ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ক্রিকেটের স্টাম্পের আঘাতে খুন হলো

এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেলেও জানা হলো না বাবুলের

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১২ মে ২০১৬

এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেলেও জানা হলো না বাবুলের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নিজের এসএসসি পাসের ফল জানা হলো না বাবুল শিকদারের। ফল জানার আগেই প্রতিপক্ষের ক্রিকেটের স্টাম্পের আঘাতে মৃত্যুবরণ করতে হলো তাকে। এবার এসএসসি পরীক্ষায় বাবুল শিকদার জিপিএ-৫ পেয়েছে। ভাল ফল করার পর বাবুলের মর্মান্তিক মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না তার পরিবার। পরিবারে বইছে শোকের মাতম। বাবুলের পিতামাতা আর একমাত্র ভাই বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন। শত শত মানুষ ভিড় করেছেন বাবুলদের বাসায়। পুলিশ তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তারা ঘটনার সময় বাবুলের সঙ্গে ক্রিকেট খেলছিল। বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ঘটনায় কোন মামলা হয়নি। এ ব্যাপারে নিহতের পরিবারের তরফ থেকে মামলা দায়েরের কথা রয়েছে। পরিবার মামলা না করলে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করবে। বুধবার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর মিরপুর মডেল থানাধীন কল্যাণপুরের জনতা হাউজিংয়ের ধানক্ষেত মোড়ে ঘটনাটি ঘটে। নিহত বাবুল শিকদারের (১৮) পিতার নাম মোস্তফা শিকদার। তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এ্যাম্বুলেন্সে পুত্রের লাশের পাশে বসে কাঁদতে কাঁদতে জনকণ্ঠকে বলেন, বাইশ বছর ধরে ঢাকায় বসবাস করছি। বর্তমানে কল্যাণপুরের বসতী হাউজিংয়ের ১০/সি নম্বর ভবনের নিচতলায় পরিবার নিয়ে বসবাস করি। আমি যানবাহন মেরামতের অটোমোবাইলসের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। মিরপুর-১ নম্বর প্রশিকা ভবনের পাশেই আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আমাদের গ্রামের বাড়ি ফরিদপুর জেলার সদরপুর থানাধীন আটরশি এলাকার দক্ষিণ আলমনগর গ্রামে। ছেলের লাশ গ্রামের বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানেই দাফন করব। কারও সঙ্গে কোন ঝামেলা নেই। আমার সুখের সংসার। আমার স্ত্রীর নাম সাবেরা বেগম। দুই ছেলে। বড় ছেলে বাবুল। সে মিরপুর ১০-এ অবস্থিত আদর্শ স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে। এ কথা বলার পর তার আর কান্না থামছিল না। বলছিলেন, আমার ছেলেকে মানুষের মতো মানুষ করার জন্য জীবনের সমস্ত আয় উপার্জন ব্যয় করছিলাম। অথচ সব শেষ হয়ে গেল। আমার ছেলে পরীক্ষার ফল দেখে যেতে পারল না। কি ভাগ্য আমার! খানিক পর নিজেকে সামলে নিয়ে তিনি বলেন, ছোট ছেলে বাদল মিরপুর বেঙ্গল মিডিয়াম স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্র। বাবুল পরীক্ষার পর সিলেটে চিল্লায় গিয়েছিল। দশ দিন আগে বাসায় আসে। বাসায়ই থাকত। সকালে এক বন্ধু বাবুলকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর সমবয়সীরা মিলে ক্রিকেট খেলা শুরু করে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আমি মোবাইল ফোনে আমার আদরের ছেলের গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ার সংবাদ পেয়ে ছুটে যাই। দ্রুত হাসপাতালে গিয়ে দেখি সব শেষ। আমার স্বপ্ন নিথর পাথরের মতো হাসপাতালে পড়ে আছে। স্থানীয়দের মাধ্যমে শুনতে পারি, ক্রিকেট খেলা নিয়ে মারামারির এক পর্যায়ে একজন ক্রিকেটের কাঠের ব্যাট দিয়ে মাথায় আঘাত করে। আর তাতেই আমার বুকের ধনের মৃত্যু হয়। এরপর তিনি আর কথা বলতে পারছিলেন না। কান্নাকাটির এক পর্যায়ে মোবাইল ফোনের সংযোগ কেটে যায়। এদিকে বাবুলের এমন মৃত্যুতে ঘটনার পর থেকেই শত শত মানুষ ভিড় করেছেন তাদের বাড়িতে। সবার চোখেই জল। বাবুলকে একনজর দেখার জন্য লাশ গ্রামের নেয়ার আগ পর্যন্ত মানুষের ভিড় ছিল। বাবুলের মৃত্যুর মাত্র দেড় ঘণ্টা পরই এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ পায়। বাবুল পূর্ণাঙ্গ জিপিএ-৫ পেয়েছে। এছাড়া গ্রামের বাড়িতেও শত শত মানুষ বাবুলকে দেখার জন্য ভিড় করেছেন বলে ফরিদপুর থেকে আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতা জানান। মিরপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ শাহজাহান আলী জনকণ্ঠকে বলেন, ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে একজন ক্রিকেটের ব্যাট দিয়ে আঘাত করলে বাবুলের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের থানা হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তারা ঘটনার সময় বাবুলের সঙ্গে ক্রিকেট খেলছিল। তাদের বয়স ১৮ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। মিরপুর মডেল থানার ওসি ভূঁইয়া মাহবুব হাসান জনকণ্ঠকে বলেন, ক্রিকেট খেলা নিয়ে একদল কিশোরের মধ্যে মারামারি হয়। মারামারির সময় বিধান নামের এক কিশোর ব্যাট দিয়ে বাবুলের মাথায় আঘাত করে। আহত বাবুলকে শেরেবাংলানগর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি করা হলে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে ওসি আরও বলেন, আউট হওয়া নিয়ে বিবাদের শুরু হয়। এরপর বাবুল পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশ উপলক্ষে খেলা বন্ধ করতে বলে। এ নিয়ে বিতর্কের এক পর্যায়ে বিধান ব্যাট দিয়ে বাবুলের মাথায় আঘাত করে। ঘটনার পর বিধান পালিয়ে যায়। তার সন্ধান চলছে। এ ঘটনায় তিন কিশোরকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। লাশ দাফনের পর নিহতের পরিবারের তরফ থেকে এ ব্যাপারে মামলা দায়ের করার কথা। পরিবার মামলা দায়ের না করলে নিয়মানুযায়ী পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করবে।
×