ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গীবাদ প্রশ্নে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণায় বিএনপিতে হতাশা

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ১২ মে ২০১৬

জঙ্গীবাদ প্রশ্নে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণায় বিএনপিতে হতাশা

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ বিদেশী শক্তির মাধ্যমে ক্ষমতাসীন সরকারকে বিভিন্নভাবে চাপে ফেলতে চাইলেও পুরোপরি ব্যর্থ হয়েছে বিএনপি। বৈশ্বিক বিভিন্ন ফোরামে পাকিস্তান বিএনপির পক্ষে ওকালতি করলেও তাতে সাড়া মিলছে না। এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাইয়ের ঢাকা সফর ঘিরে বিএনপি আশা করেছিল, নিরাপত্তা ইস্যু ঘিরে সরকার মার্কিন চাপে পড়বে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে কোন ধরনের চাপ না দিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশকে সঙ্গে নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত একযোগে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ মোকাবেলা করার ঘোষণায় বিএনপির মধ্যে হতাশা বেড়েছে। সূত্র জানায়, বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়ে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি কমনওয়েলথের একটি বৈঠকে আলোচনার প্রস্তাব তুলেছিল পাকিস্তান। কিন্তু লন্ডনে কমনওয়েলথ মিনিস্ট্রিয়াল এ্যাকশন গ্রুপের ওই বৈঠকে সদস্য অন্য দেশগুলোর প্রতিনিধিরা উড়িয়ে দেওয়ায় ইসলামাবাদের ওই প্রস্তাব হালে পানি পায়নি। এর আগেও বিভিন্ন ফোরামে পাকিস্তানকে দিয়ে চাপ প্রয়োগ করে আসছিল সরকারবিরোধী পক্ষ। তবে তারা কোন ফোরামেই সুবিধা করতে পারেনি। বিশ্বের ৫৩টি দেশের জোট কমনওয়েলথের মিনিস্ট্রিয়াল এ্যাকশন গ্রুপ সদস্য দেশগুলোর রাজনৈতিক পরিস্থিতির গুরুতর অবনতি ঘটলে তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। কোন দেশে গণতন্ত্র নির্বাসিত হলে তা পুনরুদ্ধারের পদক্ষেপও আসে এই ফোরাম থেকে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা সারতাজ আজিজ বৈঠকে প্রস্তাবটি তুলেছিলেন। বাংলাদেশে বিএনপিবিহীন ৫ জানুয়ারির নির্বাচন যথাযথ হয়নি বলে বৈঠকে আলোচনায় পাকিস্তানের প্রতিনিধি তুলেছিলেন বলে তিনি জানান। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৩টি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলার তথ্য তুলে ধরে ওই বৈঠকে সারতাজ আজিজ বলেছেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক মত প্রকাশের অধিকার সঙ্কুচিত হয়ে এসেছে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশে বিচার বিভাগের ওপর সরকারের হস্তক্ষেপ চলছে অভিযোগ তুলে তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা এবং কমনওয়েলথের পক্ষ থেকে বিবৃতির প্রস্তাব রাখেন। কিন্তু অন্য দেশগুলো তার প্রতিবাদ জানায়। সে সময় অন্যান্য দেশের প্রতিনিধিরা বলেন, বিবৃতি দেয়ার মতো কোন ক্ষেত্র তৈরি হয়নি। ফলে সরতাজ আজিজের প্রস্তাব নাকচ করে দেয় পাকিস্তান। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক দরবারে ওকালতি করছে পাকিস্তান। খালেদা জিয়া, যিনি একাধিকবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। পাকিস্তান তার হয়ে আন্তর্জাতিক দরবারে ওকালতি করছে। এটা তাৎপর্যপূর্ণ। জামায়াতের মুখোশ আগেই উন্মোচিত হয়েছে, যতই দিন যাচ্ছে বিএনপির মুখোশও উন্মোচিত হচ্ছে। তারা অব্যাহতভাবে বাংলাদেশকে বিব্রত করার জন্য, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে যাচ্ছে। প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম আরও বলেন, কমনওয়েলথ মিনিস্ট্রিয়াল বৈঠকে আমরা উপস্থিত ছিলাম না, অন্যান্য যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের থেকে সত্যতা পেয়েছি। এতে প্রতীয়মান হয়, বাংলাদেশের মানুষের সমর্থন না পেয়ে তারা বিদেশীদর ওপর নির্ভর করা শুরু করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশা দেশাইয়ের ঢাকা সফরের পর দেশটির ঢাকায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকের সঙ্গে দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেছেন। বৈঠকে নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেছেন। বৈঠকের বিষয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেছেন, নিরাপত্তা ইস্যুতে বিভিন্ন তথ্য আদান