ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

থামছে না ফুটপাথে মোটরসাইকেল দৌরাত্ম্য

প্রকাশিত: ০৪:০১, ১৪ মে ২০১৬

থামছে না ফুটপাথে মোটরসাইকেল  দৌরাত্ম্য

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ তখন সন্ধ্যা। অফিসফেরত মানুষ বাড়ি ফিরছে। কেউ ফুটপাথ ধরে হেঁটে, কেউ বা নানা গাড়িতে। মতিঝিল থেকে বাংলামোটরে বাসায় ফিরছেন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী সাদিয়া জাহান উর্মি। ঘণ্টাকাল যানজটে ধুঁকে ধুঁকে হোটেল রূপসী বাংলা (বর্তমানে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল) পর্যন্ত এলেন। কিন্তু এখানে যেন আর গাড়ি চলে না। থমকে আছে নাগরিক জীবন। অগত্যা গাড়ি থেকে নেমে ফুটপাথ ধরে হাঁটতে শুরু করেন তিনি। হোটেল রূপসী বাংলার বিপরীতে পেট্রলপাম্পের কাছে উর্মিকে হঠাৎ ফুটপাথ থেকে ছিটকে পড়তে হয়। পেছন থেকে প্রায় গায়ের ওপর এসে বিকট শব্দে হর্ন বাজিয়ে পাশ কেটে যায় একটি মোটরসাইকেল। উর্মি তখন নিজেকে সামলে নিয়ে কী যেন বলতে থাকলেন। কাছাকাছি যেতেই কানে আসে তার কথাগুলো- ইডিয়েট, আমরা ফুটপাথে এমনিতেই হাঁটতে পারছি না। আর কত বড় সাহস ফুটপাথে মোটরসাইকেল চালায়! পরে প্রসঙ্গটি নিয়ে কথা বললে উর্মি তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এটা কখনোই উচিত নয়। ফুটপাথ হলো পথচারীদের জন্য। অথচ ইদানিং ফুটপাথেও একইভাবে মোটরসাইকেল চলতে দেখা যাচ্ছে। কিছুক্ষণ আগে কী ঘটল দেখতেই তো পেলেন, একটুর জন্য আমি রাস্তার উপরে পড়ে যাইনি। এ সময় উর্মির পক্ষে আরেক পথচারী সেক্রেটারিয়েট রোডের ব্যবসায়ী সাদেক হোসেন ঢালী বলেন, শুধু যানজট হলেই ফুটপাথে মোটরসাইকেল চলছে এমন নয়, ফুটপাথে বাইক চালানোকে অনেকে ফ্যাশন হিসেবেও নিয়েছে। রাজধানীতে ফুটপাথে চলার পথে হকারদের যে বিড়ম্বনা, তাকেও আজ ছাড়িয়ে গেছে মোটরসাইকেলের উৎপাত। আর এতে অতিষ্ঠ রাজধানীর পথচারীরা। প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। এমনকি যোগাযোগমন্ত্রীও এ বিষয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে একসময় বলেছিলেন, এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। যোগাযোগমন্ত্রী বলেছিলেন, মোটরসাইকেলের উৎপাতে ফুটপাথে পথচারীরা শান্তিমতো চলাচল করতে পারে না। এরা মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনার একটি বড় কারণ এই মোটরসাইকেল। অবৈধ মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ করতে এবং ‘বেপরোয়া চালকদের’ বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে সড়কপরিবহন মন্ত্রী জানিয়েছিলেন সেই ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি। এরই মধ্যে কেটে গেছে ২৬টি মাস। সেই সঙ্গে রাজধানীতে বেড়েছে মোটরসাইকেলের সংখ্যা। চালকরা হয়ে উঠেছে আরও বেশি বেপরোয়া। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে এখনও নেয়া হয়নি মন্ত্রীর সেই কঠোরতম ব্যবস্থা। ফুটপাথে মোটরসাইকেল ওঠার বিষয়ে জানতে চাইলে হোটেল রূপসী বাংলা মোড়ে ট্রাফিক সিগনালে দায়িত্বরত শাহবাগ থানার এসআই রেজাউল করিম বলেন, আমাদের ‘সবার আগে আমি যাব’ মানসিকতা আগে পরিবর্তন করতে হবে। নইলে এ সমস্যা থেকেই যাবে। তার পরও আমরা এ বিষয়ে সচেতন আছি। ফলে ফুটপাথে মোটারসাইকেল নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে পারেনি। এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ফুটপাথ হলো জনসাধারণর চলাচলের জন্য। ফুটপাথে মোটরসাইকেল চালানোর কোনো সুযোগ নেই এবং এটি একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যারা আইন অমান্য করে ফুটপাথে মোটরসাইকেল চালাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেয়া হচ্ছে। মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩-এর ১৪৩ ধারায় বলা আছে, রাস্তার প্রকৃতি, অবস্থা বিবেচনায় জনসাধারণ বিপদের সম্মুখীন হতে পারে এমনভাবে কেউ গাড়ি চালালে সে ব্যক্তি অপরাধী হিসেবে বিবেচিত হবে। এবং এটি একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যাতে সর্বোচ্চ ৬ মাসের কারাদ- অথবা ৫০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা এবং অপরাধীর গাড়ি চালানোর সনদ একটি নির্ধারিত সময়ের জন্য অকার্যকর বলে গণ্য হবে। তিন বছরের মধ্যে এর পুনরাবৃত্তি ঘটালে শাস্তি আরও বেড়ে যাবে।
×