ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সাগর কোড়াইয়া

পথিক তুমি কি পথ হারাইয়াছ?

প্রকাশিত: ০৩:৩৬, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

পথিক তুমি কি পথ হারাইয়াছ?

রাজা-মহারাজা যে পথ দিয়ে চলাফেরা করতেন সে পথকেই রাজপথ বলে অভিহিত করা হতো। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় রাজপথের ধারণা পাল্টে গিয়েছে। মনুষ্য এবং যানবাহন চলাচলযোগ্য প্রশস্ত ও ব্যস্ততম পথই এখন রাজপথ নামে পরিচিত। রাজপথে চলাফেরা বিহীন ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া যাবে না। পৃথিবী, দেশ, সমাজ, পরিবার ও ব্যক্তি জীবনের নানা প্রয়োজনে সবাইকে পথে বের হতে হয়। পথকে পাড়ি দিয়েই আপন গন্তব্যে পৌঁছতে হয় প্রত্যেককে। কিন্তু সে রাজপথ যদি হয় বিড়ম্বনাপূর্ণ তাহলে পথচারীর সে পথ নয়; বরং বিড়ম্বনা সৃষ্টিকারীরই যেন সে পথ। ভাবসম্প্রসারণে পড়েছি, ‘পথ পথিকের সৃষ্টি করে না; বরং পথিকই পথের সৃষ্টি করে’। যদি পথচারী না থাকত তাহলে নিশ্চয় পথের সৃষ্টির কোন প্রয়োজনই পড়ত না। পথিকই যেহেতু পথের সৃষ্টি করে তাহলে পথিকের রাজপথের ওপর নির্বিঘেœ চলার ন্যায্য দাবি রয়েছে। সে পথিক হতে পারে গাড়িতে আরোহী হিসাবে বা পায়ে হাঁটা পথিক। বঙ্কিমচন্দ্রের বিখ্যাত উপন্যাস কপালকু-লার সেই উক্তি যেন আমাদের জীবনে বাস্তব হয়ে উঠেছে, ‘পথিক তুমি কি পথ হারাইয়াছ’? সত্যিই আমাদের জীবনে যে পথ এত গুরুত্বপূর্ণ সেই পথ যেন হারিয়ে ফেলেছি। আমরা সভ্য জাতি হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। অবশ্যই গর্ববোধ করার মতো আমাদের অনেক কিছু রয়েছে। কিন্তু সেই গর্বগুলোকে ধূলিসাত করার মতো এমন কিছু কা-কারখানা করি যা অনেক সময় হাস্যকর। পথের চাহিদা সকলেই মানি; কিন্তু পথের যে একটা দাবি রয়েছে সেই দাবিটা পূরণে আমরা পুরোপুরি ব্যর্থ। পথের চিত্র হতে হবে চলন্ত কিন্তু তা যদি হয় স্থবির তাহলে উন্নয়নের সর্বক্ষেত্রে স্থবিরতা চলে আসে। আজ যে রাস্তা মহাসমারোহে উদ্বোধন করা হলো; কাল তা অন্যের দখলে। রাস্তা দখলমুক্ত করতে আবার আইনের প্রয়োগ। কিছুটা সময়ের জন্য রাস্তা দখলমুক্ত থাকে বটে তারপর আবার সেই আগের অবস্থা। রাস্তার ওপর বাজার-ঘাট বসে পড়া এদেশের নিত্যচিত্র। ফলে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। রাস্তার দুই-তৃতীয়াংশ চলে যায় গাড়ি পার্কিংয়ে। আধা ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে লেগে যাচ্ছে তিন চার ঘণ্টা। রাস্তার পাশে ময়লার ভাগাড় দৃষ্টিকটু এবং পরিবেশ দূষণের কারণ। রাস্তার অর্ধেকটা জুড়ে ময়লার দাপট রাস্তার আসল রূপেরই যেন পরিবর্তন ঘটিয়ে ফেলে। আর রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির বিড়ম্বনা তো রয়েছেই। ফলে নাগরিক জীবন হয়ে পড়ে অতিষ্ঠ। রাস্তায় ট্রাফিক আইন অমান্য করাটাই যেন এক প্রকার আইনে পরিণত হয়েছে। বেপোরোয়া ও বিকট শব্দে যানবাহন চালানো যে নিষিদ্ধ তা অনেক চালক জানেনই না। আমরা সত্যিই কপালকু-লার সেই পথিকের মতো আসল পথটাই হারিয়ে ফেলেছি। ‘এই পথ যদি না শেষ হয়’ ও ‘পিচঢালা এই পথটারে ভালোবেসেছি’ পথকে নিয়ে এই রকম বহু কালজয়ী গান এখনও মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত। পথকে ভালবাসার যে উদাহরণ এই লাইন দুটিতে ফুটে উঠেছে তা আমাদের জীবনেও ফুটিয়ে তুলতে হবে। শুধু রাস্তা তৈরি করে বসে থাকলেই চলবে না। বরং পথ যেন পথিকের চলাচল যোগ্য থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর সে জন্য প্রতিনিয়ত রাস্তার রক্ষণাবেক্ষণে মনোযোগী হওয়া দরকার। বনানী, ঢাকা থেকে
×