ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এবার শীতেও ক্রেতা নেই শীতবস্ত্রের বাজারে

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১২ জানুয়ারি ২০১৭

এবার শীতেও ক্রেতা নেই শীতবস্ত্রের বাজারে

জান্নাতুল মাওয়া সুইটি ॥ ‘আর মাত্র কয় দিন! এখন আর শীতের কাপড় কিনে কি হবে?’ সবার মুখে মুখে এখন এ কথা শোনা যাচ্ছে। মৌসুমের শেষ দিকে ঢাকাবাসী শীতের তীব্রতা কিছুটা টের পেলেও তাতে জমে ওঠেনি শীতবস্ত্র বেচাকেনা। অনেকেই বলছে, শীতকালে শীত কই? এবার জানুয়ারির শুরুতে ঢাকায় গরম কাপড়ের প্রয়োজন অনুভব করে অনেকে বাজারমুখী হলেও কাপড় কেনার প্রয়োজন মনে করছেন না অনেকেই। চাহিদা কম থাকায় দামে স্বস্তি থেকে ঘুরতে এসেও কেউ কেউ কিনছেন শীতের কাপড়। এদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার দেরিতে শীত আসায় শীতবস্ত্র কেনার প্রতি মানুষের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। অল্প কয়েকদিনের জন্য আর কিনে কী হবে, এছাড়া বছরের শুরুতে ছেলেমেয়েদের শিক্ষাখাতে বাড়তি খরচে অভিভাবকদের এদিকে আগ্রহ কম বলে মনে করছেন তারা। তার ওপর মাসব্যাপী বাণিজ্যমেলা শুরু হওয়ায় ক্রেতাদের আগ্রহে আশা হারিয়েছেন তারা। ফার্মগেটের ফুটপাথ থেকে একটি সোয়েটার কিনে খুশি আনোয়ার হোসেন। ‘এবার দাম বেশিও না, কমও না। দাম ঠিকই আছে,’ বলেন তিনি। সেখানকার ফুটপাথের ব্যবসায়ী মোতালেব হোসেন বলেন, ‘মানুষের কাছে মনে অয় (হয়) টাকা নাই। বাচ্চাগো স্কুলে ভর্তি, বইখাতা কিন্নাই (কিনে) তো বেক (সব) টাকা খরচ অইয়া (হয়ে) যায়। শীতের পোশাক কিনবে ক্যামনে (কিভাবে)?’ রাজধানীর বঙ্গবাজার, নিউ মার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড, ফার্মগেটের পাইকারি ও খুচরা কাপড়ের বাজার ঘুরে তেমন ভিড় দেখা যায়নি। বঙ্গবাজারে বিক্রি হচ্ছে শীতের নানা কাপড়। নারী-পুরুষ ও শিশুদের বিভিন্ন ধরনের কাপড় পাওয়া যাচ্ছে থেকে শুরু করে দুই হাজার টাকার মধ্যে। নিউমার্কেটের সামনের ফুটপাথে মেয়েদের চাদর সাজিয়ে কয়েকজন বসলেও ক্রেতা হাতেগোনা। হামিদুল নামে একজন বিক্রেতা বলেন, ‘ফুটপাথের দোকান বলে দাম কম। কিন্তু এবার ক্রেতা কম বলে বেচাকেনাও কম।’ ‘এইগুলো চায়না চাদর। দোকানে গেলে ৫০০ টাকার কমে পাইবেন না। কিন্তু বেচাবিক্রি কম দেইখা (দেখে) আমরা দুই শ’ টাকায় দিয়া (দিয়ে) দিতাছি (দিচ্ছি)।’ ছেলেদের জ্যাকেট নিয়ে বসেছেন হারুন নামে আরেকজন। তিনি বলেন, ক্রেতা না থাকায় ৬০০ টাকার জ্যাকেট এখন ৪০০ টাকায় বিক্রি করছেন। ‘শীততো নাই। ব্যবসা হইব (হবে) ক্যামনে (কিভাবে)? এজন্যই দাম কমাইয়া (কমিয়ে) দিসি।’ নিউ মার্কেট এলাকার গ্লোব শপিং মার্কেটে শীতের কাপড় কিনতে এসেও ফিরে যান একটি বেসরকারী ব্যাংকে কর্মরত মোঃ হাসিবুল হক। একটি দোকানে ঢুকে সোয়েটার দেখেন। দাম বেশি মনে হওয়ায় তা আর কেনা হয়নি। ‘এবার তো শীতই লাগে না। শীতের কাপড়ের প্রতি আগ্রহও তাই কম। কিনলেও হয়, না কিনলেও চলে,’ বলেন তিনি। ওই মার্কেটের একটি দোকানের মালিক ইকবাল হোসেন বলেন, এবার ব্যবসায় খুব মন্দা যাচ্ছে তাদের। ‘একে তো শীত কম। আবার বাণিজ্যমেলা শুরু হয়েছে। লোকজন সব ওই দিকে ছুটছে। এই দিকের মার্কেট ফাঁকা।’ অন্যদিকে, মিরপুর রোড সংলগ্ন ধানম-ি হকার্স ও নুরজাহান মার্কেটে ব্যবসায়ীরা শীতের পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসলেও ক্রেতার দেখা নেই। শীতের কাপড়ের দোকানের চেয়ে অন্য কাপড়ের দোকানগুলোতে বেশি ভিড় লক্ষণীয়। রুকাইয়া নামের এক ছাত্রী বলেন, ‘এবার এমনিতেই শীত কম। তারপর এখানে শীতের পোশাকের দাম অনেক বেশি চাচ্ছে। তাই আর শীতের পোশাক কেনা হয়নি।’ এ মার্কেটের তুলনায় নিউ মার্কেটে ভিড় কিছুটা বেশি হলেও দাম নিয়ে স্বস্তির কথা বললেন কয়েকজন ক্রেতা। ফাতেমা জাহান নামে একজন বলেন, ‘এবার তো ঢাকায় শীত অনেকটা কম। শীতের কাপড় না কিনলেও চলে যাচ্ছে। তাই কেনা হয়নি। আজ ঘুরতে আসলাম। পছন্দ হয়ে যাওয়ায় কিনে ফেললাম।’ ঢাকার পাইকারি বাজারেও শীতের পোশাকের বেচাকেনা কম বলে বঙ্গবাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান। তারা বলেন, প্রতিবছর অক্টোবরের শুরু থেকেই তাদের ওখানে শীতের কাপড়ের বেচাকেনা শুরু হয়, নবেম্বর-ডিসেম্বর হয়ে তা জানুয়ারি পর্যন্ত চলে। এবার প্রথম দিকে কিছুটা বেচাকেনা হলেও ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে কমে গেছে। দোকান ভর্তি শীতের কাপড় থাকলেও নেই ক্রেতার ভিড়। বঙ্গবাজারে জ্যাকেট কিনতে এসেছিলেন পাবনার মালেক নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ঢাকায় তেমন শীত না থাকলিও (থাকলে), আমারে (আমাদের) পাবনায় অনেক শীত। ‘পাবনায় তো বেশ শীত পড়তিছে (পড়ছে)। ঢাকায় আসলাম (আসছি), ভাবলাম একটা জ্যাকেট কিনে নিয়েই যাই। দুই হাজার টাকায় কিনলাম। দাম মনে হচ্ছে ঠিকই আছে।’ তিনি যে দোকান থেকে জ্যাকেটটি কেনেন, সেই দোকানের বিক্রেতা মোজাম্মেল ইসলাম বলেন, ‘শীত মৌসুম শেষ হতে চলায় কাপড়ের দামও কমে গেছে। এই জ্যাকেট গত মাসে তিন হাজারের কমে বেঁচি নাই। কিন্তু শীত চলে যাচ্ছে তাই বেঁচে দিচ্ছি। এখন শীত বাড়লেও বেচাকেনা আর বাড়বে না। ১০-১৫ দিনের জন্য কেউ শীতের কাপড় কেনে না। আমাদের মার্কেটে বেচাকেনা যা হয় তা শীতের শুরুতেই হয়ে যায়।’ শীতের কাপড়ের পাশাপাশি কম্বল বিক্রেতাদেরও মাথায় হাত পড়েছে। বঙ্গবাজারের একটি কম্বলের দোকানের মালিক আহমেদ শেখ বলেন, এবার কম্বলও বিক্রি হয়েছে অনেক কম। পাইকার নাই বাজারে। এই সপ্তাহেই দোকান থেকে কম্বল সরিয়ে নেবেন বলে জানালেন তিনি। পৌষের মাঝামাঝিতে যখন তীব্র শীত অনুভবের কথা, সেখানে এবার শীতের দেখা নেই। উত্তরাঞ্চলে ঘন কুয়াশা ও শীতের আমেজ থাকলেও মধ্যাঞ্চলে এখনও আসেনি লেপ মুড়ি দেয়া সেই শীত। আবহাওয়ার তিন মাসের দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, জানুয়ারি মাসে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে এবং নদ-নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। এ সময় এসব অঞ্চলে ১ থেকে দুটি মাঝারি (৬-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ধরনের শৈত্যপ্রবাহ ও অন্যত্র মৃদু (৮-১০ ডিগ্রী সেলসিয়াস) শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। সামগ্রিকভাবে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতেরও সম্ভাবনা রয়েছে। গত বছর মাঘ মাসের (২০ জানুয়ারি) শুরুতে বৃষ্টিও ছিল। এ সময় শীতের তীব্রতাও ছিল বেশি।
×