ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

তীব্র দাবদাহে চিংড়িতে মড়ক

প্রকাশিত: ০৪:০৫, ১২ মে ২০১৬

তীব্র দাবদাহে চিংড়িতে মড়ক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশের অর্থনীতিতে অবদানের জন্য সাদা সোনা বলা হয় চিংড়িকে। এবার তীব্র দাবদাহে নিম্নমানের রেণু ও ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মরে যাচ্ছে ঘেরের সেই ‘সাদা সোনা’। তাপে ছড়িয়ে পড়ছে মাটির তলদেশের এ্যামোনিয়াম সালফেট। সাতক্ষীরার প্রায় প্রতিটি চিংড়ি ঘেরে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে চিংড়ি ঘেরে মড়ক দেখা দিচ্ছে। মাথায় হাত উঠেছে চিংড়ি চাষীদের। সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা জেলায় ছোট বড় মিলিয়ে ৬১ হাজার ঘের রয়েছে। এ বছর ৬৬ হাজার ৮৬২ হেক্টর জমিতে বাগদা চিংড়ি চাষ হচ্ছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২২ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন। গত বছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৯ হাজার ২৭৩ মেট্রিক টন। মিষ্টি পানিতে বাগদা চিংড়ি উৎপাদিত হয়েছিল প্রায় ২০ হাজার মেট্রিক টন। আট থেকে ১৪ পিপিটি লবণাক্ত পানি বাগদা চিংড়ি চাষের জন্য উপযোগী। এক টানা সূর্যতাপের কারণে পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ অনেক বেশি। গত বছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলেও এবার লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এখানে এক বিঘা থেকে তিন হাজার বিঘা জমিতে সনাতন পদ্ধতির মাছের ঘের আছে। অধিকাংশ ঘেরে পানির গভীরতা দেড় থেকে দুই ফুটের বেশি নয়। সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শেখ আব্দুল অদুদ জানান, সারাদেশের উৎপাদিত বাগদা ও গলদার মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ উৎপাদিত হয় সাতক্ষীরা জেলায়। এ জেলায় শুধু বাগদা ও গলদা, রুই ও তেলাপিয়া ছাড়াও অন্যান্য মাছ উৎপাদিত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাগদা চিংড়ির বিশেষ সমস্যা হয়ে থাকে। বাগদা চিংড়ি উৎপাদনে ঘেরে পানির গভীরতা তিন ফুট বা এক মিটার রাখার জন্য চাষীদের পরামর্শ দিলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা তা মানছেন না। তাছাড়া তীব্র দাবদাহে কম গভীরতা আছে এমন ঘেরের মাটির তলদেশ থেকে এ্যামোনিয়াম সালফেট পানিতে ছড়িয়ে পড়ে মাছ মরে যেতে পারে। ছত্রাকের কারণে চিংড়ি মারা গেলেও ভাইরাসও চিংড়িতে মড়ক লাগার অন্যতম কারণ। সাতক্ষীরার শ্যামনগরের ভেটখালি গ্রামের চিংড়ি চাষী আফজাল হোসেন ও আশাশুনির কাপষন্ডা এলাকার চিংড়ি চাষী বোরহানউদ্দিন বুলু জানান, জেলার আইলা দুর্গত শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার খোলপেটুয়া, রায়মঙ্গল, কপোতাক্ষ ও কালিন্দি নদীর উপকূলবর্তী এলাকায় সাদা সোনা খ্যাত সবচেয়ে বেশি চিংড়ি চাষ হয়ে থাকে। এছাড়াও কালীগঞ্জ, দেবহাটা, সাতক্ষীরা সদর, তালা ও কলারোয়া উপজেলার কপোতাক্ষ, কাঁকশিয়ালী, বেতনা নদীর দুই পাশে চিংড়ি চাষ একেবারে কম নয়। এসব এলাকায় চিংড়ি চাষের জন্য এক বিঘা জমি লিজ নিতে হয় প্রতি বছরের জন্য ১০ থেকে ১৪ হাজার টাকায়। মৌসুম শুরুতইে চট্টগ্রাম, কলাতলী ও কক্সবাজারের এলাকার বিভিন্ন হ্যাচারির সরবরাহকৃত রেণু ঘেরে ছাড়া হয়। তবে অনেকেই দ্বিতীয় গ্রেডের জমজম, বলাকা ছাড়াও স্থানীয়ভাবে শ্যামনগরের কলবাড়ি, হরিনগর, কালীগঞ্জের পিরোজপুর, সাতক্ষীরা সদরের চিংড়ি-বাংলা হ্যাচারি ও আশাশুনি উপজেলার মানিকখালির বিসমিল্লাহ হ্যাচারির রেণু পোনা ব্যবহার করে থাকে। ঘেরে রেণুপোনা ছাড়ার আগে তা যথাযথভাবে তার গুণগতমান পরীক্ষা করা হয় না। লবণাক্ত পানিতে বাগদা চিংড়ির পাশাপাশি মিষ্টি পানিতে গলদা চিংড়ির চাষও হয়ে থাকে। এবার এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে প্রচ- দাবদাহে নদীর পানির লবণাক্ততা বাড়তে শুরু করে। একই সঙ্গে পানি গরম হয়ে চিংড়িতে ভাইরাসের আক্রমণ দেখা দিয়েছে।
×