ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রিমিয়ার ক্রিকেট ॥ মিরপুরে আবাহনীর হার ৮ উইকেটে

আবাহনীকে উড়িয়ে দিল মোহামেডান

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ১৩ মে ২০১৬

আবাহনীকে উড়িয়ে দিল মোহামেডান

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ কোথায় মর্যাদার ম্যাচে উত্তেজনা তৈরি হবে। কোথায় ক্রিকেটাররা স্নায়ুচাপে থরথর করে কাঁপবে। কোথায় চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়ে শেষপর্যন্ত ম্যাচের ভাগ্য দুলতে থাকবে। কোথায় শেষ মুহূর্তে এসে একটি দলের জয় নিশ্চিত হবে। তা না হয়ে ম্যাড়ম্যাড়ে একটি ম্যাচ হয়ে গেল। এক তরফা ম্যাচ হয়ে গেল। যে ম্যাচে তামিম ইকবালের আবাহনীকে উড়িয়ে দিল মোহামেডান। ৮ উইকেটের সহজ জয় তুলে নিল ‘সাদা-কালো’ শিবির। এই জয়ে ৬ ম্যাচে ৫ জয়ে ১০ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষেই থাকল মুশফিকুর রহীমের মোহামেডান। মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের ম্যাচটিতে টস জিতে মোহামেডান। এবং আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেয়। আবাহনী ব্যাট করে সুবাশিষ রয়ের (৩/৩৪) বোলিং গতির সামনে কুলিয়ে উঠতে পারেনি। এর সঙ্গে ২ উইকেট করে নেয়া হাবিবুর রহমান ও নাঈম ইসলাম জুনিয়রের বোলিং দ্যুতি যোগ হলে ৪৮.৪ ওভারে ১৮৩ রান করতেই অলআউট হয়ে যায় আবাহনী। জবাবে উপুল থারাঙ্গার অপরাজিত ৭৭ রানে ৪৩.৫ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ১৮৫ রান করে অনায়াসে ম্যাচ জিতে নেয় মোহামেডান। আবাহনী শুরু থেকেই ম্যাচে এতটা থুবড়ে পড়বে কেউ ভাবতেও পারেনি। ৫ রানেই তামিম ইকবালকে (৪) সাজঘরে পাঠান সুবাশিষ। শুরু হয়ে যায় আবাহনীর ভরাডুবির আরেকটি দিন। ষষ্ঠ ওভারে আবাহনীর স্কোরবোর্ডে যখন ১৫ রান, এমন সময় হাবিবুর রহমান জোড়া আঘাত হানেন। এক ওভারে লিটন কুমার দাস ও অভিষেক মিত্রকে শিকার করে আবাহনীকে একেবারে ছন্নছাড়া করে দেন। এরপর চতুর্থ উইকেটে গিয়ে ভারতের মানবিন্দর বিসলা ও নাজমুল হোসেন শান্ত বড় জুটি গড়ার ইঙ্গিত দেন। কিন্তু জুটিটি যখনই ৪৭ রানে পৌঁছে নাঈম ইসলাম জুনিয়র এবার বিসলাকে আউট করে দেন। তখনই বোঝা হয়ে যায় দিনটি মোহামেডানেরই হতে চলেছে। ৬২ রানে বিসলার আউটের পর শান্ত ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত মিলে দলকে ১০০ রানে নিয়ে যান। শত রান স্কোরবোর্ডে জমা হতেই শান্ত আউটের পর আবার ধস নামে। ১১৭ রানের মধ্যে ৭ উইকেটের পতন ঘটে যায়। মনে করা হচ্ছিল, আবাহনী ১৫০ রানেও পৌঁছাতে পারবে না। তখনই আসল চমকটি দেখা যায়। বোলার তাসকিন, ব্যাটসম্যান হয়ে ওঠেন। আরেক পেসার আবুল হাসান রাজুকে নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন। অষ্টম উইকেটে ৫১ রানের জুটি গড়েন। যা দলকে দেড় শ’ অতিক্রম করায়। ১৬৮ রানে নিয়ে যায়। এ মুহূর্ত থেকে ১৮৩ রানের মধ্যেই আবাহনী অলআউট হয়ে যায়। তাসকিনের ওপর ভর দিয়ে শেষ মুহূর্তে আবাহনীর স্কোরবোর্ডে ভাল রান যোগ হয়। ৪৯ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় অপরাজিত ৩৮ রান করেন তাসকিন। তাসকিনের শেষ মুহূর্তের ব্যাটিং ঝলকে আবাহনীও যেন জয়ের আশা দেখতে থাকে। জুবায়ের হোসেন লিখন, তাসকিন আহমেদ যে আছেন। কিন্তু তারা কিছুই করতে পারলেন না। মোহামেডানকে চাপেই ফেলতে পারলেন না। ১৯ রানের সময় সৈকত আলী রিটায়ার্ড হার্ট হলেন। এরপর ৯৭ রানে গিয়ে এজাজ আহমেদ (৪২) আউট হওয়াতে প্রথম উইকেটের পতন ঘটে। ১১৬ রানে গিয়ে অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমও আউট হন। এরপর আর উইকেটই পড়েনি। উপুল থারাঙ্গা ও নাঈম ইসলাম মিলে তৃতীয় উইকেটে ৬৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন। ১০৫ বলে ৭ চারে অপরাজিত ৭৭ রান করেন থারাঙ্গা। আর নাঈম করেন অপরাজিত ২৫ রান। তবে ম্যাচ সেরা কিন্তু থারাঙ্গা নন, হন সুবাশিষ রয়। শুরুতেই তামিমকে সাজঘরে ফেরান। এরপর মিডলঅর্ডারে সৈকত যখন নিজেকে সামলে নিয়ে ব্যাট হাতে জ্বলে ওঠার অপেক্ষায় থাকেন, তার উইকেটটিও তুলে নেন সুবাশিষ। আর সাকলায়েন সজিবকে রানের খাতাই খুলতে দেননি। শুরুতে আবাহনীর ইনিংসে ধস নামান। মাঝপথে যখন আবাহনী ব্যাটসম্যানরা নিজেদের সামলে নিতে থাকেন, তখনও সুবাশিষ টপাটপ দুটি উইকেট নিয়ে ছন্নছাড়া করে দেন। তাতেই বাজিমাত করে এ বোলার। হারের পর আবাহনী অধিনায়ক তামিম ইকবাল বলেন, ‘আমরা তিনটা ম্যাচ হেরে গেছি, এখন বাকি কয়টা ম্যাচ জিততে হবে। যখন তিনটা উইকেট পরে গেছে তখন আমরা ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিলাম। তারপরও আমি আশা করতে ছিলাম আমরা কমপক্ষে ২৩০/২৪০ করব। এতে বোলারদের একটা সুযোগ থাকে, কারণ যদি ভাল শুরু করতে পারতাম, ক্রিকেটে যে কোন কিছুই হতে পারে। মাঝেখানে যখন একের পর এক উইকেট পরছিল তখন খেলাই কঠিন হয়ে পরেছিল। ধন্যবাদ আবুল ও তাসকিনকে। কারণ ওদের জন্যই ১৮০ হয়েছে। আমি তো ভেবেছিলাম ১২০-ও হবে না। আসলে এভাবে খেলতে থাকলে খুব একটা ভাল ফলাফল হবে না। এমন অনেক খেলাই হয়েছে। আবাহনীও ওয়ান সাইডেড ম্যাচ জিতেছে, মোহামেডানও জিতেছে। হয় তো আবাহনী ও মোহামেডানে খেলার মধ্যে এটাই সবচেয়ে খারাপ।’ স্কোর ॥ মোহামেডান-আবাহনী ম্যাচ-মিরপুর আবাহনী ইনিংস ১৮৩/১০; ৪৮.৪ ওভার (তামিম ৪, লিটন ৩, অভিষেক ৭, বিসলা ২৩, শান্ত ৪২, সৈকত ২৭, আবুল ২৮, সাকলায়েন ০, তাসকিন ৩৮*, জুবায়ের ০, অমিত ০; সুবাশিষ ৩/৩৪, হাবিবুর ২/৩০, নাঈম জুনিয়র ২/৩০, আরিফুল ১/১১, এনামুল জুনিয়র ১/২৯, নাঈম ১/৩৫)। মোহামেডান ইনিংস ১৮৫/২; ৪৩.৫ ওভার (সৈকত ১৩ (রি. হা), এজাজ ৪২, থারাঙ্গা ৭৭*, মুশফিক ১৭, নাঈম ২৫*; অমিত ১/৩৪, তাসকিন ১/৪২)। ফল ॥ মোহামেডান ৮ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ সুবাশিষ রয় (মোহামেডান)
×