ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ড্রোন আটকে ট্রাম্পকে সংকেত দিল চীন

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ১১ জানুয়ারি ২০১৭

ড্রোন আটকে ট্রাম্পকে সংকেত দিল চীন

অভিযানটি লক্ষণীয় নিরুত্তাপ পরিবেশে ও ঠা-া মাথায় পরিচালিত হয়েছিল। গত ১৫ ডিসেম্বর চীন একটি মার্কিন ডুবো ড্রোন আটক করে। মার্কিন নৌবাহিনীর একটি জাহাজ থেকে ৫শ’ মিটারেরও কম দূরে অবস্থানরত একটি চীনা নৌবাহিনীর জাহাজ ছোট একটি তরী নামিয়ে দিয়ে সাগরের জলরাশির নিচ থেকে ড্রোনটি আটক করে জাহাজে তুলে নেয়। ঘটনাটি ঘটে দক্ষিণ চীন সাগরে। চীন বলে যে, ওখানে মার্কিন নৌবাহিনী জাহাজের ঘুরেফিরে বেড়ানোর মতো কোন কাজ ছিল না। ঘটনাটি দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সঞ্চারের জন্য স্পষ্ট ছিল। তবে সৌভাগ্যক্রমে কোন অঘটন ঘটেনি, কোন গুলি ছোঁড়াছুঁড়ি হয়নি। আমেরিকানরা এ ঘটনার তীব্র ও আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানানোর পর চীন যথাযথ পন্থায় ড্রোনটি ফিরিয়ে দিতে সম্মত হয়। সেই উপযুক্ত সময়টি আসে পাঁচ দিন পর। চীন সাগরের যে জায়গায় ড্রোনটি আটক করেছিল ঠিক সে জাযগায় ওটি আমেরিকার কাছে হস্তান্তর করে। পেন্টাগন এ ঘটনায় স্পষ্টতই বিরক্ত হলেও ড্রোনের গুরুত্বকে খাটো করে দেখিয়েছে। বলেছে, ওটার দাম মাত্র দেড় লাখ ডলার, এর প্রযুক্তির বেশির ভাগই বাণিজ্যিকভাবে পাওয়া যায়। ড্রোনটি নাকি লবণাক্ততা ও তাপমাত্রাসহ জলরাশির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য পরীক্ষা করছিল। কিন্তু ব্যাপারটা মোটেও আর ছেলে খেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ না-ও থাকতে পারে। কারণ এমনিতেই পরমাণু শক্তিধর এই দুই দেশের সম্পর্ক অতি সুদিনেও কখনই স্বস্তিকর ছিল না। তার উপর ডোনাল্ড ট্রাম্প যেখানে ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন সেখানে এমন একটি ঘটনা দুদেশের মধ্যে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে। ট্রাম্প ইতোমধ্যে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং ওয়েনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে চীনের ক্রোধের কারণ ঘটিয়েছেন। তদুপরি তিনি চীনের কাক্সিক্ষত একচীন নীতিকে চ্যালেঞ্জ চীনের বাড়তি উষ্মা সৃষ্টি করেছেন। বলাবাহুল্য, চীনের একচীন নীতির মূর্খ বক্তব্য হলো তাইওয়ান চীনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। দক্ষিণ চীন সাগরের সুবিস্তৃত এলাকা চীন নিজের বলে দাবি করে আসছে। এই দাবিকৃত এলাকার বহিঃসীমায় অর্থাৎ ফিলিপিন্সের সুবিক বে বন্দর থেকে প্রায় ৫০ মাইল দূরে ড্রোন আটকের ঘটনাটি ঘটেছে। এই সুবিক বে বন্দরে একসময় আমেরিকার বিশাল নৌঘাঁটি ছিল। চীনের নৌশক্তির নাগাল কতদূর। সংঘাতের ন্যূনতম ঝুঁকি নিয়ে তা দেখানোর জন্য হিসাব কিতাব করেই ঘটনাটা ঘটানো হয়েছে। বলাবাহুল্য, মার্কিন নৌবাহিনীর যে জাহাজটি ড্রোন চালাচ্ছিল সেটি কোন যুদ্ধযান ছিল না। দায়িত্ব নেয়ার পর ট্রাম্প চীনের দিক থেকে কঠোরতর চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারেন। কারণ দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের উপস্থিতি ক্রমশ বাড়ছে। চীন এই সাগরে কিছু দ্বীপ গড়ে তুলছে এবং সেখানে আধুনিক সমর সম্ভার বসাচ্ছে। ট্রাম্পের দুই পূর্বসুরীও দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম কয়েক মাসের মধ্যে চীনের সঙ্গে বিপজ্জনক সামরিক সংঘাতের মুখোমুখি হওয়ার অবস্থায় পৌঁছেছিলেন। জর্জ বুশ ২০০১ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর এপ্রিল মাসেই এমন এক পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। চীনের দক্ষিণ উপকূলে একটি চীনা জঙ্গী জেট বিমানের সঙ্গে একটি মার্কিন গোয়েন্দা বিমানের আকাশে সংঘর্ষ হয়। এতে চীনা বৈমানিক নিহত হয় এবং মার্কিন বিমানটি চীনের একটি বিমানক্ষেত্রে জরুরী অবতরণ করে। কূটনৈতিক ধৈর্য্য পরীক্ষার ১১ দিন পর মার্কিন বিমানের ২৪ জন ক্রুকে ছেড়ে দেয়া হয়। উন্নত প্রযুক্তিতে পরিপূর্ণ মার্কিন বিমানটিকে কয়েক মাস পর খ- খ- আকারে ফেরত দেয়া হয়। ২০০৯ সালের মার্চে ঘটে আরেক ঘটনা। তখন বারাক ওবামা ক্ষমতায় এসেছেন। পেন্টাগনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী মার্কিন গোয়েন্দা জাহাজ ইমপিকেবল চীন উপকূল থেকে ৭৫ মাইল দূর দিয়ে চলছিল। এমন সময় চীনা বিমান এর মাথার উপর দিয়ে চক্কর দিতে থাকে এবং পাঁচটি চীনা জাহাজ এসে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যায়। প্রথমে চীনারা মার্কিন জাহাজটিকে জরুরী ভিত্তিতে থামতে বাধ্য করে। তারপর জাহাজটি চলার চেষ্টা করলে ওরা জঞ্জাল ও আবর্জনা জাহাজের সামনে ছড়িয়ে দেয়। জাহাজটি যে সোনার যন্ত্র টেনে নিয়ে চলছিল চীনারা তা ছিনিয়ে নেয়ারও চেষ্টা চালায়। তবে ট্রাম্প ও চীনের মধ্যে ঝগড়াবিবাদটা এখনও তেমন গুরুতর রূপ নেয়নি। এক টুইটার বার্তায় ট্রাম্প ড্রোনটি নেয়ার জন্য চীনের দারুণ সমালোচনা করেছেন এবং পরে বলেছেন, চীনের ওটা রেখে দেয়া উচিত। অন্যদিকে চীনা মিডিয়ায় ট্রাম্পকে বেশ একহাত নেয়া হয়েছে। একটি পত্রিকার মন্তব্য হলো, “একটা পরাশক্তিকে কিভাবে নেতৃত্ব দিতে হয় ট্রাম্পের সে সংক্রান্ত কোন ধারণাই নেই।” অপরদিকে বেজিংয়ের গ্লোবাল টাইমস বলেছে, হোয়াইট হাউসে আসার পর ট্রাম্প তার পথ না বদলালে চীনও সংযম প্রদর্শন আর করবে না। চলমান ডেস্ক সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×