেক কাল পর, খবরের আবার হেডলাইন হলো। কানাডার খবর–পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতি হয়নি। এবার বুঝুন, কন্সপাইরেসি থিওরি কিভাবে কাস্টম মেইড করা হয়। কাজ না শুরু হতেই কন্সপাইরেসি থিওরি এসে গেল। তখনকার মন্ত্রী মহোদয়ের কি নাস্তানাবুদ অবস্থা! অনেক দেশেই দুর্নীতি হয়– বরং না হওয়াটাই অস্বাভাবিক। ভারতে দুর্নীতি বন্ধের উদ্দেশ্যে কারেন্সি নোট বদল করল। যারা এই খবরটির উল্টোটাকে উপজীব্য করতে পারত তারা হতাশ হলো। কোন কিছুতেই আর মেওয়া মিলছে না। আন্দোলনের নামে আর পেট্রোলবোমা বানানোর সুযোগ আসছে না। বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনা নিয়ে নাটক বা সিনেমা করা হয়ত হবে না। কেননা, এক এক সময় গর্দান নেয়ার জন্য যেভাবে লিস্ট বের হতো, তাতে করে সৃজনশীল কিছু করা অবশ্যই কঠিন। আমেরিকার লেইট নাইট কমেডি শোগুলো এক কথায় অনন্য। মানুষকে হাসায় বটে, কিন্তু সত্য কথাগুলো বেরিয়ে আসে। এই মুহূর্তে কমেডি শোগুলোর খোরাকের অভাব নেই। বাংলাদেশের কালচারে তা হওয়ার নয়। কিন্তু পদ্মা সেতু নিয়ে একটা ডকুমেন্টারি হতেই পারে এবং সেটা পদ্মা সেতুর ওপেনিং ডে’তে দেখানো হোক জনকণ্ঠের চতুরঙ্গ নামটি ধার নিয়ে। [email protected]
×