ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মেরীনা চৌধুরী

নারীর অগ্রযাত্রা

প্রকাশিত: ০৬:৪৪, ১৩ মে ২০১৬

নারীর অগ্রযাত্রা

দীর্ঘদিন ধরে এ দেশের অবরোধবাসিনীরা নিজেদের অধিকার আদায়ে লড়াই করছে। তারই ধারাবাহিকতায় তারা দ্রুত নিজেদের এগিয়ে নিচ্ছে, এগিয়ে দিচ্ছে দেশকে। প্রায় শতবর্ষ পূর্বে যার শুভসূচনা করেছিলেন নারীমুক্তি আন্দোলনের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন। সীমাহীন বাধা-বিপত্তির দেয়াল ভেঙ্গে তাদের যে অগ্রযাত্রা তার মধ্যে নারীর ক্ষমতায়ন অন্যতম। অর্থনীতির অন্যতম প্রধান খাত পোশাক শিল্পে নারীর একচ্ছত্র ভূমিকা আর সেই ক্ষুদ্র ঋণের অসামান্য সাফল্য বাংলাদেশকে নোবেল পুরস্কারসহ বিশ্বখ্যাত এনে দিয়েছে। এমনকি প্রবাসী কর্মীরা দেশের অর্থনীতিতে নিরন্তন তাদের মূল্যবান শ্রম দিয়ে চলেছেন যা নিঃসন্দেহে উল্লেখযোগ্য পাশাপাশি রাজনীতিতে নারীর ক্রমবর্ধমান ভূমিকা, সামরিক, বেসামরিক, প্রশাসন, বিচার বিভাগ, শিক্ষা এবং দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালনসহ জ্ঞানে বিজ্ঞানে সর্বোচ্চ পদে নারীর দৃঢ় অগ্রযাত্রা যা আজ বিশ্ববাসীর বিস্ময়মুগ্ধ মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। খেলাধুলার মতো পুরুষকেন্দ্রিক ক্ষেত্রে নারী পিছিয়ে নেই। টেবিল টেনিস খেলোয়াড় জোবেদা রহমান লিমু কিংবা দাবা সাম্রাজ্ঞী রানী হামিদ থেকে শুরু করে হালের সালমা খাতুন এবং সম্প্রতি ভারতে আয়োজিত এসএ গেমস-এ অংশগ্রহণকারী প্রমীলা ভারোত্তলক মাবিয়া আক্তার সীমান্ত ও দেশের ক্রীড়াঙ্গনের এই মুহূর্তের সেরা তারকা একজোড়া স্বর্ণজয়ী জলকন্যা মাহফুজা খাতুন শিলা। আবার হিমালয়শৃঙ্গ এভারেস্ট জয় করার মতো দুঃসাধ্য কাজ করে দেখিয়েছেন নিশাত মজুমদার। তিনিই প্রথম বাংলাদেশী নারী। এরা প্রত্যেকেই নিজেদের ব্যক্তিগত নৈপুণ্য দেখিয়ে বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন। আবোধবাসিনীর অর্জন শুধু দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই বিশ্বের অনেক সম্মানজনক স্থানগুলোতে তারা জায়গা করে নিয়েছেন, দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন। বিশেষ করে রাজনীতিতে। বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রপ্রধান আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন- বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত বিজ্ঞানী ড. এন নীনা আহমাদ। আর এক বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্যারিস্টার স্বপ্নারা খাতুন, ব্রিটেনের সার্কিট জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনিই প্রথম বাংলাদেশী যাকে ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ জজ হিসেবে নিয়োগ দেন। এছাড়া ব্রিটিশ পার্লামেন্টে লেবার পার্টির এমপি নির্বাচিত হয়েছেন রুশনারা আলি, রেজওয়ানা সিদ্দিক টিউলিপ, রূপা হক। তারাই বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে গৌরব ও সম্মানজনক আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। নারীকে মানুষ হিসেবে যোগ্য সম্মান, মর্যাদা ও অধিকার দেয়ার লক্ষ্যে পৃথবীব্যাপী নানা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারও নারীর সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ প্রণয়ন করেছে। কিন্তু এই নীতিমালার যথাযথ বাস্তবায়ন নেই। এই নীতিমালার পুরোপুরি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে যদি সমাজ পুরুষতান্ত্রিক অন্যায্য মূল্যবোধ থেকে বেরিয়ে আসে। ছেলেবেলা থেকেই একটি ছেলে শিশু পিতৃতান্ত্রিক মনোভাব নিয়ে বেড়ে ওঠে। পরিবার ও সমাজ তাকে সেই বোধ লালন করতে সহায়তা করে। পুরুষের এই অভিব্যক্তিই নারীর সমান অধিকার অর্জনের ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। অন্যদিকে রাষ্ট্রের আইনি কাঠামোর দুর্বলতা যা আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে নানা জটিলতা সৃষ্টি করে নারীর সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। সুতরাং নারীকে তার সর্বময় অধিকার। ফিরিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে ‘জাতীয় উন্নয়ননীতি ২০১১’ এর পুনঃবাস্তবায়ন করা অত্যন্ত জরুরী। সেই সঙ্গে পিতৃতান্ত্রিক অন্যায্য মূল্যবোধ যেন ছেলে শিশুর মনে শেকড় উৎপন্ন করতে না পারে সেদিকে সচেতন হয়ে পরিবার ও সমাজ মেয়ে শিশু ও ছেলে শিশুর মধ্যে কোন তফাৎ নেই সেই বোধ উভয় সন্তানের মনে সৃষ্টি করতে হবে। আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। আমরা আশা করি বর্তমানে পুরুষের পাশাপাশি নারীর যে অগ্রযাত্রা ভবিষ্যতে তা যেন আরও বেগবান হয় নারী তার অধিকার, মর্যাদা সম্মান প্রতিষ্ঠা করতে পারে। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে এই কামনা। বিশ্বের সব নারীকে আজকের দিনে অভিনন্দন।
×