ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রবিবার থেকে কার্যকর

অফিস চলাকালে রাস্তা ও ফুটপাথে হকার বসতে দেয়া হবে না

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ১২ জানুয়ারি ২০১৭

অফিস চলাকালে রাস্তা ও ফুটপাথে হকার বসতে দেয়া হবে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নগরবাসীর রাস্তা চলাচল নিরাপদ করতে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে সিটি কর্পোরেশন। এরই ধারাবাহিকতায় ফুটপাথ ও সড়ক দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আগামী রবিবার থেকে কর্মদিবসগুলোতে সন্ধ্যা ৬টার আগে গুলিস্তানসহ আশপাশের এলাকার ফুটপাথে হকার বসতে না দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন। বুধবার নগর ভবন মিলনায়তনে হকার সমিতির নেতা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তাসহ হকার নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এতে হকার্স নেতারা ফুটপাথে দোকান বসাতে প্রশাসনসহ বিভিন্ন পক্ষের চাঁদাবাজির অভিযোগ করেন। পাশাপাশি রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ছত্রছায়ায় লাইনম্যান দিয়ে হকারদের কাছ থেকে টাকা তোলার বিষয়টিও বৈঠকে উঠে আসে। বৈঠকে মেয়র বলেন, সাপ্তাহিক কর্মদিবসে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার আগে আমরা কাউকে ফুটপাথ ও সড়কে বসতে দেব না। সড়কে যানবাহন ও পথচারী চলাচলে কোন প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে দেয়া হবে না। আমাদের এ কর্মসূচীর আওতায় গুলিস্তান, মতিঝিল, পল্টন, জিরো পয়েন্ট, বায়তুল মোকাররম এলাকার ফুটপাথ ও সড়ক থাকবে। আগামী রবিবার থেকে কার্যকরের সর্বাত্মক চেষ্টা করা হবে। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমাদের ম্যাজিস্ট্রেটরা কাজ করবেন। এ কাজে ঢাকা মহানগর পুলিশ সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। তবে সাপ্তাহিক ছুটির দিন হকাররা বসতে পারবেন বলে জানান তিনি। একটি বাসযোগ্য শহরের জন্য ২৫ ভাগ রাস্তার প্রয়োজন হলেও রাজধানীতে আছে মাত্র আট ভাগ। এরমধ্যে অধিকাংশ ফুটপাথ ও সড়ক দখলে। এতে পথচারী চলাচলে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। দীর্ঘদিন থেকে ফুটপাথ ও সড়ক দখলমুক্ত করার তাগিদ রয়েছে বিভিন্ন মহল থেকে। নগর বিশেষজ্ঞরাও সড়ক দুর্ঘটনা ও যানজট রোধে রাস্তা ও ফুটপাথ দখলমুক্ত করার পরামর্শ দিচ্ছেন বারবার। উচ্চ আদালত থেকে এ ব্যাপারে নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। এর আগে সড়ক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কয়েকদফা ফুটপাথ ও রাস্তা দখলমুক্ত করার অভিযান চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। বৈঠকে হকারদের পুনর্বাসনে সিটি কর্পোরেশন সহায়তা করবে বলেও জানান মেয়র সাঈদ খোকন। তিনি বলেন, কেউ বিদেশ যেতে চাইলে সিটি কর্পোরেশনে আবেদন করতে হবে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিদেশ যাওয়ার জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে সহায়তা করবে সিটি কর্পোরেশন। যেখানেই সুযোগ হবে, আমরা চাই তারা নিজেরা নিজেদের কর্মসংস্থান করবে। সভার শুরুতে হকার নেতাদের উদ্দেশ্য করে সাঈদ খোকন বলেন, রাস্তা ও ফুটপাথে পথচারী চলাচল নির্বিঘœ করতে উচ্চ আদালতের নির্দেশ আছে। তাই সড়ক ও ফুটপাথ থেকে হকার উচ্ছেদ করতেই হবে। সভায় হলিডে মার্কেট নিয়ে আলোচনার কথা থাকলেও সে বিষয়ে হকার্স নেতারা কিছু বলেননি। তবে তারা পুনর্বাসন না করে উচ্ছেদ না করা এবং হকারদের পরিচয়পত্র দেয়ার দাবি জানান। কোন নিয়ম না থাকায় রাজধানীতে হকার বাড়ছে বলে সভায় অভিযোগ করেন বাংলাদেশ জাতীয় হকার্স ফেডারেশনের সভাপতি আরিফ চৌধুরী। তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশন এবং ট্রাফিক পুলিশের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করতে হবে। এ কমিটির কাছ থেকে টোকেন নিয়ে ফুটপাথে বসবেন এবং একটি নির্দিষ্ট সময় পর উঠে যাবেন। আর কার্ড থাকলে বাইরের কেউ হকার সেজে বসতে পারবে না। বাংলাদেশ হকার্স ফেডারেশনের সভাপতি এম এ কাশেম অভিযোগ করেন, প্রশাসনের লোকজন ‘লাইনম্যানদের দিয়ে হকারদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছে। লাইনম্যানদের কারণে ফুটপাথে শৃঙ্খলা আসছে না। একেকটি এলাকায় ১০০ হকারের জন্য একজন করে লাইনম্যান বসিয়ে দেন। তারা প্রশাসনের নামে চাঁদা আদায় করে। এসব লাইনম্যানই হকারদের হলিডে মার্কেটে যেতে বাধা দিচ্ছে। তারা কারা এখন বলতে চাইনা। তালিকা আছে তা মেয়রের কাছে জমা দেব। চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করা হবে জানিয়ে মেয়র বলেন, আমাদের কাছে তালিকা আছে, তালিকা অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। আমরা সবগুলো বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি। কারা এসব বিষয়ে প্রণোদনা যোগাচ্ছেন তাদের খবর আমাদের কাছে আছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে ঢাকা মহানগর পুলিশ। ফুটপাথ থেকে হকার তুলে দিলে লাইনম্যান এমনিতেই উঠে যাবে বলে দাবি করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) মফিজ উদ্দিন আহমেদ। লাইনম্যানদের বিরুদ্ধে প্রায় প্রতিদিনই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আমরা একজনকে উঠাই তো আরেকজন এসে বসে। তবে ফুটপাথ থেকে হকার তুলে দিলে এসব লাইনম্যানের ব্যাপারও আর থাকবে না। রাস্তা ও ফুটপাথ থেকে হকার পুরোপুরি তুলে দিতে পারলে ভাল। যদি রাখতেই হয় তাহলে মূল সড়কে না বসিয়ে আশপাশের কম গুরুত্বপূর্ণ সড়কে তাদের বসতে দেয়া যেতে পারে। সভায় দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব আবদুল ওয়াহাব ভূঁইয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
×