ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

২০১৪ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান

চলচ্চিত্র শুধু বিনোদন নয়, সমাজ সংস্কারের হাতিয়ার ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৬:০২, ১২ মে ২০১৬

চলচ্চিত্র শুধু বিনোদন নয়, সমাজ সংস্কারের হাতিয়ার ॥ প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চলচ্চিত্র একটি সৃজনশীল ও শক্তিশালী মাধ্যম উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুস্থ ধারার চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য দেশের নির্মাতাদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও সামাজিক সমস্যাগুলো তুলে ধরে নির্মিত চলচ্চিত্রকে অবশ্যই সৃজনশীল ও শোভন হতে হবে। সুস্থ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সমাজে এক গুরুত্বপূর্ণ মেসেজ দেয়া সম্ভব। বাংলা সিনেমার উন্নয়নে নির্মাতাদের ডিজিটাল চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রতি জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চলচ্চিত্রের উন্নয়নের ক্ষেত্রে শুধু সরকারী পদক্ষেপই যথেষ্ট নয়। আমি আশা করি দেশের বিত্তবানরা এ শিল্পের উন্নয়নে এগিয়ে আসবেন। ব্যবসা পরিবর্তনের স্বার্থে অনেক হল মালিক তাদের সিনেমা হল ভেঙ্গেছেন। অথচ এটিকে আরও আধুনিক করলে ব্যবসা ও সুস্থ সামাজিক বিনোদনের সুযোগ তৈরি করা যায়, যা সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশও বটে। দর্শকদের হলে ধরে রাখতে হলে একদিকে যেমন ভাল ছবি নির্মাণ করতে হবে, তেমনি সিনেমা হলের পরিবেশও সুন্দর করা প্রয়োজন। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে এই ক্ষেত্রটার প্রতি আরও যতœবান থাকতে হবে। তিনি বলেন, চলচ্চিত্র শুধুমাত্র বিনোদন নয়, সমাজ সংস্কারের হাতিয়ার। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। বুধবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ২০১৪ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সৃজনশীল ও জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ আপনাদের অনুসরণ করে। সুতরাং সমাজের অন্য মানুষের চেয়ে আপনাদের দায়বদ্ধতা অনেক বেশি। সম্প্রতি বেশ কিছু চলচ্চিত্র দেশে ও বিদেশে সাফল্য অর্জন করায় প্রধানমন্ত্রী এর প্রশংসা করে বলেন, আমাদের অভিনেতা-অভিনেত্রী ও কলাকুশলীদের কর্মদক্ষতা ও পেশাদারিত্ব ধীরে ধীরে উন্নত হচ্ছে। সার্বিকভাবে এটা বলা যায় যে, আমাদের চলচ্চিত্র এগিয়ে যাচ্ছে। অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সভাপতিত্ব করেন এবং তথ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ কে এম রহমতউল্লাহ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তথ্যসচিব মর্তুজা আহমেদ অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন। অনুষ্ঠানে ২৬টি ক্যাটাগরিতে মোট ২৯ জনকে পুরস্কার প্রদান করা হয়। চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের জন্য আজীবন সম্মাননা দেয়া হয় অভিনেতা সৈয়দ হাসান ইমাম ও অভিনেত্রী রানী সরকারকে। মাসুদ পথিক পরিচালিত সরকারী অনুদানের ছবি ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’ সর্বোচ্চ ৬টি বিভাগে জিতে নিয়েছে ২০১৪ সালের সেরা জাতীয় চলচ্চিত্রের পুরস্কার। স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে এবার সেরা পুরস্কার পেয়েছ আশরাফ শিশির পরিচালিত ছবি ‘গাড়িওয়ালা’। মুক্তিযুদ্ধের কাহিনীচিত্র ‘মেঘমল্লার’ চলচ্চিত্রের জন্য জাহিদুর রহিম অঞ্জন সেরা পরিচালকের পুরস্কার পেয়েছেন। ‘তাঁরকাটা’ চলচ্চিত্রে নায়িকা না হয়েও সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন মৌসুমী। সে সিনেমার নায়িকা হিসেবে স্বীকৃতি না পেলেও ‘জোনাকির আলো’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য বিদ্যা সিন্হা মিম ভাগ বসিয়েছেন শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কারে। আর ‘এক কাপ চা’ সিনেমায় প্রধান চরিত্রে অভিনয় করা ফেরদৌস আহমেদ শ্রেষ্ঠ অভিনেতার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। পুরস্কারের দৌড়ে সামান্য পিছিয়ে থাকা সৈকত নাসির পরিচালিত ‘দেশা-দ্য লিডার’ চারটি বিভাগে পুরস্কার পেয়েছে। এ ছবিতে ‘পতাকাটা খামচাতে কখনো আসে যদি’ গানটির জন্য জনপ্রিয় ব্যান্ড শিল্পী জেমস শ্রেষ্ঠ গায়কের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতে নিয়েছেন এবার। আর খলচরিত্রে সেরা অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন তারিক আনাম খান। পুরস্কার প্রদান শেষে স্বনামধন্য শিল্পীদের পরিবেশনায় অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এক নজরে কে কোন বিভাগে সেরা- আজীবন সম্মাননা : সৈয়দ হাসান ইমাম ও রানী সরকার। শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র : নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র : গাড়িওয়ালা শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক- জাহিদুর রহিম অঞ্জন (মেঘমল্লার) শ্রেষ্ঠ অভিনেতা প্রধান চরিত্রে : ফেরদৌস আহমেদ (এক কাপ চা) শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী প্রধান চরিত্রে (যৌথভাবে) : ১. মৌসুমী (তাঁরকাটা) ২. বিদ্যা সিনহা মিম (জোনাকির আলো) শ্রেষ্ঠ অভিনেতা পার্শ্ব-চরিত্রে : ডাঃ এজাজ ইসলাম (তাঁরকাটা) শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী পার্শ্ব-চরিত্রে : চিত্র লেখা গুহ (৭১ এর মা জননী) শ্রেষ্ঠ অভিনেতা খল চরিত্রে : তারিক আনাম খান ( দেশা দ্য লিডার) শ্রেষ্ঠ অভিনেতা কৌতুক চরিত্রে : মিশা সওদাগর (অল্প অল্প প্রেমের গল্প) শ্রেষ্ঠ শিশু শিল্পী : আবির হোসেন অংকন (বৈষম্য) শিশু শিল্পী শাখায় বিশেষ পুরস্কার : মারজান হোসাইন জারা (মেঘমল্লার) শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক : ড. সাইম রানা (নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ) শ্রেষ্ঠ গায়ক : মাহফুজ আনাম জেমস (দেশা দ্য লিডার) শ্রেষ্ঠ গায়িকা : (যৌথভাবে)- ১. রুনা লায়না (প্রিয়া তুমি সুখী হও), ২. মমতাজ (নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ) শ্রেষ্ঠ গীতিকার : মাসুদ পথিক (নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ) শ্রেষ্ঠ সুরকার : বেলাল খান (নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ) শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার : প্রয়াত আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ( মেঘমল্লার) শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার : সৈকত নাসির ( দেশা দ্য লিডার) শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা : জাহিদুর রহিম অঞ্জন (মেঘমল্লার) শ্রেষ্ঠ সম্পাদক : তৌহিদ হোসেন চৌধুরী (দেশা দ্য লিডার) শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশক : মারুফ সামুরাই (তাঁরকাটা) শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক : মোহাম্মদ হোসেন জেমী (বৈষম্য) শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহক : রতন পাল (মেঘমল্লার) শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজ-সজ্জা : কনক চাঁপা চাকমা ( জোনাকির আলো) শ্রেষ্ঠ মেক-আপম্যানম : আবদুর রহমান (নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ)
×