প্রদান চলছে। জঙ্গী ও সন্ত্রাস প্রতিরোধে বাংলাদেশ, ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একযোগে কাজ করবে বলেও জানান তিনি। সূত্র জানায়, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব ঢাকায় আসার আগেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন। আর বৈঠকের পর তিন দেশের একযোগে কাজ করার বিষয়ে জোর দিয়েছেন। সে কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগের অবস্থান এখন পাল্টেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কেননা ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঘিরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ছিল নেতিবাচক। সে সময় নির্বাচন ঘিরে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দূরত্বও তৈরি হয়েছিল। তবে ধীরে ধীরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেই অবস্থান এখন বদলেছে। ভারতকে সঙ্গে নিয়েই এখন সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ মোকাবেলা করতে চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা ইইএসএইডের কর্মকর্তা জুলহাস মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব তনয় হত্যার প্রেক্ষিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে চাপে রাখা হয়েছিল। বিশেষ করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টেলিফোন করে এই হত্যার দ্রুত বিচারের আহ্বান জানান। তিনি দোষীদের দ্রুত গ্রেফতারেরও অনুরোধ জানান। বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার জন্য মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাইকে ঢাকায় পাঠানোর কথাও জানিয়েছিলেন জন কেরি। সে সময় বিএনপি আশা করেছিল, প্রচ- মার্কিন চাপে পড়বে সরকার। এরপর বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে নিশা দেশাই চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ঢাকা সফর করেন। সে সময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকের সঙ্গে বৈঠক করেন। এছাড়া বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন নিশা দেশাই। বৈঠকে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক হত্যাকা-ের বিষয়ে আলোচনা হয়। বাংলাদেশের জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের বিষয়ে অবহিত হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। নিশা দেশাইয়ের ঢাকা সফরের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আরও স্পষ্ট করেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশকে কোন ধরনের চাপে নয়, বরং সন্ত্রাস ও জঙ্গী প্রতিরোধ নিয়ে আরও সহযোগিতা করতে তারা প্রস্তুত রয়েছে। সন্ত্রাস ও জঙ্গী প্রতিরোধ ইস্যুতে বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একান্ত ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে চায়। এই ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে যে কার্যক্রম রয়েছে, সেসব কার্যক্রম আরও জোরালো ও শক্তিশালী করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের সমসাময়িক ইস্যু হিসেবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, মুক্তমতের চর্চায় বাধা, মার্কিন দূতাবাস কর্মকর্তা-রাবি শিক্ষক ও ব্লগার খুনসহ সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ রয়েছে। তবে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ইস্যুসহ সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে ঢাকা-ওয়াশিংটনের সহযোগিতার বিষয়ে এখন জোর দিচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া জুলহাজসহ সাম্প্রতিক গুপ্তহত্যার ঘটনা তদন্তে সহায়তা দেয়ার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে দেশটি। বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি, এখান থেকে উত্তরণে সহায়তা করতে চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এদিকে ক্ষমতাসীন বর্তমান সরকার উৎখাতে ইসরাইলের সঙ্গে বিএনপির গোপন আঁতাতের বিষয় প্রকাশ হয়ে পড়ায় বিএনপি এখন অস্বস্তিতে রয়েছে। সরকার থেকে এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় আসতে চাইছে বিএনপি। বিএনপির একজন শীর্ষ নেতা দিল্লীতে গিয়ে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের একজন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
×